জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পুরনো পথে ফিরলেন টাইগাররা: শঙ্কার আভাস?

'জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষেও কেন আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে?'— এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, যদিও চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।

পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ তিন দিনেই শেষ করে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার চেয়ে তৃপ্তির আর কী হতে পারে?

তার ওপর, যদি সেই জয় যদি আসে প্রথম ম্যাচে চমকে যাওয়ার মতো হারের পর, তাহলে তো সেই স্বাদ আরও মধুর হয়ে ওঠে।

আর এই জয়ে ঘরের মাঠে ছয় ম্যাচের টানা হারের বৃত্ত ভাঙে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন উইকেটের পরাজয় ছিল সবশেষ ধাক্কা।

ফলে, চট্টগ্রামে পাওয়া দাপুটে জয় টাইগারদের শিবিরে স্বস্তি বয়ে আনে, সম্মান রক্ষা হয়, এবং সিরিজ ১-১ ব্যবধানে সমতায় ফিরে আসে।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই জয় কি আসলেই বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়? নাকি এটি আবারও এক পুরনো ছকে ফিরে যাওয়ার উদাহরণ? বিশেষ করে যখন দেখা যায়, জয়টা এসেছে সেই পুরনো স্পিন নির্ভর ছকেই।

'সত্যি বলতে কী, আমি আশা করি এই পরিকল্পনা শুধু একটি মাত্র টেস্টের জন্যই ছিল। কারণ এই জয়ের পরও আমার ভয় হচ্ছে, আমরা হয়তো পিছিয়ে যাচ্ছি,' দারুণ জয়ের পরও এমন স্বীকারোক্তি দেন বাশার।

তবে ম্যাচ শেষে তৃপ্ত ছিলেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, 'চমৎকার পারফরম্যান্স। পুরো দল দারুণ খেলেছে। প্রথম টেস্টে আমরা ভালো খেলিনি, কিন্তু আমরা জানতাম এখানে ভালো খেলতে পারি, কারণ আগে অনেকবার খেলেছি।'

প্রকৃতপক্ষে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে শান্তর দল চট্টগ্রামে তাদের পরিকল্পনা নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করেছে - যেমনটা তারা একই রকম পিচে আগেও অনেকবার করেছে।

প্রত্যাশিতভাবেই স্পিনই ছিল ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের মূল হাতিয়ার। তিন দিনের মধ্যেই জিম্বাবুয়েকে দুইবার অলআউট করেছে বাংলাদেশ। পেসারদের মধ্যে কেবল অভিষিক্ত তানজিম সাকিবই প্রথম ইনিংসে একটি উইকেট পান। বাকি ১৭টি উইকেটই ভাগ করে নেন তিন স্পিনার—তাইজুল ইসলাম (৯ উইকেট, একটি পাঁচ উইকেট সহ), মেহেদী হাসান মিরাজ (৫) ও নাঈম হাসান (৩)। বাকি দুটি উইকেট এসেছে রান-আউটের মাধ্যমে।

কিন্তু এখানেই ওঠে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: সিরিজ সমতায় আনার জন্য কি নিচু র‍্যাঙ্কের দলের বিপক্ষে আবারও সেই পুরনো কৌশলে ফিরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ ছিল?

'আমি অস্বীকার করছি না, টেস্ট জয় জরুরি। কিন্তু যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলি, তাহলে বিষয়টি শঙ্কার। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে পুরনো কৌশল ব্যবহার করলেও মানা যেত। কিন্তু একটি হারের পরই এমন উইকেটে ফিরে যাওয়া—ভাবনাটা কি আতঙ্ক থেকে? নিশ্চিত না, তবে দুঃখজনক,' বলেন বাশার।

'যদি নিচু র‍্যাঙ্কের দলের বিপক্ষেও আমরা আমাদের পরিকল্পনায় অটল থাকতে না পারি, তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির আশা করবো কীভাবে? আমি স্পিন-সহায়ক কন্ডিশনের বিপক্ষে না, কিন্তু জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে কেন? একটি হারের পরই আমাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়লো কেন?'

'যদি আমরা সত্যিই উন্নত ব্যাটার ও পেসার গড়তে চাই, তাহলে স্পোর্টিং উইকেটের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আমাদের পেসাররা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে, কিন্তু একটি খারাপ ম্যাচের পরই আমরা তাদের পাশে থাকলাম না,' আক্ষেপ ঝড়ে বাশারের কণ্ঠে।

আফগানদের বিপক্ষে পেসারদের দাপটের কথা মনেও করিয়ে দেন সাবেক এই অধিনায়ক, 'মানুষ কি ভুলে গেছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর কীভাবে পেস আক্রমণে কাঁপিয়েছিল?'।

গত বছরের জুনে আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ৫৪৬ রানের বিশাল জয়ে বাংলাদেশের পেস ত্রয়ী—ইবাদত হোসেন, শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ মিলে আফগানিস্তানের ১৯টি উইকেটের ১৪টিই তুলে নিয়েছিলেন।

এই পার্থক্যই, বাশারের মতে, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা না থাকার প্রতিচ্ছবি। বিদেশের মাঠে কিছু স্মরণীয় জয়—যেমন ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট, কিংবা পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাওয়া জয়—সবই সময়মতো আসে, কিন্তু এর ভিত্তিতে টেকসই অগ্রগতি গড়ে ওঠেনি।

তাই, যদিও এই জয় আপাতত সমালোচনার ঝড় থামিয়েছে, তবে পুরনো অভ্যাসে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও বড় প্রশ্নের মুখোমুখি করতে পারে বাংলাদেশকে।

Comments

The Daily Star  | English

World press freedom day: 266 journalists face criminal cases so far

Fears for physical safety and instances of judicial harassment are still profoundly visible -- only the actors have changed.

10h ago