বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাংলাদেশ

দেশের চেয়ে সাফল্য বেশি বিদেশে

Bangladesh Cricket Team

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দুই আসর মিলিয়েই বাংলাদেশের জয় ছিল মাত্র একটি। তৃতীয় আসরে টাইগারদের চার জয়ে যত না চমক, তার চেয়ে বেশি এর মধ্যে তিনটি বিদেশের মাটিতে এসেছে বলে। ২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ যখন শুরু করেছিল বাংলাদেশ, তখন বাইরের মাঠে জয় নিয়ে কোনো আশার বাণীই তো শোনায়নি। অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন কেবল লড়াই ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা। জয়ের ভাবনা ছিল ঘরের মাঠের ম্যাচগুলো ঘিরে।

নিউজিল্যান্ড সিরিজে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়া শান্ত পরে স্থায়ীভাবে অধিনায়কত্ব পান। এই চক্রের সবশেষ সিরিজ খেলতে যখন ক্যারিবিয়ানে যান টাইগাররা- আরেক ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে খেলে বাংলাদেশ, কোচের পদে হাথুরুসিংহের জায়গায় এসে যান ফিল সিমন্স। কোচ, অধিনায়কের পরিচয়ে যারাই থাকুন না কেন- দেশের মাটিতে জেতাটাই প্রধান লক্ষ্য হবে যেকোনো দলের।

বিদেশে পাওয়া তিন জয়ের কারণে বাংলাদেশকে এখন প্রথমবারের মতো সবশেষ অবস্থানে থেকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করতে হবে না। সেজন্য পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে ক্যারিবিয়ানরা এক ম্যাচ না জিতলেই চলবে। যদিও এতে এদেশের ক্রিকেটাকাশে দেশের মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে যে কালো মেঘ, তা এখনই সরে যাচ্ছে না। নিজের ডেরায় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দলগুলোর বিপক্ষে খেলা সবশেষ ১৪ টেস্টে যে হার ১২টিতে!

২০২৩-২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাংলাদেশকে বলা যায়- বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট। ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২৮ এবং ১৯২ রানের বিশাল হার হজম করতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা এসে হারিয়ে গেছে ইনিংস ও ২৭৩ রানে। আরেক টেস্টে প্রোটিয়ারা জিতেছে ৭ উইকেটে। সবচেয়ে ছোট হারটাও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটের।

ঘরের মাঠের মলিন চিত্র যে বাংলাদেশ মুছতে পারেনি, তার বড় প্রভাবক ক্যাচ মিস। দেশের মাটিতে যে পাঁচটি টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ, তাতে ক্যাচ মিস হয়েছে ১৭টি। কোনো কোনো ক্যাচের কড়া মাশুল গুণতে হয়েছে তো বটেই, কিছু ক্যাচ ফসকে যাওয়া পরবর্তীতে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে সেই কথাটাই- ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালের মিরপুর টেস্টে ফিরে যান। ১৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা নিউজিল্যান্ডের ৬ উইকেট বাংলাদেশ নিয়ে ফেলে ৬৯ রানেই। এরপর যে গ্লেন ফিলিপস ৪০ রান করে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন, তাকে বাংলাদেশ জীবন দিয়েছিল শূন্য রানে।

চলতি বছর চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার টনি ডি জর্জি ১৭৭ রানের ইনিংস খেলে হন ম্যাচসেরা। সেসময় উইকেটের পেছন থেকে মাহিদুল অঙ্কন আক্ষেপের আগুনে পুড়তে থাকেন ৬ রানে তাকে জীবন দেওয়ার কারণে।

এবছর বাংলাদেশে এসে দুই টেস্টের সিরিজে টাইগারদের চেয়ে ৫৩২ রান বেশি করেছিল শ্রীলঙ্কা। এজন্য স্বাগতিকদের পিচ্ছিল হাতকে ধন্যবাদ দিতে নিশ্চয়ই ভুলে যাবেন না লঙ্কানরা। মোট ১২টি ক্যাচ যে নাজমুল হাসান শান্তর দলের হাতে আটকায়নি। সিলেট টেস্টে ১০২ রান করা কামিন্দু মেন্ডিসকে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরাতে পারতো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৪ রান করার পথেও এই বাঁহাতিকে তারা জীবন দেয় ১৩৩ রানে।

চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দুই ওপেনার নিশান মাধুশকা ও দিমুথ করুনারত্নে করেন যথাক্রমে ৫৭ ও ৮৬ রান। মাধুশকার ৬ রানে জীবন পাওয়ার পর করুনারত্নেরও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় ২২ রানে থাকা অবস্থায়। ৯২ রানের ইনিংস খেলা কামিন্দুকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সুযোগ দেয় ৬০ রানে থাকতে।

যে হারে ক্যাচ মিস হয়েছে, ব্যাট-বলের আগে ফিল্ডিং নিয়েই ভাবতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে স্লিপ ক্যাচিং, যেখানে মোট ড্রপ ক্যাচের প্রায় অর্ধেক (৮টি) হয়েছে। স্লিপ, শর্ট লেগ ও উইকেটকিপারের হাত গলে বল বেরিয়ে গেছে ১৩ বার।

তবে বাংলাদেশের মাটিতে যখন বিদেশিরা এসে টাইগারদের চেয়ে ভালো ব্যাটিং করে যান, তখন ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা না করা ছাড়া কি উপায় আছে? টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় কিস্তিতে ঘরের মাঠে বাংলাদেশিদের গড় মাত্র ১৯.৭৮। বিদেশিরা সেখানে রান করেছেন প্রায় ৩৩ গড়ে। হোম কন্ডিশনে এদেশের বোলাররাও তো প্রতি উইকেট নিতে খরচ করেছেন প্রায় ৩৫ রান। বোলিং বিভাগ অবশ্য তাদের দায়ের ভাগীদার বানাতে পারেন ফিল্ডারদের।

২০২১ সালে একের পর এক ক্যাচ মিস করে নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছিল বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদ তখন বলেছিলেন, তাসমান পাড়ের দেশটিতে আকাশ অনেক পরিষ্কার থাকায় ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। বাংলাদেশের আকাশের নিচে ক্যাচিংয়ে দৈন্যদশা নিয়ে এবার কী বলবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা?

Comments

The Daily Star  | English
action against mob violence in Bangladesh

Mobs will be handled with an iron hand from now on: Mahfuj

Says 'From now on, we will firmly confront so-called movements and mob demonstrations'

1h ago