তাসকিন-মোস্তাফিজের তোপে ১১০ রানে অলআউট পাকিস্তান

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মাত্র ৪৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেটে ফেলে দিয়ে চালকের আসন বসে পড়ল বাংলাদেশ। একপ্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার ফখর জামানের সঙ্গে খুশদিল শাহ ও আব্বাস আফ্রিদি বিপর্যয় সামলানোর চেষ্টা করেও পারলেন না। তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফজুর রহমানসহ বোলারদের নৈপুণ্যে প্রতিপক্ষকে অল্পতে গুটিয়ে দিল টাইগাররা।

রোববার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে পাকিস্তানকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান লিটন দাস। ১৯.৩ ওভারে সফরকারীরা অলআউট হয়ে গেছে মাত্র ১১০ রানে। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের ২৩ বারের দেখায় এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে অলআউট হলো দলটি।

বাংলাদেশের হয়ে ২২ রানে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন তাসকিন। ভীষণ আঁটসাঁট বোলিংয়ে মোস্তাফিজ ২ উইকেট পান স্রেফ ৬ রানে। টি-টোয়েন্টিতে এটি বাংলাদেশের কোনো বোলারের ৪ ওভারের কোটা পূর্ণ করে সবচেয়ে কম রান দেওয়ার রেকর্ড। একটি করে শিকার ধরেন শেখ মেহেদী হাসান ও তানজিম হাসান সাকিব। বাকি তিনটি রানআউট।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পাকিস্তানের মাত্র তিন ব্যাটার পৌঁছান দুই অঙ্কের ঘরে। দুবার জীবন পাওয়া ফখর করেন সর্বোচ্চ ৪৪ রান। ৩৪ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে ছয়টি চার ও একটি ছক্কা। সাতে নামা খুশদিল একটি করে চার ও ছয়ে ২৩ বলে করেন ১৭ রান। আটে নামা আব্বাস তিনটি ছক্কায় খেলেন ২৪ বলে ২২ রানের ইনিংস।

অফ স্পিনার শেখ মেহেদী বাংলাদেশের বোলিংয়ের সূচনা করেন। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই সাফল্য পেতে পারতেন তিনি। দুই বল আগে ইনিংসের প্রথম চার মারা ফখর সুইপ করেছিলেন। টপ এজ হয়ে বল চলে যায় শর্ট ফাইন লেগে। অনেক সময় পাওয়া সত্ত্বেও সহজ ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি তাসকিন। ফখর বেঁচে যান ৪ রানে।

পরের ওভারে আক্রমণে গিয়েই অবশ্য ক্ষতে প্রলেপ দেন তাসকিন। বাংলাদেশকে উল্লাসের মুহূর্ত এনে দেন ডানহাতি পেসার। ফ্লিক করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড লেগে মোস্তাফিজের তালুবন্দি হন আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুব। তিনি করেন ৬ বলে ৪ রান। পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ১৮ রানে।

এই ব্রেক থ্রুকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে স্বাগতিকরা। পাওয়ার প্লেতে আরও ৩ উইকেট তুলে নেয় তারা। ৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৪১ রান।

বোলিংয়ে ফিরে খরুচে ওভার করলেও উইকেট শিকার করেন শেখ মেহেদী। প্রথম পাঁচ বলে তিনটি চার হজমের পর ঘুরে দাঁড়ান তিনি। শর্ট ডেলিভারিতে স্লগ করে ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ মিডউইকেটে শামীম হোসেনকে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ হারিস। ৩ বল খেলে তার রান ৪।

ক্রিজে গিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন না সালমান আলী আগা। পঞ্চম ওভারে বল হাতে পেয়েই তাকে বিদায় করেন তানজিম। স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটনের গ্লাভসে জমা পড়েন পাকিস্তানের অধিনায়ক। ৯ বলে তার রান ৩। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজ যোগ দেন উইকেটের উৎসবে। বড় শট খেলার চেষ্টায় থার্ড ম্যানে রিশাদকে ক্যাচ দেন হাসান নওয়াজ। ৪ বল খেলে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ তিনি।

অষ্টম ওভারে আক্রমণে ফিরে শেখ মেহেদী পাকিস্তানের বিপর্যয় আরও বাড়ান। তার থ্রো ধরে স্ট্রাইকিং প্রান্তে স্টাম্প ভেঙে দেন লিটন। মোহাম্মদ নওয়াজ ৫ বলে ৩ রানে হয়ে যান রানআউট। রান না আসায় চাপ ক্রমেই বাড়ছিল পাকিস্তানের ওপর। শেখ মেহেদীর বল লেগ সাইডে ঠেলেই সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন ফখর। কিন্তু নওয়াজ ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি।

পঞ্চম থেকে অষ্টম— এই চার ওভারে স্রেফ ৮ রান খরচ করে বাংলাদেশ। ইনিংসের দশম ও নিজের শেষ ওভারে ফখরকে আবার ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া হয় শেখ মেহেদীর। বুলেট গতির ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি তিনি। ৩০ রানে জীবন পান ফখর। পরে শেখ মেহেদীকে মারেন ছক্কা ও চার।

ষষ্ঠ উইকেটে ফিরে আসার চেষ্টা ছিল পাকিস্তানের। তবে দ্বাদশ ওভারে ফখর হাস্যকর কায়দায় আউট হলে থামে ২৩ বলে ২৪ রানের জুটি। খুশদিল শাহ দ্বিতীয় রানের জন্য ডাক দিলেও পরে সিদ্ধান্ত পাল্টান। ততক্ষণে সাড়া দিয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন ফখর। এরপর চেষ্টা করেও আর ফিরতে পারেননি। তাসকিনের থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে ফেলেন লিটন।

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৯ বলে ৩৩ রানের জুটি পাকিস্তান পায় অষ্টম উইকেটে। রিশাদের করা ১৫তম ওভারে একটি করে ছক্কা হাঁকান খুশদিল ও আব্বাস। পরের ওভারে তানজিমকে দুটি ছক্কা মারেন আব্বাস। দলটির সংগ্রহ পেরিয়ে যায় শতরান।

১৭তম ওভারে আক্রমণে ফিরে মোস্তাফিজ ভাঙেন মাথাব্যথার কারণ হওয়া জুটি। উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে রিশাদকে ক্যাচ দেন তিনি। ওই ওভারে মোস্তাফিজ দেন ২ রান। এরপর তার শেষ ও ইনিংসের ১৯তম ওভারে আসে কেবল ১ রান।

পাকিস্তান পুরো ওভার খেলতে পারেনি। তাসকিনের করা শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ৩ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় তারা। শর্ট বলে থার্ড ম্যানে শেখ মেহেদীর তালুবন্দি হন ফাহিম আশরাফ। ৫ রান করতে তার লাগে ১০ বল। এরপর রানআউট হয়ে অভিষেকে গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান সালমান মির্জা। তারপর টপ এজ হয়ে লিটনের গ্লাভসে জমা পড়েন আব্বাস।

Comments

The Daily Star  | English

Earlier bribe was Tk 1 lakh, now it’s Tk 5 lakh: Fakhrul

BNP leader Fakhrul highlights escalating bribery, blames lack of good governance and police reform

1h ago