‘বছরের পর বছর আমার প্রাপ্য সম্মান কেড়ে নেওয়া হয়েছে’
ঢাকাই চলচ্চিত্রে বর্ষীয়ান অভিনেতা ফারুকের খ্যাতি রয়েছে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে। ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য যুগ্মভাবে আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে ‘সুজন সখী’-খ্যাত এই অভিনেতার সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের।
ডেইলি স্টার অনলাইন: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ফারুক: গণমাধ্যম থেকেই বিষয়টি জেনেছি, এটি অনেক বড় সম্মানের। তবে এখানে একটি ‘কিন্তু’ রয়েই যায়। মানুষের জীবনে সব প্রাপ্তির আনন্দ একরকম হয় না। যখন থেকে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছি, তখন থেকেই এর বাইরে অন্য কোনো কিছুই নিয়ে ভাবিনি। বুকের ভেতর শতভাগ দেশপ্রেম নিয়ে এই অঙ্গনে কাজ করেছি। কিন্তু কী পেয়েছি? যতটুকু কাজ করেছি তার তুলনায় কোনো স্বীকৃতিই তো পাইনি। শুধু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এ ভালোবাসার শক্তিতেই আজ অব্দি চলছি। তাই নতুন এ প্রাপ্তি আমার কাছে খুব একটি আনন্দ নিয়ে আসেনি।
ডেইলি স্টার অনলাইন: তবে কী এই সম্মাননা পেয়ে আপনি আনন্দিত হননি?
ফারুক: বারবার একটি প্রশ্ন আমাকে ভাবাচ্ছে- কর্তৃপক্ষ কেনো আমাকে এতো বড় সম্মাননা দিচ্ছেন? এটি তো আমার জন্য সম্মান না, পুরনো ক্ষতে আবার আঘাত দেওয়ার মতো। যেন আমার পুরনো যন্ত্রণা আবার জেগে ওঠে! এখন চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক কিছুই হচ্ছে। আমি শুরু থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। আমার মনে হচ্ছে আমার কণ্ঠ স্তব্ধ করতেই তারা এটি করছেন। তাও আবার এই পুরস্কারটি দুজনকে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে!
ডেইলি স্টার অনলাইন: দুই ভাগ করে দেওয়ার কারণেই কি এই রাগ-অভিমান?
ফারুক: এটি জাতীয় সম্মাননা। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যিনি এই সম্মাননা পাবেন অবশ্যই তিনি সম্মানিত হবেন। আমার মনে হয়েছে, এটি এককভাবে দিলে আরও ভালো হতো। এটি যৌথভাবে নিতে হচ্ছে কেন? যদি এটি কাউকে এককভাবে দেওয়া হতো তা হলে ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হতো। আমার আগের কর্মের কোনো মূল্যায়ন নেই। এখন সম্মাননা নিয়ে কী হবে?
ডেইলি স্টার অনলাইন: জাতীয় পুরস্কারে বরাবরই স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠে থাকে। আপনার কী মনে হয়?
ফারুক: জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে যে স্বজনপ্রীতি হয়- এর ভুক্তভোগী আমার চেয়ে বড় আর কেউই নেই। সবচেয়ে বেশি স্বজনপ্রীতির শিকার হয়েছি আমি। বছরের পর বছর আমার প্রাপ্য সম্মান কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সব মুখ বন্ধ করে সহ্য করে গেছি। কখনও নীতির বাইরে যাইনি। বারবার বলবো, ভবিষ্যতে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে যেন রাজনীতি আর স্বজনপ্রীতি না হয়।
ডেইলি স্টার অনলাইন: বছরের পর বছর প্রাপ্য সম্মান পাননি। বিষয়টি একটু বিস্তারিত বলবেন কি?
ফারুক: আমার অভিনীত চলচ্চিত্র ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘মিয়াভাই’, ‘সারেং বৌ’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘মাটির মায়া’, ‘সখী তুমি কার’, ‘ঝিনুক মালা’-সহ প্রায় ১৯টি ছবি রয়েছে, যেগুলোতে যে কোনো বিচারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার আমি পেতে পারতাম। কিন্তু, আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি এখনকার প্রজন্মকে- আমার ছবির সঙ্গে যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের ছবি মিলিয়ে দেখলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।
Comments