কেন ১৩ বছর পর আওয়ামী লীগকে ভাবতে হচ্ছে জনগণের রায় নিয়ে
আমার ফুপা ছিলেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বাসায় এলেই পড়াশোনা সংক্রান্ত প্রশ্ন করতেন, যা ছিল বেশ বিব্রতকর। শেষে গিয়ে প্রশ্ন করতেন, পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
দ্রুত ছাড়া পাওয়ার জন্য উত্তর দিতাম, ভালো। তখন অবধারিতভাবে ফুপা বলতেন, 'ফলেনো পরিচয়তে'। এর অর্থ, 'ফলেই পরিচয়'। আমাদের মুখের কথার ওপর তেমন কোনো আস্থা ছিল না তার। আমাদের ফলাফলেই আসল পরিচয় প্রকাশ করবে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের অবস্থা বিবেচনা করে সেই স্মৃতি মনে পড়লো। তারা আসলে কতটা শক্তিশালী দল, সেটা দলের নেতা ও সরকারের মন্ত্রীদের আস্ফালন দেখে নয়, বোঝা যাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল দেখে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদেরকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রচারণা শুরুর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, 'এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এবং এটি আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে।'
শেখ হাসিনা আরও একটি মন্তব্য করেছেন, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আসা সংসদ সদস্যরা নির্বাচন কী, তা বোঝেন না। তাদেরকে বুঝতে হবে। 'প্রার্থীদের পাশ করিয়ে আনা হবে, এমন ধারণা করলে চলবে না। এবারের নির্বাচনে সবাইকে নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে।'
সভানেত্রী দল ও দেশের সার্বিক অবস্থা মাথায় রেখে যখন জাতীয় নির্বাচনের আগে নিজেদের মূল্যায়ন করছেন, ঠিক একই সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা এমন সব ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও মাঝে মাঝে হাস্যকর মন্তব্য করছেন যে সরকারের প্রতি মানুষের বিরক্তি বাড়ছে বই কমছে না। যেমন: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, 'আগে অংক শেখেন, অর্থনীতি বোঝেন, তারপর সরকারে যাওয়ার খোয়াব দেখেন।'
এর উল্টোদিকে যদি জনগণ বলে, কারো স্বপ্ন দেখার উপরেও কি আপনারা হাত দিতে পারেন? স্বপ্ন দেখার অধিকার কি শুধু আওয়ামী লীগের? তাছাড়া অংক তো যারা দেশ চালাচ্ছেন তাদের আগে শেখা উচিৎ, অর্থনীতিও তাদেরই আগে বোঝা উচিৎ।
এখানে প্রণিধানযোগ্য আরেকটি তথ্য উল্লেখ না করলেই না। সেটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। অথচ ক্ষমতায় থাকার পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েই ইউটিউবে সক্রিয়। ২ দলেরই নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে। সাবসক্রাইবার ও ভিডিও ভিউয়ের দিক দিয়ে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি বেশ এগিয়ে।
২ দিন আগেও বিএনপির ইউটিউব চ্যানেলের সাবসক্রাইবার ছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার, আজ ২ নভেম্বর যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের চ্যানেলে সাবসক্রাইবার ১ লাখ ৮২ হাজার। বিএনপির ইউটিউব চ্যানেলটি ইউটিউব কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভেরিফায়েড। আওয়ামী লীগের চ্যানেলটি ভেরিফায়েড নয়।
২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের ইউটিউব চ্যানেল যাত্রা শুরু করে দলের 'অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল' হিসেবে ঘোষণা দিয়ে। ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত এই চ্যানেলের মোট ভিউ হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৮৩। তাদের ১ মাসেরও কম সময় পর ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর বিএনপি তাদের ইউটিউব চ্যানেল চালু করে। একই সময়ে তাদের ভিউ ৭ কোটি ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০। (সূত্র: শওগাত আলী সাগর, সাংবাদিক)
ফিরে আসি অন্য প্রসঙ্গে। অর্থনীতি এখন যে কোন গর্তে পড়তে যাচ্ছে, এটা ভেবেই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সংযতভাবে খরচ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অথচ সরকারের বড় প্রকল্পের কাজ থেমে থাকছে না। এই দুঃসময়ে মাটির নিচে মেট্রোরেল নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকার চুক্তি করতে হচ্ছে কেন?
কেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের ১১টি দেশ সফরে যেতে চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি? কমিটি আগামী ৬ মাসের মধ্যে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, তুরস্ক, ব্রাসেলস, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া ও সুইডেনও পরিদর্শন করার সুপারিশ করেছে।
এই খরচের মানে কী হবে? দেশের ভাবমূর্তি কি ছেলের হাতের মোয়া যে কমিটির লোকজন ১১টা দেশ সফর করলেই তা পরিবর্তন হয়ে যাবে? দেশের ভাবমূর্তি ভালো কাজের মাধ্যমে তৈরি হয়। তার জন্য সততা, জবাবদিহিতা, উন্নয়ন, মানবাধিকার পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নারীর অবস্থান, শিক্ষার মান, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের পরিবেশের মতো আরও অনেক কিছু তৈরি করতে হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ কিছু অর্জন করতে পেরেছে, কিছু পারেনি।
বিদেশে থাকা শত্রুরা দেশের কোনো ক্ষতিই করতে পারে না, যখন দেশের মানুষ সরকারের পক্ষে থাকে। তারাই জীবন দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করবে। এমনকি, যারা বিদেশে বন্ধু খোঁজার চেষ্টা করেন, তারাও ভুল করেন। কারণ দেশের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। সময় মতো দেশের মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে বাইরের শত্রু বা মিত্র খুঁজতে হয় না। সরকারের ভাবমূর্তি বাড়ানোর জন্য এই দুঃসময়ে ১১টি দেশ ঘুরতে যাওয়ার মতো যুক্তিহীন কাজও করতে হয় না।
বৈশ্বিক মন্দা, দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। কারণ, টানা ১৩ বছর ক্ষমতাসীন থাকার পরও এ কথা সত্য যে আওয়ামী লীগ তার ঘর গোছাতে পারেনি বা ঘর গোছাতে চায়নি। হয়তো শুধু নিজেদের ভাগ্য গোছাতেই ব্যস্ত ছিল।
সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো কাজ গেছে। কারো কোনো পরামর্শ কানে তোলেনি। কোনো জবাবদিহিতারও প্রয়োজন মনে করেনি। তাই আজকে, ঠিক নির্বাচনের সামনে এসে দলীয় প্রধানকে বলতে হচ্ছে, এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কঠিন হবে।
নেত্রী বলেছেন, 'চকচকে নেতারা বিপদে পড়লে থাকবে না, কিন্তু ত্যাগী, তৃণমূলের পোড় খাওয়া নেতারা বিপদে থাকে। তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।' প্রতিটি খাতেই এই চকচকে তেলবাজ মানুষগুলোই আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে ক্রিমটা খেয়েছে। ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মী-সমর্থকরা ছিটকে পড়েছেন। এখন নির্বাচন এসেছে, তাদের কথা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের কথা। আওয়ামী লীগের মতো বড় ও প্রাচীন দল ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর ঈর্ষণীয় শক্তি থাকার কথা ছিল। কিন্তু আজকে তারা দ্বিধা-বিভক্ত, সন্দিহান। নিজেদের ওপরেও আস্থা পাচ্ছে না। অনেক ভালো কাজ করার পরও জনগণকে ভয় পাচ্ছে।
জামাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জঙ্গিদের কাজ শক্ত হাতে দমন করা হয়েছে, একমাত্র বিরোধী দল বিএনপিকেও কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। তাহলে বিরোধিতাটা কোথায়? এখানেই হচ্ছে মূল প্রশ্ন বা সমস্যা। বিরোধিতাটা নিজের সঙ্গে নিজের। যারা এতদিন ভালো পরামর্শ দিয়েছেন, সততার কথা বলেছেন, তাদেরকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে।
নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ ধরেই নিয়েছে, দেশটা তাদের, আওয়ামী লীগ তাদের, জনগণও তাদের। হাত পেতে নিয়ে চেটেপুটে খাই অবস্থা। আর এখানেই হিসাবের ভুল। জনগণ এমন শক্তি, যাকে খুব যত্নে আগলে রাখতে হয়। ওই যে একটা দিনে তাদের হাতে ক্ষমতা আসে, সেদিনই তারা তাদের মত দিয়ে ফেলে।
কাজেই জনতা যেন আপনার দলের পক্ষে ভোটটা দেয়, সেই চেষ্টা কিন্তু সেই দলের নেতা-কর্মীদেরই চালিয়ে যেতে হতো। কিন্তু সরকারি দলের কতজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতা ও কর্মীরা এভাবে বিষয়টি ভেবেছেন বা ভাবতে চেয়েছেন। সেজন্যই কবি নজরুলের ভাষায় বলতে পারি, 'দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ।'
ঋণ শোধ করার বদলে তারা ঔদ্ধত্য ভঙ্গিতে যা খুশি তাই বলেছেন এবং এখনো বলছেন। ব্যাখ্যাতীতভাবে নিজেদের শক্তির বর্ণনা দিয়েছেন, যা মানুষকে হাসিয়েছে, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ করেছে। বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খাতে, আনন্দ-উৎসবে যখন কোটি টাকা উড়ানো হয়েছে, তখনও মানুষ দুঃখ পেয়েছে। যখন শুধু সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে আকাশচুম্বী করা হয়েছে, তখনও চারদিক থেকে আপত্তি উঠেছিল।
চারদিকে দুর্নীতি, বেসামাল রাজনৈতিক কর্মীরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। তখনও বিভিন্ন খাত থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু কারো কর্ণকুহরে কিছুই ঢুকেনি, বরং ভুল বুঝেছিল। মাঠ থেকে যে সংকেত পাঠানো হচ্ছিল, সেই সংকেতকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের সময়ে ভালো কাজও অনেক হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার। বিশ্বাস করি, পদ্মা সেতু শেখ হাসিনা ছাড়া কারো পক্ষে করা সম্ভব হতো না। মেট্রোরেল, মধুমতিসহ কয়েকটি সেতু, উত্তরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ৮ লেন করার কাজসহ বিস্তর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বেশ ভালোভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও টিকা প্রদান করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা খাতের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি, বেশকিছু ইতিবাচক আইন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুবিধা বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করা, জেন্ডার বাজেটিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
তাহলে মন্দটা কী হয়েছে? কেন আজ ১৩ বছর পর আওয়ামী লীগকে ভাবতে হচ্ছে জনগণের রায় নিয়ে? কারণগুলো সহজ, আর উত্তর তো জানা। সেগুলো হচ্ছে— জবাবদিহিতার অভাব, একপেশে নীতি, জনমতকে তোয়াক্কা না করা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ না করার প্রবণতা, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় না আনা, রাঘববোয়ালদের সহি সালামতে রাখার চেষ্টা, রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, আমলা নির্ভর রাষ্ট্রযন্ত্র, গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সর্বোপরি লাখো কোটি টাকা বিদেশে পাচার।
এখন দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক, গ্যাস সংকট, মূল্যস্ফীতি, ডলারের ক্রমবর্ধমান দাম, রিজার্ভ কমে আসা, টাকার অবমূল্যায়ন, চাকরি হারানোর ভয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কা। সরকার কি পারছে, মানুষকে নূন্যতম কোনো সান্ত্বনা বা আশ্বাস দিতে?
দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি বলে বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় দেখা গেছে। ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে গেছেন, বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা গত বছরের জুনে ৭ শতাংশ থাকলেও চলতি বছরের মে মাসে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ১৩ শতাংশ হয়েছে।
তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমাদের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় আছে। দেশের মানুষ না খেয়ে নেই। এই সেদিনও কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, 'সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষ হলেও, বাংলাদেশে খাদ্যে দুর্ভিক্ষ হবে না। যথেষ্ট খাদ্য আমাদের মজুদে রয়েছে।'
দেশের অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সেটার সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী সেই সুফল ভোগ করছে। অর্থাৎ সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাংলাদেশে হয়নি। ভালো করার সুফল সামষ্টিকভাবে সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। রপ্তানি আয় বাড়ছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে, সেবাখাতে আয় বাড়ছে, বড় বড় কল-কারখানায় আয় বাড়ছে, এতে কিছু মানুষের সুবিধা হচ্ছে। কিন্তু, সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নটা আমাদের হয়নি। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাখাত ও কর্মসংস্থানে উন্নতি হয়নি। অর্থাৎ এ খাতগুলো কোনো সুফল পায়নি।
আওয়ামী লীগের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় অনেক কমে গেছে। প্রকৃত আয় কমে যাওয়া মানে কম খাওয়া, প্রায় না খাওয়া, পুষ্টি গ্রহণ করতে না পারা, ওষুধ খেতে না পারা এবং শিক্ষা খরচ কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হওয়া।
অন্যদিকে এই মানুষগুলোই দেখছে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, বাড়ি উঠছে, গাড়ি বাড়ছে, বিদেশে সম্পত্তি বাড়ছে, শহরে জৌলুস বাড়ছে, অপচয় হচ্ছে। ঠিক এরকম একটা বিপর্যস্ত অবস্থায় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বলে বসলেন, দেশের বাজারে সরকার কোনো কিছুর দাম বাড়ায়নি, নিজে থেকে বেড়ে গেছে। এত হাস্যকর কথা বলে সরকারের ওজন কমানোর কারণ কী?
সরকার এতগুলো বছর যেমন ভালো কাজ করেছে, তেমনি জনগণের সমস্যা ও বাস্তবতাকে উপেক্ষাও করেছে ভয়াবহভাবে। সেই ক্রোধ এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব হলো অতীতকে ভুলে বর্তমানকে দেখে। তাই প্রবাদই আছে, 'সব ভালো তার, শেষ ভালো যার।'
অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে সরকার কিভাবে বাগে আনবে, জানি না। তবে এটা জানি, সরকার যতো বেশি বিরোধী দলের প্রতি কঠোর হবে, ততোই ভোট হারাবে। সময় হাতে এত কম যে সরকারের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। এর ওপর যদি ঔদ্ধত্য হয়ে উঠে সরকার ও আওয়ামী লীগ, তাহলে শুধু তাদের বিরোধী ভোটারের সংখ্যাই বাড়বে।
শাহানা হুদা রঞ্জনা, যোগাযোগকর্মী
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments