'বিসিবি কর্মকর্তার লজ্জা থাকা উচিত' - বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা
অসহযোগিতার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মালামাল প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এই ঘটনার বিসিবি কর্মকর্তার লজ্জা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন।
আগের দিন রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন ।
গত ২ মার্চ বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে একটি চিঠি দিয়ে জানান যে, 'বিগত কয়েক বছর যাবত বগুড়া ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার ফলে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক নিয়মিতভাবে টুর্নামেন্ট/লিগ আয়োজন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড উক্ত স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিকট হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। উক্ত ভেন্যুতে কর্মরত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দকে ইতিমধ্যেই অন্য ভেন্যুতে বদলি করা হয়েছে।'
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে বগুড়াবাসী বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন। অনেকে কড়া ভাষায় বিসিবির সমালোচনা করেছেন।
গতকাল (২ মার্চ) রাতে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, 'উনারা (বিসিবি) কেন রাগ করেছে আপনাদের বলি, আমাদের এই প্রিমিয়ার লীগ, আমাদের প্রিমিয়ার লীগটি আমরা উদ্বোধন করেছি (১ মার্চ), আমি একটা চিঠি দিয়েছি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডিভেলপমেন্টকে যে আপনাদের অবগত করা হল ১ মার্চ বগুড়া প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ উদ্বোধন করেছি। বিষয়টি আপনাদের পত্র প্রেরণের মাধ্যমে অবগত করা হল।'
'গতকাল (১ মার্চ) বাতেন নামের (বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির ম্যানেজার আব্দুল বাতেন) একজন (বিসিবির) কর্মকর্তা যার সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক যার সঙ্গে আমার প্রতিনিয়ত কথা হয় উনি আমাকে রিং দিলেন যে মিলন ভাই, আমাদের যে খেলা আছে (ইয়ুথ ক্রিকেট লীগ) তাহলে কেন আপনি এখানে (চান্দু স্টেডিয়ামে) খেলা দিলেন? আমি বললাম আমি খেলা দিলাম তাতে সমস্যা কি? আপনারাও খেলবেন, আমরাও খেলবো- নো প্রব্লেম। সামনে ২৫ মার্চ রমজান মাস। আমাদের খেলাগুলো আমরা কবে করবো? খেলা করতে হবে না আমাদের? খেলা না করলে আমরা ডেভেলপ করবো কেমন করে?'
'..ওনারা পরে বললেন ঠিক আছে দেখা যাক কি করা যায়। একটু পরে আবার ফোন করে বললেন আপনাদের ভেন্যুতে সব লোক আমরা তুলে নিয়ে যাবো। মালামাল তুলে নিয়ে যাবো। পরে আপনারা এ কথা বলার আগে আপনাদের মিনিমাম লজ্জা থাকা উচিত! কি আছে এখানে- আর কি তুলে নিয়ে যাবেন?'
'আমাকে এক সাংবাদিক ভাই বললেন বিসিবি নাকি এখানে মাসে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে। ১৫ লাখ টাকা খরচ করে। ১৫০০ টাকার কোনো উপকার আছে? আপনারাই বলেন! আপনারা যদি বলেন তাহলে আমি এর উত্তর দিব,' সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন মাসুদুর রহমান।
'১৫ লাখ টাকা কাকে দেয়। আর সেই টাকার বাস্তবায়ন কিভাবে হয়? গত ১৫ বছরে কি একটা ফ্লাড লাইট জ্বালাতে পেরেছে বিসিবি? ১৫ বছরে কি কোনো রাস্তা-ঘাটের সংস্কার হয়েছে? আমাদের ব্যক্তিগত টাকায় স্টেডিয়ামের রাস্তা সংস্কার করেছি,' বলেন মাসুদুর।
'দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিসিবি ৩০ কোটি, ৫০ কোটি, ১০০ কোটি টাকা খরচ করে স্টেডিয়ামের রেনোভেশন করেছে। গত ১০ বছরে বিসিবি বগুড়ায় কয় হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছে?' প্রশ্ন করেন মাসুদুর।
বিসিবির এই আচরণ উদ্দেশ্যমূলক কিনা জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, 'উদ্দেশ্যমূলক নয় এটা হল জ্ঞানহীন একটা কথার অংশ। একটা কথা বলতে হবে বলে দিলাম।'
বিসিবির কিছু কর্মকর্তার দৃষ্টিভঙ্গি বগুড়ার প্রতি পক্ষপাতমূলক বলেও সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই সম্পাদক।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিষয়টির সমাধানে নিজে থেকে চেষ্টা করবে কিনা জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, 'আমরা নিজেরা এর যৌক্তিক সমাধান চাই। আমরা চাই বিসিবির সুদৃষ্টি আমাদের উপর আসুক। এখানে আন্তর্জাতিক মানের খেলা হোক। বগুড়া জনগণ সেটি চায়। আমরা কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের বিপক্ষে নই।'
'একটা জেলা ক্রীড়া সংস্থার বছরে ২০ থেকে ২৫টি ইভেন্ট। আমাদের তো সেই খেলাগুলো পরিচালনা করতে হবে। এই দায়ভার বগুড়ার মানুষ আমাদেরকে দিয়েছে। বগুড়ার ক্রীড়াঙ্গনকে সচল রাখার। বগুড়ায় একটা মাত্র মাঠ।'
'মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলায় খেলা হবে।.. এই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসেন্ট্রালাইজড করছেন খেলাধুলাকে আর বিসিবি আমাদের সহযোগিতায় বয়স-ভিত্তিক খেলোয়াড় পাচ্ছে।'
'আমাদের ব্যর্থতা কোথায় জানেন? আমাদের ব্যর্থতা হল আমরা এই জেলাকে ক্রীড়ামুখী করার চেষ্টা করছি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এখানে পাঁচটা লিগ করি। এখন থেকে খাদিজাতুল কোবরা, রিতুমনি, শারমিন সুলতানার মত খেলোয়াড় জাতীয় পর্যায়ে খেলে। তৌহিদ হৃদয়, তামিমের মত ছেলেরা আন্ডার নাইনটিন খেলে। মুশফিকুর রহিম, সুভাষ (শরিফুল ইসলাম) তাদের মত ছেলেরা বাংলাদেশ ন্যাশনাল টিমে খেলে। ...বগুড়া একটা প্রোডাকশন হাউজ এবং এই প্রোডাকশন হাউজে ১০০০-১৫০০ ছেলে-মেয়েরা খেলে। তাদের মধ্যে আমরা নেতৃত্ব দিতে পারি বাংলাদেশকে। .এটিই মনে হয় উনাদের (বিসিবি কর্মকর্তাদের) একটি অন্তর্নিহিত ক্ষোভ যে বগুড়া থেকে কেন এত ভালো করবে? বগুড়া কেন সামনে যাবে,' যোগ করেন মাসুদুর রহমান মিলন।
Comments