মেয়েরা এখন অনেক বেশি সচেতন

Bitopi Das Chowdhury
বিটপী দাশ চৌধুরী, কান্ট্রি হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ; ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

আনন্দধারা: আন্তর্জাতিক একটি ব্যাংকে অনেক বড় একটি পর্যায়ে আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। এই অবস্থানে আসার শুরুটা আপনার কীভাবে হয়েছিল?

বিটপী দাশ চৌধুরী : গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এন্ট্রি লেভেল থেকেই আমি কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষদের সমান এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের থেকে বেশি পরিশ্রম করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। এটা আমি মেনে নিয়েছি কারণ বাংলাদেশে তো বটেই, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও একই কাজের জন্য পুরুষদের থেকে নারীদের মূল্যায়নটা কম হয়। একই মূল্যায়নের জন্য নারীকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আমি আমার নারী সহকর্মী এবং আমার মেয়েকেও বলি, তুমি যদি তোমার কাজের প্রতি শতভাগ প্রতিশ্রুতিশীল থাক,  এবং নিজের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ কর, তাহলে একজন পুরুষের সঙ্গে তোমার কোনো পার্থক্য নেই। তুমি পুরুষদের থেকে বরং বেশি ভালো করতে পার।

আনন্দধারা : এইপথ পাড়ি দিতে কোনো বাধার সম্মুখীন কি হয়েছেন?

বিটপী দাশ চৌধুরী : কিছু ব্যাপারতো থাকেই। আমি বাংলাদেশে বড় হয়েছি। এখানে পথে-ঘাটে নারীদের নিরাপত্তা কম, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নারীদের যাতায়াতে অসুবিধা এবং হয়রানিও হতে হয় অনেক সময়। এখানে একটা ছেলে যেখানে যেকোনো বিষয় নিয়ে এগোতে পারে, সেখানে একজন মেয়ের জন্য অনেক বিষয় নিয়েই এগোতে গেলে বেশি ঝুঁকি নিয়ে এগোতে হয়।

আনন্দধারা : নারী দিবস নিয়ে আপনি কী ভাবেন?

বিটপী দাশ চৌধুরী : নারী দিবস শুধু বছরের একটি দিন কেন হবে, এটা আমার ভেতরে জাগা একটা প্রশ্ন। প্রতিটি নারীর নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য প্রতিদিনই সবার সহযোগিতাই প্রয়োজন। এরমানে এই না যে, নারীরা পুরুষদের সহযোগিতা ছাড়া এগোতেই পারবেনা। আবার এমন ও না যে, পুরুষদের সহযোগিতা ছাড়াই তারা এককভাবে এগিয়ে যাবে। একজন পুরুষের উন্নতির পেছনে যেমন ভাবে নারীর সহযোগিতা থাকে, তেমনিভাবে একজন নারীর উন্নয়নের পথেও পুরুষদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সেটা হতে পারে বাবা, ভাই, বন্ধু, সহকর্মী বা অন্য যেকেউ। নারীদের বিষয় নিয়ে কথা বলা বা তাদের অধিকার নিয়ে সবাইকে আরো বেশি সচেতন করার জন্য যদিও একটি দিনকে নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু আমার মনে হয় এটার জন্য একটাদিনই শুধু নারীদের জন্য নির্দিষ্ট রাখা উচিতনা।

আনন্দধারা : আপনার দৃষ্টিতে নারীদের অগ্রগতি কতটা হয়েছে?

বিটপী দাশ চৌধুরী : আমার চারপাশে আমি অনেক নারীকেই দেখছি,  যারা অনেক বড় পর্যায়ে কাজ করছেন। এখন ভালো ফলাফলসহ অনেক মেয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করছে। ফলে কাজের ক্ষেত্রে এন্ট্রি লেভেলে আমরা অনেক মেয়েকে পাচ্ছি। অনেক কোম্পানির সিইও,  সিএফও থেকে শুরু করে বোর্ড অব ডিরেক্টরেও নারীরা রয়েছেন। সবমিলিয়ে বলা যায়,  নারীরা চ্যালেঞ্জটা নিতে পারছেন, তারা জ্যেষ্ঠ পদগুলোতে যেতে পারছেন। তবে এটা ঠিক, বিয়ের পর বা সন্তান নেয়ার পর অনেক নারীই নিজের কাজ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রেখে দেন, যাতে তার পরিবারে আরো একটু বেশি সময় দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা চাকরিও ছেড়ে দিচ্ছেন। এটা অবশ্য অবস্থানগত কারণে নিজস্ব পছন্দেরও একটা ব্যাপার থাকে। আমি যে সময়ে চাকরি করতে শুরু করেছি, সে সময়ের তুলনায় বলতে গেলে এখন অনেক বেশি নারী কর্মক্ষেত্রে আসছেন। পড়ালেখার ব্যাপারেও আমাদের দেশের মেয়েরা এখন অনেক বেশি সচেতন, তারা অনেক উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছে। নিজেদের এই পরিশ্রম বেশির ভাগ মেয়েই কাজে লাগাচ্ছে,  সেটা চাকরি করেই হোক কিংবা নিজের স্বাধীন ব্যাবসার ক্ষেত্রেই হোক। এটাকে আমি অবশ্যই সাধুবাদ জানাই।

Comments

The Daily Star  | English
IT parks in Bangladesh

IT parks drained away hefty funds

The former ICT state minister, Zunaid Ahmed Palak, had boasted in 2016 that sprawling IT park in Kaliakoir would employ up to a million people over 10 years.

13h ago