ক্ষেপণাস্ত্র না থাকলে কীভাবে যুদ্ধ করবেন, প্রশ্ন হাথুরুসিংহের
ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে অতি স্পিনবান্ধব উইকেট বানানোর কৌশল চালু করেছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তাতে মিলেছিল দারুণ কিছু সাফল্য। শ্রীলঙ্কান কোচের দায়িত্বের প্রথম মেয়াদে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের বাইরে সেই ছক কার্যকর নয়। দ্বিতীয় দফায় দায়িত্বে এসেও স্পিন নির্ভরতা পাল্টে ফেলার কোনো ইচ্ছাই নেই হাথুরুসিংহের। তার সাফ কথা, একেই বলে ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়া।
দুই বছরের চুক্তিতে ফের বাংলাদেশের প্রধান কোচ হয়েছেন হাথুরুসিংহে। এর আগে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত একই পদে ছিলেন তিনি। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তার কাজের মেয়াদ শুরু হয়েছে। তবে তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান গত সোমবার রাতে।
একদিন পর বুধবার নতুন মেয়াদে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শেষভাগে পাওয়া যায় 'কড়া হেডমাস্টার' খ্যাত হাথুরুসিংহের আগের সেই রূপের আভাস। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন টেস্ট সংস্করণে ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার জন্য স্পিনবান্ধব উইকেটের প্রয়োজনীয়তা।
হাথুরুসিংহের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তার প্রথম মেয়াদে স্পিননির্ভর উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশ সাময়িক সাফল্য পেলেও টেস্টে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পেতে এবার ভিন্ন কিছু তিনি করবেন কিনা। বিশেষ করে, বিদেশের মাটিতে পেসবান্ধব উইকেটে খেলার ক্ষেত্রে। তখন প্রশ্নকর্তাকে হাথুরুসিংহে একের পর এক পাল্টা প্রশ্ন করেন, 'ঘরের মাঠের সুবিধা কী? আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি, ঘরের মাঠের সুবিধা কী? নিউজিল্যান্ডে গেলে আমরা কী ধরনের উইকেট পাই? অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে আমরা যখন যাই, তখন ওরা কী করে? ভারত ঘরের মাঠে কী করছে?'
রূপক ব্যবহার করে তিনি নিজেদের শক্তি অনুসারে পরিকল্পনা সাজানোর পক্ষে যুক্তি দেন, 'বিদেশে গেলে আমাদের যা আছে তা দিয়ে আমরা খেলার চেষ্টা করি। আপনার যদি ক্ষেপণাস্ত্র না থাকে, তবে আপনি কীভাবে যুদ্ধ করবেন? আপনাকে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল বেছে নিতে হবে, তাই না? আপনি তাদেরকে ঘরের মাঠে আসতে দেবেন (এবং আপনার যা কিছু আছে তা দিয়েই সেরাটা করবেন)। যদি আপনার কাছে গোলাবারুদ না থাকে, তবে আপনি এটা করতে পারবেন না।'
সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ একেবারে খারাপ করছে বলেও মনে করেন না হাথুরুসিংহে , 'আমরা যা করতে পারি, খেলোয়াড়দের বিকাশ ঘটাতে পারি যেন শেষ পর্যন্ত আমাদের জন্য তা যথেষ্ট হয় (বিদেশে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে ম্যাচ জেতার জন্য)। তবে আমি মনে করি, আপনি বলতে পারবেন না যে তারা (বিদেশের মাটিতে সিরিজে) খারাপ করছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় (গত বছর ওয়ানডেতে) তারা ভালো করেছে। নিউজিল্যান্ডে (গত বছর টেস্টে) তারা ভালো করেছে।'
ঘরের মাঠের সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করতে বদ্ধ পরিকর ৫৪ বছর বয়সী এই কোচ, 'আমরা যেমনটা আলোচনা করেছি, (ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কিছু খেলোয়াড় উঠে আসছে। খেলোয়াড়দের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে সময় লাগে। আমি আপনার সঙ্গে একমত নই (ঘরের মাঠে সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নে) কারণ, প্রতিটি দেশই একই জিনিস করে। আপনাকে ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে হবে। আমরা যখন দেশে থাকি, তখন নিজেদের শক্তিমত্তা অনুসারে খেলি।'
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবশ্য ঘরের মাঠে স্পিনবান্ধব উইকেট বানিয়েও টেস্টে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় তারা। গত বছর দুই ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে তারা পরাস্ত হয় ১-০ ব্যবধানে।
Comments