নারায়ণগঞ্জে শামীম-আইভী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ

নারায়ণগঞ্জে শামীম-আইভী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ

হকার বসানো ও উচ্ছেদ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমান ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর অনুসারীদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষে মেয়র আইভী, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি শরীফউদ্দিন সবুজ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শহরের সভাপতি জুয়েল হোসেন সহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রচুর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ। সংঘর্ষের সময় শামীম ওসমান ও আইভী দুইজনই সড়কে ছিলেন।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে গত কয়েকদিন ধরেই এমপি শামীম ওসমান ও আইভী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। সর্বশেষ সোমবার বিকেলে সমাবেশ করে শামীম ওসমান। তিনি ঘোষণা দেন হকারদের পুনর্বাসনের আগে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত হকার বসবে। কিন্তু ওই সময়ে আইভী এও ঘোষণা দেন কোনভাবেই হকার বসতে দেওয়া হবে না।

এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নগর ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র। সেখান থেকে আইভী মিছিল নিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসতে থাকেন। অপরদিকে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে হকারদের কয়েকটি গ্রুপ বিকেল সোয়া ৪টার দিকে অবস্থান নেন।

বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে আইভীর নেতৃত্বে মিছিল চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে আসে। সেখানে কয়েকজন হকারকে ফুটপাত থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। এছাড়া আইভীর মিছিলটি পুলিশও আটকে দেয়। পরে সায়াম প্লাজার সামনে ফুটপাতে মেয়র আইভীসহ তার সমর্থকেরা অবস্থান নেয়। একজন হকারকে মারধর করা হলে সে সময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

তখন শামীম ওসমানের অনুগামী হিসেবে পরিচিত চাষাঢ়া এলাকার নিয়াজুল সেখানে গেলে তাকে মারধর করা হয়। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন গেলে তাকেও মারধর করা হয়। খবর পেয়ে চাষাঢ়া থেকে আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু সহ অন্যরা এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। হকাররাও তাদের পক্ষ নেন।

সায়াম প্লাজার সামনে ব্যারিকেডে রেখে লোকজন আইভীকে রক্ষা করেন। এসময় আইভী পায়ে আঘাত পান ও প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি শরীফউদ্দিন সবুজসহ অন্তত আরও কয়েকজন আহত হন। পরে লোকজন এসে আইভীকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে নিয়ে যান।

দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময়ে উভয় পক্ষের মিছিল থেকে প্রচুর গুলির শব্দ পাওয়া যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময়ে উভয় পক্ষের লোকজন একে অন্যকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে পুরো শহরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল ও আশেপাশের দোকানপাট।

বিকাল ৫টায় চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন জড়ো হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখন আওয়ামী লীগের লোকজনদের পুলিশ ধাওয়া করলে বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে রাইফেল ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসেন শামীম ওসমান। পুলিশ সরে গেলে শামীম ওসমান লোকজন নিয়ে চাষাঢ়ায় হক প্লাজার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে হকার ও লোকজন শামীম ওসমানকে নালিশ জানান।

শামীম ওসমান বলেন, আমি এর বিচার আল্লাহকে দিব। আমাদের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। আমাদের প্রচুর লোকজনদের মেরে আহত করা হয়েছে। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেইনি।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইভী বলেন, ‘আমরা শান্ত নারায়ণগঞ্জ চাই। আমি শান্তিপূর্ণভাবে লোকজনদের নিয়ে ফুটপাত দিয়ে চাষাঢ়া গিয়েছি। কিন্তু সেখানে বিনা উস্কানিতে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। নিরীহ লোকজনদের মারধর করা হয়েছে। শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাবে থেকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার লোকজন একের পর এক গুলি করেছেন। প্রশাসনের সহযোগিতায় নিরীহ মানুষের উপর হামলা করেছেন। আমি ডিসি ও এসপির প্রত্যাহার চাইছি।’

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের  মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, ‘আহত ৩০ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ খানপুর এলাকার ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার মো. সরোয়ার বলেন, ‘চার জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহতরা হলেন সবুজ, রাশেদুল, পলাশ, জুয়েল। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে।’

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন বলেন,  মেয়র সমর্থকদের সঙ্গে হকারদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। তবে কত জন আহত হয়েছেন জানা নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো পক্ষ নেইনি। আমরা ঘটনাস্থলের মাঝখানে অবস্থানে ছিলাম এবং আমরা চেষ্টা করেছি কেউ যেন কারো উপর হামলা না করতে পারে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ বেশ কিছু রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। তবে সেটা সংখ্যায় কত আমরা এখনও হিসাব করিনি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার মতো আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Mindless mayhem

The clashes between students of three colleges continued yesterday, leaving over 100 injured in the capital’s Jatrabari.

6h ago