হতাশ-বিরক্ত নাফিসা জানালেন, কুমিল্লা বিপিএলে আর নাও থাকতে পারে
বিপিএলে ছয়বার অংশ নিয়ে চারবার শিরোপা জিতে সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে পেশাদারিত্বের ঘাটতি থাকলেও ভিক্টোরিয়ান্সকে এসব ব্যাপারে বরাবরই দেখা গেছে গোছানো। প্রতি আসরেই বড় বড় তারকার সমাবেশ দেখা যায় দলটিতে। ভালো দল করে সফল হলেও চরম হতাশা ঘিরে ধরেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের স্বত্ত্বাধিকারি নাফিসা কামালকে। বিসিবির কোন বাণ্যিজিক মডেল না থাকা, রাজস্বের আয় ভাগ না করায় আগামী বছর থেকে আর বিপিএলে না থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন তিনি। কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে নাফিসা তুলে ধরেছেন বিপিএলের কয়েকটি দিক।
সাকিব-মাস্কো একাডেমিতে অনুশীলন করছে কুমিল্লা। কারণ কি?
নাফিসা কামাল: সাকিব-মাসকো একাডেমিতে অনুশীলন করতে হচ্ছে, কারণ এটা আমাদের ক্রিকেটারদের জন্য সুবিধা, দূরত্ব ও যোগাযোগের দিক থেকে। আমাদের কোচও সেখানেই বেজড। কুমিল্লায় যেতে হলে সমস্যা হচ্ছে, সেখানে যোগাযোগ এখনও উন্নত হয়নি। যে কারনে সেখানে আমরা এখনও বিপিএলের ম্যাচও করতে পারছি না।
তবে আমাদের স্টেডিয়ামের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে এবং আমরা আশা করি যে, আগামী বিপিএলে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে ম্যাচ হবে। সেটার দায়িত্ব পুরোপরি আমাদের এবং আমরা নিয়ে কাজ করছি এটা নিয়ে। জায়গা, এলাকা, স্টেডিয়ামের অবকাঠামো, স্থাপত্য পরিকল্পনা – সব কিছু পাস হয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ এখনও উন্নত নয়।
একদম নতুন স্টেডিয়াম হবে এটি, ৩০ হাজার ধারণ ক্ষমতার। সদর দক্ষিণে এই স্টেডিয়ামটা হবে। এটা পাস করে গেছেন রাসেল ভাই (জাহিদ আহসান রাসেল), আগে যিনি মন্ত্রী ছিলেন। এখন পাপন ভাইকে (নতুন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী) নতুন করে অ্যাপ্রোচ করব। যাতায়াত একটা সমস্যা, যেহেতু এয়ারপোর্ট নেই। তবে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হয়ে গেলে বাকিগুলোও হয়ে যাবে। এটা আমাদের দায়িত্ব, আমাদের পরিবারের দায়িত্ব। আমরা এটার ব্যবস্থা করব।
হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে খেলা হওয়া তো দূরের ব্যাপার।
নাফিসা: সেটা খুব জরুরি নয়। যে তিনটি স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে, সেখানেও হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ের মতো করে খেলা সম্ভব।
আজকেও শুনলাম, রেভিনিউয়ের দিক পিএসএল (পাকিস্তান সুপার লিগ) তৃতীয় সেরা টুর্নামেন্ট, ব্রডকাস্টের জন্য। অথচ আমরা বিপিএল কবে থেকে করছি! পিএসএল কিন্তু নতুন টুর্নামেন্ট। সেটা এখনই তৃতীয় সেরা। প্রথম হচ্ছে আইপিএল, খুবই দুর্ভাগ্যজনকভাবে দ্বিতীয় হচ্ছে উইমেন'স প্রিমিয়ার লিগ, যেটা আইপিএলের আন্ডারেই হচ্ছে।
আমরা আরও অনেক নিচে, ব্রডকাস্টিংয়ে। অথচ আমাদের জনসংখ্যা ১৮ কোটি। এটা কোনোভাবেই হিসাব মেলে না। আমাদের তো সর্বোচ্চ থাকা উচিত মিডিয়া রাইটসে। আজকে পিএসএল খুব ভালোভাবে হচ্ছে বলেই আইপিএল, উইমেন'স প্রিমিয়ার লিগের পর আছে। উইমেন'স প্রিমিয়ার লিগ ভারতের অধীনে হচ্ছে, এটা মানা যায়। কিন্তু আমরা এত নিচে থাকব, এটা মানাই যায় না।
কুমিল্লায় স্টেডিয়াম হয়নি, অবকাঠামো হয়নি, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নয়। কিন্তু সেটা না হলেও যে তিনটা মাঠে খেলা হয়, সেখানেও কিন্তু ভাগ করে দেওয়া যায়। যেমন, এই কয়টা ম্যাচের জন্য এটা চট্টগ্রামের হোম স্টেডিয়াম এটি, কুমিল্লার জন্য হোম স্টেডিয়াম আরেকটি… এভাবেও কিন্তু করা যায়।
তখন যখন আমাদের টিকেট সেলিং রাইটসটা দেওয়া হবে, ওই ম্যাচের জন্য টিকেট সেলিং রাইটস আমাদের, বিসিবি ৫০ ভাগ রেখে যদি আমাদের ৫০ ভাগ দেয়, আপনি বিশ্বাস করবেন না, আমাদের ৫০ শতাংশের একটা টিকিটও অবিক্রিত থাকবে না। আমি তো কুমিল্লা থেকে চাহিদা জানি, আমার যে দর্শক আছে, আমি তাদের দশ ভাগের এক ভাগ টিকিট হয়তো দিতে পারছি। কারণ বিসিবি আমাদের রাইটস দেয় না। টিকিট সেলিং রাইটস দেয় না, মিডিয়া রাইটস দেয় না, গ্রাউন্ড রাইটস দেয় না।
আমার বাবার (সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল) সঙ্গে এবারের বিপিএলের প্রথম মিটিং করলাম কালকে। উনি জানতে চাইলেন যে, ব্রডকাস্টিং ও গ্রাউন্ড রাইটসের কী হবে, ওইগুলা কিভাবে বিক্রি করছি। আব্বু এখনও জানেন না যে আমরা ওগুলা পাই না বা কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি পায় না।
আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের যে কনসেপ্ট, আমাদের বিপিএলে তা একদমই প্রযোজ্য নয়। একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি সাধারণত যে রাইটসগুলো পায়, আমরা সেগুলোর কিছুই পাই না।
প্রতি বছর এত টাকা খরচ করছে, শুধুই কি ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকে?
নাফিসা: শুধু ভালোবাসা থেকে এটা সম্ভবই নয়। এটা আপনারা সবসময় বলেন যে, 'আউট অব লাভ' আমরা করছি। ভালেরাবাসার জায়গা থেকে আমরা করছি কাজটুকু… অনেক বেশি পরিশ্রম করছি, চেষ্টা করছি। যেটা বাকি দলগুলি করছে না। কিন্তু স্পন্সর তো আমাদেরকে পেতে হয়, আর্থিক দিকগুলি ঠিক রাখতে হয়। আমাদের টাকাটা তো আনতে হবে। নিজেদের পকেট থেকে তো পুরো বিপিএল চালাতে পারব না। এটা খুব মিথ্যা হবে যদি আমি বলি যে, আমাদের পকেট থেকে পুরো বিপিএল চালাচ্ছি। এটা সম্ভবই নয়।
বিপিএল শেষ হওয়ার পর যখন হিসাব করি, স্পনসর থেকে যে টাকাটা আসে আর আমি যে খরচটা করি, খুব ভালো হয় যদি দুটি মিলে যায়, সমান সমান যদি হয়। ব্যালেন্স ইজ ইকুয়াল। মাঝে-মধ্যে আমরা একটু বেশি দেই, কিন্তু অতটা বেশিও নয়।
আমাদের দলটা কিন্তু অনেক বেশি গোছানো ও পেশাদার। স্পন্সরদের সঙ্গে আমরা কাজ করি… আজকে আমি তিনটা স্পন্সরের সঙ্গে মিটিং করে আসলাম। আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি চালাই… ইটস আ মার্কেটিং টুল, একটা ব্র্যান্ডিং… ওদের টাকাটা কীভাবে এখানে বিনিয়োগ হবে এবং আমরা কীভাবে ওদের রিটার্ন দেব।
আমাদের দলে আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারাইন, মইন আলিরা প্রতি বছর আসছে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শীর্ষ তারকারা আসছে, আমরা সেভাবেই স্পন্সরদের কাছে সেভাবেই বিক্রি করি। আমাদের জার্সির ওপর তাদের লোগো বসে… এই যে ওরিয়ন গ্রুপ, ওরা কিন্তু এমন নয় যে আজকে আছে, কালকে নেই, ওরা সবসময়ই আমাদের সঙ্গে আছে। কারণ ওই রিটার্নটা পাচ্ছে।
আমাদের ব্যবসা, আমাদের টাকাটা স্পন্সরড-বেজড। ক্রিকেটারদের টাকা দিতে হলে স্পন্সরদের কাছ থেকে সেই টাকা আমার নিতে হয়। স্পনসরও আমার কাছ রিটার্ন চাইবে। ক্রিকেটারদের তারা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করবে, ব্র্যান্ডিংয়ে ব্যবহার করবে।
৫৪টা দেশে বিপিএল দেখানো হয়। সব দেশে ওই স্পনসরের মিডিয়া কাভারেজ হয়। আমাদের একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিও বিপিএলে এভাবে কাজ করে না। এমনকি বিসিবিও স্পন্সর পায় না। আমি বিসিবির কয়েকজনকে অ্যাপ্রোচ করেছি… আমি একটা স্পনসর পেয়েছি ভারত থেকে, তারা আমাদেরকে স্পনসর করতে চায়, আমি বলেছি যদি আমাদেরটা সফল হয়, তাহলে তা বিসিবিকেও 'পাস অন' করতে পারব।
যেটা বলতে চাচ্ছি যে, আমরা স্পন্সরদের কাছ থেকে সাড়া পাই। কারণ আমরা পেশাদারভাবে কাজ করি। আমাদের দলে বিনিয়োগ করে স্পন্সর সেই মূলটা পাবে বা পায়, প্রতিদিন পাচ্ছে। আমাদের দল কিন্তু আমাদের পকেট থেকে হচ্ছে না, পুরো স্পন্সর-বেজড। সামনে যদি স্পন্সর না পাই, তাহলে বিপিএল করব না। কারণ পকেট থেকে বিপিএল করার তো মানেই হয় না।
আপনারা অনেক বছর আছেন বিপিএলে। চারবার চ্যাম্পিয়ন হলেন, একবারও কি আর্থিক লাভ হয়েছে?
নাফিসা: আমি তো বললাম, খুব ভালো হয় যদি আমাদের আয়-ব্যয় সমান হয়ে যায় টুর্নামেন্টের শেষ দিনে। মিথ্যা বলব না, লাভ কখনোই হয়নি।
ব্যক্তিগত যোগাযোগের কারণে কি স্পন্সর আনতে পারছেন বেশি?
নাফিসা: না, খুব ভুল হবে যদি কেউ ভাবে, আমার বাবা মন্ত্রী ছিলেন, এমপি ছিলেন, এসব কারনে স্পন্সর পেয়েছি। এখন আমার বাবা মন্ত্রী নন, কিন্তু আমার স্পন্সর তো একই আছে।
ক্রিকেটে যদি পেশাদারিত্ব থাকে, এখানে আসতে অনেকেই আগ্রহী হয়। কিন্তু তাদেরকে সেভাবে অ্যাপ্রোচ করা হয় না। আমাদের স্পন্সর, ওরিয়ন বা ওয়ালটন কিংবা যারা আছে, তারা সত্যিকার অর্থেই ক্রিকেটে স্পনসর করতে চায়, কারণ ওরা অনেক পায় (রিটার্ন)। ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পণ্য। তাহলে কেন আসতে চাইবে না ক্রিকেটে? আমার কাজ হচ্ছে সেটা, বিজনেস মডেলটা তৈরি করা।
এই যে বিপিএলে বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর প্রতি বছরই বদল হয়। এটা কি আপনাদের জন্যও সমস্যা তৈরি করে?
নাফিসা: আমার দলের জন্য অনেক সহজ হতো, যদি বিপিএলের একটা উপযুক্ত ব্র্যান্ড ভ্যালু থাকত মার্কেটে। অথবা বিসিবি ১০ বছরের জন্য নিয়মিত স্পন্সর পেত। তাহলে আমারও অ্যাপ্রোচ করতে সহজ হতো। বিপিএল টুর্নামেন্টেরই যখন টাইটেল স্পনসর হয়নি, আমরা কীভাবে…
আর আমি যে টাকাটা চাচ্ছি…আমাদের দলের টাইটেল স্পন্সর ওরিয়ন তিন বছরের জন্য যেটা দিল, খোঁজ নিয়ে দেখেন যে, এটা হয়তো বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর থেকেও বেশি। এটা আমাদের কাজের কৃতিত্ব, আমরা ওই পেশাদারিত্ব মেনে চলি।
স্পন্সররা এত টাকা বিনিয়োগ করে আপনাদের কাছ থেকে কি পায়?
নাফিসা: এই যে ওরিয়ন গ্রুপ স্পন্সর, আন্দ্রে রাসেল যে ওরিয়ন গ্রুপের জার্সি পরে ও ক্যারি করে, এটা তাকে সব জায়গায় উল্লেখ করতে হয়। ওর অ্যাপিয়ারেন্স, ফেস ভ্যালু, রিকগনিশন সেভাবেই আসছে। আর্থিক মূল্য ওভাবে আসছে। সেটির প্রভাব তাদের বিক্রিতেও পড়ে। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে স্পন্সর করার পরের কোয়ার্টারে ওই কোম্পানির বিক্রি অনেক বেশি আসে। আমরা সব অনুসরণ করি এসব।
আমরা হিসাব করি, একজন ক্রিকেটারের আর্থিক ভ্যালু কেমন। এত মায়া আর দরদ দেখিয়ে নিয়ে আসব না। ওই ক্রিকেটারের আর্থিক ভ্যালু কত, স্পন্সররা ওর কাছ থেকে কত পাচ্ছে, এটা আমাকে সবসময় চিন্তা করতে হয়। যদি স্পন্সর রিটার্ন না পায়, তাহলে আমি ওই ক্রিকেটারকে আর নেব না।
ক্রিকেটারদের কাছেও এটা খুব স্বাভাবিক। আমি কুতিত্ব দেখাতে চাই না। কিন্তু নাম ধরেই বলি…নারাই, মইন, রাসেল, রাশিদ খান, এই চারজনকে আরও দুই-তিনটি দল অ্যাপপ্রোচ করেছে। কিন্তু ওরা বলেছে, অন্য কোনো দলে যাবে না, কারণ ওদের ব্র্যান্ড ভ্যালু একদম নিচে নেমে যাবে।
দুনিয়াটাই তো ব্র্যান্ডিংয়ের। ওরাও ওদের ব্র্যান্ডিং চিন্তা করে। ওরা বলেছে, "তোমরা যদি না নাও, বিপিএল করবই না। কিন্তু আমরা এলে শুধু কুমিল্লাতে ভিক্টোরিয়ান্সেই আসব।' ব্র্যান্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ওই ক্রিকেটারদের ব্র্যান্ড ভ্যালু আমাদের মতোই।
রাজস্ব আয় নিয়ে অনেকবার বলেছেন। এসব নিয়ে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সঙ্গে সবশেষ আলোচনা কবে হয়েছে আপনাদের?
নাফিসা: ভুলেই গিয়েছি… আর কখনও কথা হবেই না মনে হয়। এ বছর একবার বলেছিলাম, 'আপনারা আমাদের সঙ্গে একটা মিটিং করেন শুধু, স্রেফ একবার সামনাসামনি বসি।' কিন্তু কোনো মিটিং করা হয়নি।
বিপিএল যেদিন শুরু, সেদিন থেকে আইএল টি-টোয়েন্টি শুরু (সংযুক্ত আরব আমিরাতের)। মইন, সুনিল, রাসেল-ওরা জিজ্ঞেস করেছিল বিপিএল কনফার্ম হবে কি না। আমি তখনও একদমই নিশ্চিত নই যে বিপিএল হবে। তখন আমি বলেছিলাম (বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলকে) যে, 'আমাদের সঙ্গে একবার বসুন দয়া করে, একটু আইডিয়া নিন, কবে হলে, কী হলে ভালো হয়। আমরা ডমিনেট করব না, আপনাদের মতোই আপনারা করবেন। শুধু একটু আমাদের আইডিয়াগুলো শুনুন।' কিন্তু মিটিং হলোই না, খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
কী কারণে হলো না. তারা কি কোনোভাবে থ্রেট মনে করে আমাদের? আমরা তো বিপিএলের অনেক বড় স্টেক হোল্ডার্স, কীভাবে না বসতে পারে! পিএসএলে তাকান, সবগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি একমত না হওয়া পর্যন্ত তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি। এই সামান্যতম সম্মানটুকু না পেলে কীভাবে হয়! ২০১৫ থেকে আমি কুমিল্লা নিয়ে বিপিএলে আছি, আমার এই দীর্ঘ সময়ে বিসিবি কোনো মিটিং করেনি আমাদের সঙ্গে। একবার হয়েছিল অনেক আগে, যেটা খুবই নরমাল, উল্লেখ করার মতো কিছু নয়।
আপনি নাকি সভা হলে খুব রেগে যান, মতে না মিললে সভা ছেড়ে উঠে চলে যান?
নাফিসা: না না, এটা খুবই ভুল কথা। এটা কেউ বললে পুরোপুরি মিথ্যা বলেছে। আমি যে পরিবার থেকে এসেছি… আমার বাবা বিসিবি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আবাহনীতে ছিলেন। যে মানুষগুলোর কথা আমি বলেছি, সবাই আমার খুবই চেনা, একদম ছোটবেলা থেকে। আমি বড় হয়েছি তাদের দেখে, বিসিবিতে যারা এখন আছে। আমি তাদের সঙ্গে কখন বেয়াদপি করব, এটা হতেই পারে না। আমার পরিবার সেটা অ্যালাও করবে না। আমরা কিছু যৌক্তিক পয়েন্টস দিতে চাই, যেটা ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে। উন্নতির জন্য দরকার হবে। বিপিএলের জন্য ভালো হবে। তারা এটা মানতে রাজি নয়। এখন আমি যদি তাদের জন্য যদি বেশি হয়ে যাই, দে আর নট রেডি টু টেক মি। তবে আমি বেয়াদবি করব, রেগে উঠে যাব, যারা আমার আঙ্কেল, চাচা, মামা – এটা তো অসম্ভব।
এবার যে ১৯ জানুয়ারি বিপিএল শুরুর তারিখ দেওয়া হলো, এটা কি আপনাদের সঙ্গে আলাপ করে ঠিক হয়েছে?
নাফিসা: কোনদিনও না… শুধু মেইলে জানিয়ে দেওয়া হয় আমাদের। খুব কঠিন হয়ে যায় আমাদের জন্য। তারিখ নেই, কিছু নেই। আমাদের জায়গায় থাকলে বুঝতে যে কতটা কঠিন হয় দল পরিচালনা করা। একজন ক্রিকেটারের ফ্লাইট ঠিক করেছিলাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে, রাকিম কর্নওয়াল… এখন তারিখ বদলে যাওয়ায় সে বলছে যে, আসতে পারবে না (আগে ১৩ জানুয়ারি শুরু হওয়ার কথা ছিল বিপিএল)। এই সাত লাখ টাকা আমার পুরো গেল, মাইনাস। তার জায়গা থেকে সে ঠিক আছে, বিপিএল এত তারিখ হওয়ার কথা ছিল, এখন সেই তারিখ হচ্ছে না।
আপনার কি মনে হয়, এসব কেন বিসিবি?
নাফিসা: কমপ্লিটলি ইগো থেকে করে। তারা সম্ভবত ভাবেন যে, আই অ্যাম ঠু মাচ ফর দেম। আমার প্যাশন, আমার যুক্তি, আমার নলেজ… তাদের জন্য ঠু মাচ।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এত টাকা খরচ করে কতটা পাচ্ছে?
নাফিসা: আমি আগামী বছর বিপিএল করব কী না, নিশ্চিত নই। আমার মনে হয় না এখন যেভাবে হচ্ছে, আমার পক্ষে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। গত বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমি এটাই অনুরোধ করেছিলাম যে, একটা মিটিং করতে চাই বিসিবির সঙ্গে। মিটিং হলে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বসবে, সবাইকে সমান সম্মান দেওয়া উচিত। সবাই বিনিয়োগ করছে। কেউ শখে আসে না।
তাহলে বিপিএলের ভবিষ্যৎ কি?
নাফিসা: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স না থাকলে বিপিএলের ভবিষ্যৎ আর কী হবে…! বিপিএল হয়তো হবে, তবে অন্য ধরনের বিপিএল হবে। এবারের বিপিএলই একটু অন্যধরনের হবে। আপনারা বুঝতে পরলে বুঝবেন, না পারলে নাই। আশা করি বুঝতে পারবেন। এখানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স একা একদিকে, বাকি সব একদিকে।
বারবার বলছেন, সামনের বার নাও থাকতে পারেন। ব্যাপারটা কি এরকম যে, আগামীবার থেকে রাজস্বের ভাগ না পেলে আপনারা থাকবেন না?
নাফিসা: হ্যাঁ, শতভাগ, থাকব না। টিকেট রাইটস, গ্রাউন্ডস রাইটস, মিডিয়া রাইটস– এই তিনটারই ভাগ চাই।
রাজস্বের কত ভাগ চায় ফ্র্যাঞ্চাইজিরা?
নাফিসা: আমরা খুবই ফ্লেক্সিবল হব। তাদের যেটা ভালো হয়, সেটাই নিতে রাজি আছি। যদি আমাদের একদম সবচেয়ে কমও দেয়, তবু রাজি। তবু শুরু করুক, আর্থিক মডেলটা তৈরি করুক, কাঠামো তৈরি করুক।
বিপিএলে কত আয়-ব্যয় হচ্ছে বা এরকম যা কিছু তথ্য, আপনাদেরকে জানানো হয়?
নাফিসা: কখনোই না। পিএসএলে কিন্তু শুধু ফ্র্যাঞ্চাইজি নয়, মিডিয়াকেও সব জানানো হয়। বিপিএল থেকে আমরা কখনও জানতে পাই না।
এবার তো অন্তত রাজস্বের ভাগ দিচ্ছে না বা সব আগের মতোই থাকছে। আপনাদের প্রত্যাশা কি বিপিএলে?
নাফিসা: আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। যেহেতু আমার টাকাটা উঠে এসেছে স্পন্সর থেকে, এখন চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। এখন একমাত্র চিন্তা ক্রিকেট, এছাড়া আর চিন্তা নেই। খেলা শুরু হয়ে যাওয়ার পর আর কিছু ভাবব না।
বিসিবিতে এত সমস্যার কথা বলছেন, আপনার কি ইচ্ছে আছে বিসিবিতে আসার?
নাফিসা: এখনও ইচ্ছে হয়নি। যদি হতো, অবশ্যই বোর্ড পরিচালক হয়ে যেতাম এতদিনে। তবে সামনে যেহেতু নির্বাচন আছে আগামী বছর, আপনারাও বলছেন যে এটা উন্মুক্ত হয়ে গেছে… তখন অবশ্যই চিন্তা করব। পাপন ভাই যতদিন আছেন, উনাকে সম্মান করে কখনও সামনে আসিনি। উনি চলে গেলে চিন্তা করতে পারি।
তার মানে কি বিসিবি সভাপতি পদের দিকেও চোখ আছে?
নাফিসা: নাহ… কিছু একটা। প্রেসিডেন্ট কী বলে দেব নাকি এখনই! কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস নিয়ে কাজ করে আসছি। সামনে ইচ্ছা আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কাজ করার।
Comments