নিউ ওয়েভ সিনেমার কারিগরেরা

নিউ ওয়েভ সিনেমার কারিগরেরা
বা থেকে মেজবাউর রহমান সুমন, গাওসুল আলম শাওন, রাফি হোসেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, নুরুল আলম আতিক, অমিতাভ রেজা ও অনিমেষ আইচ। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ডুব সিনেমা নিয়ে ‘আনসেন্সরড উইথ রাফি হোসেন’ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন নিউ ওয়েভ সিনেমার  বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য  কারিগর। যাদের হাত ধরেই বাংলা সিনেমার নতুন একটা দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ডুব’ সিনেমা নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত মতামতসহ বর্তমান সিনেমার বিভিন্ন বিষয়-আশয় নিয়ে তুমুল আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন- নুরুল আলম আতিক, অনিমেষ আইচ, অমিতাভ রেজা, গাওসুল আলম শাওন, মেজবাউর রহমান সুমন ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সঞ্চালনায় ছিলেন আনন্দধারা সম্পাদক রাফি হোসেন

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

রাফি হোসেন : আজকে আমাদের সঙ্গে আছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ডুব সিনেমা দিয়ে সম্প্রতি তিনি ঝড় তুলেছেন। সঙ্গে রয়েছেন একঝাঁক মেধাবী নির্মাতা- লেখক গাওসুল আলম শাওন, মেজবাউর রহমান সুমন, অনিমেষ আইচ ও নুরুল আলম আতিক। তারা ডুব নিয়ে বলবেন। আমার কাজটা আরো সহজ হয়ে যাবে। সরয়ারের সমসাময়িক অনেকেই এখানে রয়েছেন। আমার কাছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ডুব তার ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে। অনেকেই হয়তো এখানে অন্যমত পোষণ করতে পারেন। শুনব সবার মতামত।

নুরুল আলম আতিক : সরয়ারকে প্রথমে ধন্যবাদ ডুব-এর মতো একটা ছবি আমাদের উপহার দেয়ার জন্য। ছবি নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে অনেক। ওর এই কাজটা সুসম্পন্ন একটা চেহারা দিয়েছে। ডুব ছবিতে একটা সারল্য আছে, যা আমাকে খুব টেনেছে।

গাওসুল আলম শাওন : আমিও একমত, এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, ফারুকীর সবচেয়ে ভালো কাজ ডুব। এটা আমাদের দেশের জন্য খুব ভালো খবর। এটা দরকার ছিল। আমরা তো নানারকম ছবি দেখতে চাই। এর মধ্যে আরেকটা যোগ হলো ডুব। যে ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে সেখানে আমরা আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক পাচ্ছি, এখন ডুব পেলাম। সামনে ‘হালদা’, ‘স্বপ্নজাল’ পাব। এটা একটা দারুণ খবর। একটা টাইমলাইন দাঁড়াচ্ছে। এটা কিন্তু খুব ভালো খবর। ডুব ছবিটা দেখে মগজে কিন্তু একটা আলোড়ন হয়।

অমিতাভ রেজা : আমার কাছে ডুব ছবিটা একেবারে ন্যাচারাল মনে হয়েছে। এটা কিন্তু আমি তাকে বলেছি। একেবারে ন্যাচারাল একটা ছবি তৈরি করেছে সে।

অনিমেষ আইচ : একটা ছবি দেখতে গেলে ভালোলাগা-মন্দলাগা থাকবে। বিরক্ত লাগলেও তার ডালপালা মেলবে। ডুব ছবি দেখতে দেখতে ছোটখাটো ভুল আমার চোখে পড়েছে। কিন্তু আমি সেটা ধরিনি, কেননা ডুব ছবিটা আমার ভালো লেগেছে। কেন ইরফান খান উর্দু-হিন্দি টোনে কথা বলছে, এসব দেখতে যাইনি। আর হুমায়ূন আহমেদকে মাথায় রেখে ছবিটা কিন্তু দেখতে যাইনি। একটা জার্নি দেখতে গেছি।

মেজবাউর রহমান সুমন : ডুব ছবিটা দেখার পর একটা প্রেশার অনুভব করছি। যেহেতু আমি এখনো ছবি বানাইনি। এখানে সবাই ছবি বানিয়েছে। আমি দেখি সবাই গালিগালাজ শোনে। ভালোও শোনে। আসলে একটা প্রেশার অনুভব করি। যখন আমি ছবিটা বানাতে যাব তখন আমার চেহারা, আমার ছবির চেহারাটা কেমন হবে। ডুব দেখে আমার মনে হয়েছে আমাদের যে শিলাপথ, যে পথে আমাদের হাঁটা উচিত, সেই পথের একটা যাত্রা। ফেসবুকে আমি একটা স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম, দুটো ধারা আছে যা আমাদের পেছন থেকে টেনে ধরে, সেই ধারা আর নেই। এটা সামনে নিয়ে যাওয়ার ধারা। আমরা এখানে যারা বসে আছি কিংবা এর বাইরে যারা আছেন, তারা সামনের দিকে নিয়ে যেতে চাই ছবিকে। ডুব ছবিটা আমরা কয়েকজন মিলে দেখতে গিয়েছিলাম। বিরতির সময় আমরা গল্প করছিলাম খুব সুন্দর এগোচ্ছে। অন্য ছবি দেখে আমার তেমন হয় না, যেটা ডুব দেখে হয়েছে। এটার সিনেমাটোগ্রাফি, সংলাপ, যেভাবে চরিত্রগুলো গল্পের ভেতর ঢুকছিল। যদি আলাদাভাবে বলি সিনেমাটোগ্রাফি, গল্প বলার ভঙ্গিমা দারুণ। আমারও একই মত, ফারুকী ভাইয়ের সবচেয়ে ভালো কাজ ডুব সিনেমাটি।

রাফি হোসেন : এবার মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর কাছে শুনি তার কথা।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : প্রথমে আমি রাফি হোসেনকে ধন্যবাদ জানাই এতগুলো মানুষকে একসঙ্গে হাজির করার জন্য। একদিন হয়তো আমরা থাকব না, কিন্তু আজকের আড্ডার এই বিষয়টা রেফারেন্স হিসেবে থেকে যাবে। আমি যদি আমার ব্যক্তিগত কথাটা বলি তাহলে বলতে হয় আমার ফিল্ম মেকিংয়ে আসা হতো না যদি আতিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব না হতো। একসময় আমি খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। প্রস্তুতি চলছিল চাকরিতে ঢুকব। তখনো ঢুকিনি, তার কারণ আতিকের প্রতি আমার একটা নিষিদ্ধ টান ছিল। আতিক না থাকলে সত্যি এখন আমি চাকরিই হয়তো করতাম। খুব ফেডআপ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি তখন মিথ্যা করে ওকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা গল্প বলতাম। রিকশায় যেতে যেতে বলতাম, একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছি, শুনবি। ও বলত বল, তখন আমি বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতাম। তখন শাহবাগে এসে কিছু অপকর্ম করতাম। রিকশা ভ্রমণ করতাম। এখানে-ওখানে যেতাম, উদ্যানে যেতাম। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা করে গল্প বলতাম। এটা ছিলো আমার সিনেমার ক্লাস। দেখতে দেখতে অনেক বছর হয়ে গেল, প্রায় ২৫ বছর তো হবে। তখন আমাদের স্বপ্ন কী ছিল, আমরা গল্প বলতে চাই।  নিজের মতো পরিবেশন করতে চাই। তারপর আস্তে আস্তে অমিতাভের সঙ্গে পরিচয় হলো। সুমন, অনিমেষ এদের চিনলাম। শাওনসহ আরো অনেকের সঙ্গে পরিচয় হলো। আমরা আসলে নিজের মতো করে গল্প বলতে চেয়েছিলাম। এদের মধ্যে প্রথম দলচ্যুত হলাম। কেননা অনেকেই তখন বলত, আমরা শুধু সেলুলয়েডে কাজ করব টেলিভিশনে কাজ করব না। এদের মধ্য থেকে বেরিয়ে গিয়ে টেলিভিশনে কাজ করা শুরু করলাম। আতিক এটাতে মনক্ষুণ্ন হবে এটা জানতাম। ফারুকী এটা করছে। একটা সময় শুনলাম আতিকও টেলিভিশনের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখছে। আবার তার কাছে যাওয়া শুরু করলাম। কেন এত কথা বলছি, আজকের আয়োজনটা একটা নস্টালজিক ব্যাপার। অমিতাভের ‘একটা ফোন করা যাবে প্লিজ’ দেখার পর আমার সহকারীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম এটা নিয়ে। আমি আর নিতে পারছিলাম না বিষয়টা। খুব ছুঁয়ে গেছিল আমাকে। আমার মনে হয়েছিল এটা কেন আমি বানালাম না। অনিমেষ, সুমনের অনেক কাজ দেখে আমার এমন অবস্থা হয়েছে। এটার মানে এই নয় যে, আমি হীনম্মন্যতায় ভুগছি। একটা চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে যায়। আমরা কিন্তু প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজ দেখে ইনস্পায়ার্ড হয়। তখন মনে হয়, আমাকে একটা ধাক্কা দিতে হবে। আমার মনে আছে ‘চতুর্থ মাত্রা’ দেখার পর মনে হয়েছিল একটা ধাক্কা দিতে হবে। আমি সবসময় বলি, আমাদের সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা যদি আমরা কাজে লাগাতে না পারি তাহলে কিন্তু সমস্যা। যে কোনো জাতির জীবনে বাঁক সব সময় আসে না। তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম ভাইয়ের সময়ে একটা দারুণ ট্রেন্ড ছিল। তারা মেইনস্ট্রিম ছবিতে কী করতে পেরেছে, সেটা বড় কথা না। তারা একটা বীজ তৈরি করে গেছে। ওই মুভমেন্টের এটাই কাজ ছিল। এটুকুই দরকার ছিল। একসঙ্গে তো কেউ সব করতে পারে না। আমাদের এই সময়ে টেলিভিশন মাধ্যমে আমরা গল্প বলার একটা পরিবর্তন এনেছি। এখানে কিন্তু ফুলের বিছানা ছিল না। অনেকে গালিগালাজ করেছে আমাদের। এখানে যারা আছি বা এর বাইরে যারা আছে, তারা যদি নিজেদের গল্প বলি অনেক ভালো কিছু সম্ভব। আমি যদি সমসাময়িক ফিল্ম মেকারদের কাছে ভালো কিছু শুনি, তাহলে আমি ইমোশনাল হয়ে যাই। অমিতাভ, আতিকসহ সবাই ছবি দেখে তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়। আজকের এই আয়োজনটা সত্যি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে, যেদিন আমরা কেউ থাকব না। আমাদের পরে যারা আসছে তারা যখন নিজেদের গল্পটা নিজের মতো করে বলবে, এটা যদি বলতে পারে তাহলে বাংলাদেশে নিউ ওয়েব তৈরি হতে খুব বেশি দিন লাগবে না। আমরা যে ধরনের গল্প বলতে চাই, সেই ছবি দেখার মতো লোকও কিন্তু আছে। যদি এক কোটি টাকা লাগে একটা ছবি তৈরি করতে। আমার বিশ্বাস টাকাটা উঠে  যাবে। অমিতাভের আয়নাবাজি গুড ছবি, কিন্তু আমি তার মতো একটা ছবি দেখতে চেয়েছি। ছবি দেখে লো হতে চেয়েছি। আয়নাবাজি মেইনস্ট্রিম থেকে বের হয়েও মেইনস্ট্রিমের মানুষদের হলে নিয়ে এসেছে। আমি একশোবার অমিতাভকে পোক করেছি ‘একটা ফোন করা যাবে প্লিজ’-এর মতো একটা কিছু চাই তোমার কাছ থেকে। আয়নাবাজি একটা ম্যাজিক তৈরি করেছে দর্শকদের মধ্যে।

আড্ডা শেষে ফটোসেশন। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

অমিতাভ রেজা : এখন মানুষের কিন্তু চোখ অনেক খোলা। তারা এখন হালদা ছবির জন্য অপেক্ষা করছে। দেখি কী হয় ছবিটাতে। দুই বছর আগে কিন্তু এমন ছিল না। তখন হলে কেউ ‘হালদা’ ছবি দেখার জন্য অপেক্ষা করত না। গহিন বালুচর ছবির জন্য তাকিয়ে থাকত না। এটা কিন্তু অসাধারণ একটা ব্যাপার।

নুরুল আলম আতিক : আমার অবস্থাটা সুমনের মতোই। অনেক দর্শকের মুখোমুখি হওয়ার একটা ব্যাপার আছে। অনেকদিন তাদের মুখোমুখি হই না। ‘ডুব সাঁতার’ ছবির পর নিজে ডুবে আছি। যারা নতুন ছবি করবে তাদের একটা নমুনা লাগে। সরয়ার যে নিষিদ্ধ টানের কথা বলছিল। এটা আসলে ছিল পজেটিভ স্বপ্নের চালাচালি। নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতে চেয়েছিলাম। সেটা কিন্তু এখন পার হয়ে এসেছি আমরা। আমি কিন্তু সরয়ারের বন্ধু কিন্তু আবার সবচেয়ে শত্রু। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে, ডুব ছবিটা নতুন একজনের জন্য নমুনা হয়ে থাকবে। সরয়ারের আগের ছবিগুলোতে একটা চ্যাংড়ামি ছিল। সেটা থেকে বেরিয়ে এসে একটা সারল্যের গল্প বলতে পেরেছে। অনেক ম্যাচিউরিটি রয়েছে ডুব ছবিতে। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার একটা জায়গা আছে ছবিটাতে। যেটাকে চ্যাংড়ামি বলছি এটা আসলে ছেলেমানুষী হবে। ডুব সব বয়সী মানুষের সিনেমা।

রাফি হোসেন : সরয়ার তোর নিজের কী মনে হয়েছে, যে ভাষায় তুই ছবি তৈরি করতে চাস সেটার পরিণতি তৈরি করতে পেরেছিস।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : খুব কঠিন একটা প্রশ্ন। আমার নিজের পক্ষে এটা বলা মুশকিল। আমরা যখন কাজ করি, তখন একটা ঘোরের মধ্যে থাকি। একেকরকম গল্পে একেকরকম ল্যাঙ্গুয়েজ ক্রিয়েট করতে হয়। আমার মনে হয় চরিত্রের কারণে হয়। এই ছবির ক্ষেত্রে পরিণতির কথা আসছে, সেটা চরিত্রের কারণে, এটা আমার ধারণা। এই ছবির চরিত্রগুলো যদি দেখি, দেখব যে হাইলি ম্যাচিউরড এবং তাদের মধ্যে প্রচ- যোগাযোগহীনতা। বাবা যা অনুভব করে মেয়েকে বলতে পারে না। মেয়ে যা অনুভব করে বাবাকে বলতে পারে না।  প্রথম স্ত্রী স্বামীকে বোঝাতে পারে না। একজন আরেকজনের সঙ্গে কমিউনিকেশনের বিরাট একটা গ্যাপ রয়েছে। যখন আমি ন্যারেশনের বিষয়টা ভাবতে থাকি তখন দেখি, তাদের মধ্যে নীরবতার নদী বয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে তাদের গল্পের সহজাতের কারণে এমন মনে হয়েছে। পরবর্তী ছবিতে হয়তো আরেকরকম ভাষা থাকবে। একই স্টাইলে গল্প বলতে চাই না। আমার মনে হয়েছে সিনেমার ক্ষেত্রে মানুষটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

মেজবাউর রহমান সুমন : সারাবিশ্বের মানুষ শিল্পের একটা জায়গায় এসে নিজেকে খুঁজে পায়। সেটা আর্টিস্ট হোক, ফিল্ম মেকার যে-ই হোক। একটা সময়ে এসে সে নিজেকে খোঁজে। এখন তো আপনি সারাবিশ্বে ঘোরাঘুরির মধ্যে আছেন। আপনার সিনেমার যে ঘোরাঘুরি, গল্পে এই দর্শনে দেখতে চাই আমার সবকিছু। এমন কি মনে হয়েছে ফারুকী ভাই? রাফি ভাই মনে হয় সেটা বলতে চাচ্ছে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : এখানে অনেক ফিল্ম মেকার রয়েছে। আমার যেটা মনে হয়েছে, প্রসেসটা অন্ধকার, অনিশ্চিত আর বিকট। খুব একা আর বিষণ্ণ লাগে।

গাওসুল আলম শাওন : আমার যেটা মনে হয়। একেকটা মানুষ একেকরকম। কিছু মানুষ কোথায় গিয়ে থিতু হবে সেটা ভাবে। আর কিছু মানুষ আছে যারা নিরন্তর এক্সপেরিমেন্টের মধ্য দিয়ে যেতে চায়। আমার যেটা বিশ্বাস, ফারুকী নিরন্তর একটা খোঁজের মধ্যে থাকে। ওর পরের ছবি দেখে হয়তো গালি দিতে পারি। কিন্তু নিশ্চিত নতুন কিছু করবে। আমার ধারণা, সুমন ওর একটা নিজস্ব ধরনের ছবিতে যাবে। ওর ছবি অনেক দূরে যাবে আমার বিশ্বাস।

অনিমেষ আইচ : আমাদের এমন একটা ধারণা আছে, ওমুক ছবিটা বানিয়েছে মানে একটা নৌকা থাকবে, নৌকাটা এমন করে যাবে আর কী।

মেজবাউর রহমান সুমন : আমি কিন্তু সাবজেকটিভ ব্যাপারটা বলিনি।

রাফি হোসেন : আমি সুমনের কথাটা হয়তো বুঝতে পেরেছি, একজন শিল্পী নিরন্তর খুঁজতে থাকেন। একটা জায়গায় গিয়ে তার পরিমিতি বোধ আসে। আমার যেটা মনে হয়েছে, সরয়ারকে যতটা চিনি এই ছবিতে কমফোর্ট ফিল করেছে, ও যেভাবে ডিল করতে চায়।

নুরুল আলম আতিক : আমি কিন্তু আগের ছবি থেকে ওকে আলাদা করতে পেরেছি। কম বয়সী মেয়েদের প্ররোচনা দেয়া নয়। স্টোরি টেলিংয়ের মধ্যে যে আয়োজন, বলার মধ্যে যে ভঙ্গি, শব্দ-নৈশব্দের গল্প। এখানে না বলা কথাগুলো রচনা করে নেয়া যায়।

মেজবাউর রহমান সুমন : আমরা শিল্পীরা কিন্তু একটা কথা বলতে চাই। এই কারণে নানা প্লাটফর্ম, নানা স্তরে ভাগ। একটা গল্পই তো পেতে হয়, এটা না হলে অন্যকিছু করতাম, ছবি আঁকতাম। যেহেতু সিনেমাটা বানাচ্ছি, এর মধ্য দিয়ে একটা কথা বলতে চাই। একটা কথা ছাড়া দুটো কথা হতে পারে না। সেই রাস্তাটা খুঁজে পাওয়া।

অনিমেষ আইচ : আমার চারুকলার এক স্যার বলতেন, তুমি যেটা ফিল করছ সেটাই আঁকো। আর্টফর্মে এটা কখন কীভাবে হয়ে যাবে কেউ জানে না।

রাফি হোসেন : সরয়ার তোর কী মনে হয়েছে, আমরা যে বাহাসটা করছি- তুই একটা রাস্তা পেয়েছিস। কী মনে হচ্ছে আসলে?

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী : অবশ্যই পেয়েছি এই গল্পে।

গাওসুল আলম শাওন : ডুব আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ভালো লেগেছে। অনেকের হয়তো তাই মনে হয়েছে। জার্নিটা অনেকখানি এগিয়ে দিল ডুব ছবিটা। আমাদের দর্শকদের রুচি গঠনে জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেটা এক-দুই বছরে হঠাৎ করে শুরু হয়েছে। মন ভালো হচ্ছে, মনে হচ্ছে আগামীকাল যেন ঈদ এমন লাগে। আমি সুমনের ছবির জন্য অপেক্ষা করছি।

রাফি হোসেন : সুমন আর কিছু বলতে চাও ডুব ছবিটা নিয়ে?

মেজবাউর রহমান সুমন : আমরা যে প্রক্রিয়ায় ছবি বানাচ্ছি সেটা রাইট ওয়ে। আমরা যে ছবি বানাচ্ছিলাম না এতদিন সেটাও রাইট ওয়ে ছিল না। পেছন দিকে টেনে ধরবে, সে ছবি আমার বানাব না এটা লাস্ট দুই বছরে প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের নিজেদের ছবিই হবে। সেখানে একটা আইটেম গানের দরকার নেই। নিজের চেহারার ছবি বানালে কোনো ভয় নেই।

অমিতাভ রেজা : এই ছবিটা আমাদের গর্বিত যৌথ প্রযোজনার ছবি বলতে পারি। এটা আমাদের ছবি। এটা পুনে-বোম্বের সিনেমা হলে চলছে। এখানে ইরফান খান আছে বলে বলছি না। আমাদের ছবি সেখানকার সিনেমা হলে শো করে আসছে। এটা হয়তো সেখানে ব্যাপকভাবে না চলতে পারে। কিন্তু আমি তো কল্পনাই করতে পারি না আমাদের ছবি বোম্বের আইনক্সে চলছে। স্বপ্ন এখন দেখতে পারি আমরা। দেখতে পাচ্ছি আমরা। এরচেয়ে বড় আর কী হতে পারে?

ছবি : শাহরিয়ার কবির হিবেল

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago