বিশ্বকাপের মজার ১৫ তথ্য

ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের মজার তথ্য
সাওপাওলোর ফুটবল যাদুঘরে বিশ্বকাপের রেপ্লিকা ধরে উল্লসিত শিশুরা। ছবি : রয়টার্স

দরজায় কড়া নাড়ছে আরও একটি বিশ্বকাপ। ২০টি সফল আয়োজনের পর ২১তম আসরটি হতে যাচ্ছে রাশিয়ায়। শুরুর আগেই এ আসর নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে ফুটবল পাড়ায়। সমর্থকদের ঘুম নেই নিজ নিজ দলকে নিয়ে। নানা খুঁটিনাটি তথ্য নিয়ে তর্কে জমিয়ে তুলছেন চায়ের আড্ডায়। তাই দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য ১৫টি মজার তথ্য তুলে ধরা হলো, যা হয়তো আপনি নাও জানতে পারেন।

১. ভাবা যায়, স্টেডিয়ামে এক সময় পিস্তল নিয়ে খেলা দেখতে যেতো দর্শকরা। প্রথম বিশ্বকাপের ঘটনা এটা। সেবার দুই প্রতিবেশী দেশ আর্জেন্টিনা ও স্বাগতিক উরুগুয়ে ফাইনালে ওঠায় দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিলো চরম পর্যায়ের। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেফারি সকল দর্শকদের তল্লাশি করতে বলেন। এতে ১৬০০ রিভলভার পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে।

২. প্রথম বিশ্বকাপে ফিফার নিজস্ব কোন বল ছিলো না। দলগুলোর বল দিয়ে খেলা হতো। সেবার ফাইনালে বল নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগে যায় দুই ফাইনালিস্ট উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার মধ্যে। দুই দলই চায় নিজেদের বল নিয়ে খেলতে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার বল দিয়ে খেলা হবে আর দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ের। মজার ব্যাপার হলো, প্রথমার্ধে নিজেদের বল দিয়ে ২টি গোল দেয় আর্জেন্টিনা। আর দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের বল দিয়ে উরুগুয়ে দেয় ৪টি গোল। ফলে ৪-২ ব্যবধানে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে।

৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ফিফার ইতালিয়ান ভাইস প্রেসিডেন্ট অত্তোরিনো বারসি বিশ্বকাপ ট্রফি নিজের বেডরুমের বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখেন। তার ভয় ছিল নাৎসি বাহিনী ট্রফিটি চুরি করতে পারে!

৪. ১৯৭৪ সালে টিম জায়ার পশ্চিম জার্মানি ছাড়ার জন্য একটি বিএমডব্লিউ টিম বাস চুরি করে। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেনি তারা। জার্মানি ছাড়ার আগেই তাদের পাকরাও করে পুলিশ।

৫. ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় সংযুক্ত আরব আমিরাত। দলের খেলোয়াড়দের প্রতিজ্ঞা করা হয় যদি কেউ গোল করতে পারে, তাহলে তাকে দেওয়া হবে একটি রোল রয়েস গাড়ি। অনভিজ্ঞ দলটির ভালো করার সুযোগ ছিল খুবই কম। তবে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পরার আগে তারা ২টি গোল দিতে সমর্থ হয়। আর প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী শেখ মোহাম্মদের কাছ থেকে দুই গোলদাতা ইসমাইল মোবারক ও থানি জুমা একটি করে রোল রয়েস গাড়ি উপহার পান।

৬. ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোন নক আউট ফাইনাল ছিল না। তার পরিবর্তে পরীক্ষামূলক ভাবে রাউন্ড রবিন লিগ ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহকারী দলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। আর তাতে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। তেমনি ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ বিশ্বকাপে ছিলো না কোন গ্রুপ পর্ব।

৭. কোন মতে হার এড়াতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন। আগের সব ম্যাচেই ব্রাজিল পায় বড় বড় জয়। তাই এ ম্যাচে নিয়ে বিশাল আগ্রহ ছিল ব্রাজিলিয়ানদের। ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনাল রাউন্ডের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের লড়াই দেখতে রিও’র মারাকানা স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিত হয়েছিল ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৮৪ জন। যা এখনও বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যাচটি হারে ব্রাজিল। আর সে ম্যাচে হারের বেদনা সহ্য করতে না পেরে বেশ কিছু ব্রাজিলিয়ান ভক্ত মারাকানার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

৮. বাছাই পর্ব থেকে বাকি দলগুলো নাম প্রত্যাহার করে নেওয়াই কোন ম্যাচ না খেলেই ১৯৫০ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে যায় ভারত। সে সময়ে খালি পায়ে খেলে অভ্যস্ত দলটি বিশ্বকাপেও খালি পায়ে খেলার দাবি করে। কিন্তু ফিফা সে অনুমতি দেয়নি। পরে বাধ্য নাম প্রত্যাহার করে নেয় ভারত।

৯. ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা বিশ্বকাপের সবগুলো আসরে খেলেছে। আগের ২০ আসরে সর্বোচ্চ পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তারা। এছাড়াও বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৭০টি জয়ের রেকর্ডও তাদের। তবে সফল এ দলটির বিশ্বকাপ সূচনাটা ভালো ছিলো না। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৯৩০ বিশ্বকাপে যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু দলটি।

১০. ১৯৯৪ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট দল ছিল কলোম্বিয়া। কিন্তু গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১ গোলে হেরে যায় তারা। সেখানে একটি আত্মঘাতী গোল দেন আন্দ্রে এসকোবার। সেই আত্মঘাতী গোলের কারণে গ্যাংস্টাররা তাকে গুলি করে হত্যা করে।

১১. বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় টানা চ্যাম্পিয়ন থাকার রেকর্ডটি ইতালির। ১৯৩৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৩৮ সালেও বিশ্বকাপ জিতে নেয় তারা। এর পরের দুই আসর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল তারা।

১২. বিশ্বকাপের ইতিহাসে ২০০২ সালেই দুটি ভিন্ন দেশে এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান যৌথভাবে আয়োজন করেছিল সে আসর। এবার প্রথমবারের মতো একই সঙ্গে দুই মহাদেশে বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে। কারণ রাশিয়া একই সঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের মধ্যে পড়েছে।

১৩. ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে ম্যাচ শেষে জার্সি বদল নিষিদ্ধ ছিলো। খেলোয়াড়দের বুক উন্মুক্ত হয়ে যেতো বলেই এই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিফা।

১৪. প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটি খেলেছিল স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। ১৮৭২ সালে। কিন্তু বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে স্কটল্যান্ডের সময় লাগে ৮২ বছর। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপে সুযোগ পায় তারা। আর ইংল্যান্ডের সুযোগ পেতে সময় লাগে ৭৮ বছর। ১৯৫০ বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নেয় দলটি। প্রথম ম্যাচেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ০-১ গোলে হারে তারা। যদিও ইংলিশ মিডিয়া এটা মানতে নারাজ। তাদের দাবি ইংল্যান্ড আসলে ম্যাচটি জিতেছিল ১০-১ গোলে। ভুলবশত ছাপা হয় ০-১!

১৫. ফাইনালে ৩ গোলের ব্যবধানই সর্বোচ্চ জয়। আর এই তিনবারের সঙ্গেই যুক্ত ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালে ফাইনালে সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় তারা।  আর ১৯৭০ সালে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারায় দলটি। বড় ব্যবধানে দুইবার জিতলেও একবার হারও দেখে তারা। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হারে দলটি।

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

Talks with IMF: Consensus likely on exchange rate, revenue issues

The fourth tranche of the instalment was deferred due to disagreements and now talks are going on to release two tranches at once.

12h ago