টি-টোয়েন্টিতে শান্তকে নিয়েও আছে উদ্বেগ
ছন্দ পেতে সংগ্রাম করা লিটন দাসকে নিয়ে আলোচনার ভিড়ে আড়ালেই থেকে যাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। টি-টোয়েন্টিতে তার যেমন পারফরম্যান্স এবং খেলার ধরন তাতে বিশ্বকাপের আগে যথেষ্ট উদ্বেগ থাকার কথা।
টি-টোয়েন্টিতে বিস্ফোরক ব্যাটারদের মধ্যে কাতারে শান্তকে এমনিতে ফেলা যায় না। একটা দলের সবাইকে বিস্ফোরক ব্যাটার হওয়ার প্রয়োজনও নেই। প্রান্ত ধরে অন্তত এক-দুইজন অ্যাংকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাংলাদেশ দলে সেই ভূমিকা হয়ত শান্তর। তবে আধুনিক ক্রিকেটে সেই ভূমিকা পালন করতে গিয়েও খুব বেশি মন্থর হওয়ার সুযোগ নেই। রানের চাকা স্থবির করে চাপ বাড়ালে সেটা অনেক সময়ই সামলানো কঠিন হয়ে যায়। পুরো ব্যাটিং-লাইনআপেও যার প্রভাব পড়তে পারে। শান্ত এই ভূমিকায় মন্থর তো বটেই, সম্প্রতি ভীষণ অধারাবাহিকও।
৩৩ টি-টোয়েন্টি খেলা বাংলাদেশ অধিনায়ক ২৬.৪০ গড়ে করেছেন ৭১৩ রান, তবে তার স্ট্রাইকরেট স্রেফ ১১১.০৫। আসন্ন বিশ্বকাপে ২০ দলের অধিনায়কদের মধ্যে শান্তর স্ট্রাইকরেট দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। তারচেয়ে কম উগান্ডার অধিনায়ক ব্রায়ান মাসাবা (১০৮ স্ট্রাইকরেট ) মূলত বোলিং অলরাউন্ডার।
সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক ছন্দও তাকে প্রশ্ন তৈরি করেছে। গত ১২ ইনিংসে শান্তর ব্যাট থেকে এসেছে কেবল একটা ফিফটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিলেটে ৩৮ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করেছিলেন তিনি। ওই ইনিংস ছাড়া গত এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে আগে-পরে তার বলার মতন রান নেই। এই সময়ে স্রেফ ১৮.৫০ গড় আর ১০৬.৩২ স্ট্রাইকরেটে মোটে ১৮৫ রান করেছেন বাঁহাতি ব্যাটার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেও হাসেনি শান্তর ব্যাট। প্রথম ম্যাচে রান তাড়ায় চাপ বাড়িয়ে ২৪ বলে ২১ করে তিনি আউট হন। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই পরিস্থিতিতে নেমে ১৫ বলে করেন ১৬ রান।
সোমবার ঐচ্ছিক অনুশীলনের দিন প্রথম দুই ম্যাচের একাদশের বাইরে থাকা চার ক্রিকেটার ও সৌম্য সরকারকে নিয়ে মাঠে আসেন সহকারী কোচ নিক পোথাস। তার সঙ্গে ছিলেন বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস, ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প, স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ।
অনুশীলন শুরুর আগে গণমাধ্যমের সামনে আসেন পোথাস। শান্তর টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্নে উঠলে চিন্তার কোন কারণই খুঁজে পাচ্ছেন না এই কোচ। টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কের রান খরার প্রশ্নে অবশ্য তিনি টেনে আনেন নেতৃত্বের প্রসঙ্গ, 'একেবারেই না। সে দুর্দান্ত খেলছে। সবচেয়ে মুগ্ধ করার বিষয় হচ্ছে যেভাবে সে পুরো দলটার নেতৃত্ব দিচ্ছে। সে তরুণ অধিনায়ক, আমার মনে হয় সে খুবই সাহসী এই দল চালাতে। আপনি আগামীতে ফল দেখতে পারবেন।'
টি-টোয়েন্টিতে বড় দলগুলো তিন নম্বরে পাঠায় এমন একজন ব্যাটার যিনি প্রয়োজনে ধরে খেলা ও মেরে খেলার সমন্বয় করতে জানেন। ভারতে যেমন বিরাট কোহলি, পাকিস্তানে যেমন বাবর আজম। বাংলাদেশ দলে একই ভূমিকা শান্তর। তবে বাকি দুনিয়ার অ্যাংকর ভূমিকা সামলানো ব্যাটারদের স্ট্রাইকরেটও ১৩০ এর উপরে বা তার কাছাকাছি থাকে। শান্ত সেখানে ১২০ স্ট্রাইকরেটের কাছেও যেতে পারছেন না। ধারাবাহিকতার প্রশ্ন তো আছেই।
পোথাস অবশ্য মনে করছেন শান্ত রান করতে থাকলে স্ট্রাইকরেট মুখ্য বিষয় আর থাকবে না, 'হ্যাঁ তার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু স্ট্রাইকরেটের কথা অবান্তর কারণ যদি সে উঁচুতে ছুটতে থাকে স্ট্রাইকরেটও সেদিকে যাবে। সে ছন্দে থাকলে স্ট্রাইকরেটও তেমন উঁচুই হবে।'
চলতি সিরিজে আছে আরও তিন ম্যাচ। বাংলাদেশ অধিনায়কের সামনে সুযোগ নিজেকে মেলে ধরার। বিশ্বকাপের আগে গা ঝাড়া দিয়ে কড়া একটা বার্তা দিতে পারেন তিনি। অধিনায়কের মাঠের নেতৃত্ব যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পারফরম্যান্সও তেমনই। বিশ্বকাপের আগে জ্বলে উঠে নিজের ও দলের আত্মবিশ্বাস অধিনায়ক কতটা চাঙ্গা করতে পারেন দেখার বিষয়।
Comments