অস্বস্তির তালিকা লম্বা হলো যে সিরিজে

Bangladesh Cricket Team
এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের এমন সাফল্যের দৃশ্য ছিল কম। ছবি: ফিরোজ আহমেদ/স্টার

'শেষ ভালো যার সব ভালো তার' এই কথা যে সর্বক্ষেত্র প্রযোজ্য না তার বহু প্রমাণের একটা আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ। শেষ ম্যাচটা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দাপট দেখিয়ে জেতা গেল। কিন্তু তাতেও তো সিরিজ হারের অস্বস্তি দূর হচ্ছে না। সঙ্গে যদি যোগ হয় মাঠের বাইরের বিতর্ক তাহলে এই সিরিজটা টাইমলাইন থেকে মুছে ফেললেই যেন ভালো হতো।

মাস তিনেক পর বিশ্বকাপ। এই সিরিজ জেতার পাশাপাশি অনেক হিসাব মেলানোর বাকি ছিল বাংলাদেশের। সিরিজ জেতা হয়নি, বাকি লক্ষ্যেরও বেশিরভাগ অপূরণের খাতায়।

অধিনায়কত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা 

প্রথম ম্যাচের হারের ধাক্কার মধ্যেই নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবালের আচমকা অবসর ও নাটকীয় ফিরে আসা সকল মনোযোগই দিয়েছে নাড়িয়ে। অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে তামিম অবসর প্রত্যাহার করলেও বিশ্বকাপে তিনি অধিনায়ক থাকছেন কিনা তার সুরাহা কিন্তু হয়নি। শেষ ম্যাচের পর ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস এই সম্পর্কিত প্রশ্নে স্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি, রেখেছেন ধোঁয়াশা। তার কথার মতো এই অনিশ্চয়তা চলতে থাকলে নেতৃত্ব নিয়েও ক্রিকেটারদের বিভ্রান্তি বাড়বে। যা বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্যও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।

তামিমের এই অবসর কাণ্ড সিরিজ জুড়েও ক্রিকেটারদের মধ্যে রেখেছে প্রভাব। মুখে যতই বলুন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পড়তি শরীরী ভাষায় মাঠের বাইরের আঁচ খুঁজছেন অনেকে। 

Naim Sheikh
নাঈম শেখ নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। ছবি: স্টার

বিকল্প ওপেনার কে?

এই সিরিজ দিয়ে একজন বিকল্প ওপেনার তৈরি দেখতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। তামিম সরে যাওয়ায় নাঈম শেখকে দুই ম্যাচ খেলানোর অবস্থা তৈরি হয়েছিল। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ রান করা বাঁহাতি ওপেনার দুই ম্যাচ খেলে হয়েছেন ব্যর্থ। প্রথম ম্যাচে ৩৩২ রান তাড়ায় ২১ বলে করেন ৯, পরের ম্যাচে ১২৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ৮ বলে করেন ০।  দুই ম্যাচেই তার আউটের ধরণ নির্বাচকদের হতাশ করবে। ফজল হক ফারুকির বল শরীর থেকে দূরে থাকলেও তা স্টাম্পে টেনে বোল্ড হয়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে অনেক শর্ট বল স্টাম্পে টেনে আনেন, পরের ম্যাচে ড্রাইভ করতে গিয়ে একই পরিস্থিতির শিকার হন। নড়বড়ে, আড়ষ্টভাব দূর করতে না পারা নাঈমের উপর খুব বেশি ভরসা রাখার সময় হয়ত নেই। এর বাইরে কাকে এই জায়গা দেওয়া হবে তা নিয়ে অনেক সমীকরণ মেলাতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

সাতে দাবি জানাতে পারলেন না আফিফ

গত এপ্রিলে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন আফিফ হোসেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাঠে অ্যাওয়ে সিরিজেও জায়গা হয়নি তার। দুই সিরিজ বাইরে থাকার সময় প্রিমিয়ার লিগে একশোর বেশি স্ট্রাইকরেটে সাড়ে পাঁচশো রান করেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার। এই পারফরম্যান্স ফের তাকে নিয়ে আসে জাতীয় দল। এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে বড় পরীক্ষা ছিল আফিফের। তবে সাত নম্বরে সুযোগ পেয়ে নিজের দাবিটা জানাতে পারেননি তিনি। দুই ম্যাচ ব্যাট করে ৪ ও ০ রান করেছেন।

আফিফ না পারলে এই পজিশনে অন্য কাউকে দেখতে হবে। কিন্তু তা বোঝার জন্য সময় হাতে কম। আগামী সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের আগে জাতীয় দলের কোন খেলা নেই। তবে এরমধ্যে ইমার্জিং এশিয়া কাপ খেলতে শ্রীলঙ্কায় গেছেন জাতীয় দলের আশেপাশের বেশ ক'জন। তাদের কেউ জায়গাটা নিয়ে নিলে অবাক হওয়ার থাকবে না। কিন্তু তারাও যদি ব্যর্থ হন বাংলাদেশের নির্বাচকদের দুশ্চিন্তা বাড়বে।

হতাশার ভিড়ে পেস বোলিংয়ে স্বস্তি

সিরিজের একমাত্র স্বস্তি হতে পারে পেস বোলারদের পারফরম্যান্স। এমনিতে তাদের নিয়ে বড় কোন প্রশ্ন ছিল না। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে যদি বাংলাদেশ পাঁচ পেসার রাখে তবে পাঁচজনই তৈরি। এই সিরিজে তাদের সবাইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর পরিকল্পনা ছিল। তাতে সফলই বলা যায় টিম ম্যানেজমেন্টকে।

মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম দুই ম্যাচ খেলে  খুব ভালো না করলেও তার জায়গা নিয়ে প্রশ্ন নেই। হাসান মাহমুদ এই সিরিজে তার চেনা ছন্দে ছিলেন না, বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচে তার পারফরম্যান্স ছিল সাদামাটা। তবে তাকে প্রথম একাদশে রেখেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় ম্যাচে চোট পাওয়া ইবাদত হোসেন আগামী কদিন থাকবেন বিশ্রামে, তার চোট নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তাসকিন আহমেদ চোট থেকে ফিরে ধীরে ধীরে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন। গতি আর বাউন্সে ফুল এফোর্ট দিচ্ছেন, ব্যাটারদের পরীক্ষাও নিচ্ছেন। সময়ের সঙ্গে তার আরও ধারালো হওয়ার কথা। সবচেয়ে দারুণ করেছেন শরিফুল ইসলাম। প্রথম দুই ম্যাচ বেঞ্চে বসে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। তৃতীয় ম্যাচে একাদশে এসে আগুন ঝরিয়েছেন। ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। মোস্তাফিজের বিকল্প হিসেবে বিশ্বকাপের দাবি জানিয়ে রাখছেন তিনি।

কোনো চোট সমস্যা না থাকলে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের পাঁচ পেসারের নাম এখনই বলে দেওয়া যায়- তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেন ও শরিফুল ইসলাম।

বিকল্প বাঁহাতি স্পিনার

বিকল্প বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে কাকে ভারত নিয়ে যাবে বাংলাদেশ দল? তাইজুল ইসলাম নাকি নাসুম আহমেদ? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও জরুরি। তাইজুল স্কোয়াডে থেকে শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। ৯ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। একদম খারাপ না। তবে মঙ্গলবার তিনি যখন বল করতে আসেন তখন আফগানিস্তানের ব্যাটিং অর্ডারের অর্ধেকের বেশি ছেঁটে ফেলেছে বাংলাদেশ। তার পরীক্ষা সেভাবে হয়েছে বলারও উপায় নেই। এশিয়া কাপের আগে নাসুমও বিবেচনায় আসতে পারেন। তবে এই পজিশনের জন্য আরও কিছু দেখার বাকি আছে নির্বাচকদের।

Comments

The Daily Star  | English
India visa restrictions for Bangladeshi patients

A wake-up call for Bangladesh to reform its healthcare

India’s visa restrictions on Bangladeshi nationals, while initially perceived as a barrier, could serve as a wake-up call for Bangladesh to strengthen its healthcare system and regain the confidence of its patients.

12h ago