কর্কবোর্ডে অন্দরসজ্জা

ছোট্ট দু’কাঁধে ব্যাগ। হাতে পাকানো আর্ট পেপার। ঘরে ফিরেই মায়ের কাছে আবদার : ‘মা আমার এই ছবিটা দেয়ালে টানাই?’ ‘কেন নয়, নিশ্চয়ই!’ কচি মুখে গর্বের আলো ফোটে। শুধু কী ছবি? প্রতিদিন আরো কতকিছু বেরোয় স্কুল ব্যাগ থেকে। হাতে বানানো স্টিকার, লাল-সবুজ পতাকা, আঠা দিয়ে বানানো হালুমের মাথা! ভাবনায় পড়ে মা। শহুরে ভাড়াটে ফ্ল্যাটের দেয়ালে পেরেক ঠোকা যায় বলুন? কিন্তু উপায় তো খুঁজে বের করতেই হয়।

সমাধান খুব সহজ। আঁকিয়ে শিশুটির টেবিলের সামনের দেয়ালে লাগান বাদামি কর্কবোর্ড। কিংবা ঝুলিয়ে দিন শক্ত দু’পেরেকে ভর করে। চারপাশে ফ্রেম করে দিন। বোর্ডে রঙিন পুশ পিনগুলো বসানোই থাকে। শিশুটি যখনই যেমন তখনই তেমন করে সাজাতে পারবে। তার হাসি-আনন্দে ভরে যাবে ঘরের প্রতিটি কোণ।

কর্কবোর্ড ঘর সাজানোর বহুল ব্যবহৃত উপকরণ। এর ব্যবহার যেমন বহুমাত্রিক, তেমনি চমৎকার এর গঠন। ঘরের যে কোনো সজ্জায় ঠিক খাপ খাইয়ে নেয়। টেকসই হওয়ার কারণে ছড়িয়ে ফেলা রঙও মোছানো যায়। ময়লা ধোয়া যায়। সাধারণত আয়তাকার গোটানো রোল এবং টাইলস, দু’ভাবেই কিনতে পাওয়া যায় কর্কবোর্ড, যা দিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়া যায়  আপাদমস্তক। এ ক্ষেত্রে এমনভাবে দেয়ালের চারকোনায় মোড়াতে হবে যাতে একে ঘরের একটি অংশ মনে হয়। তাতে সারা দেয়ালজুড়ে নকশা বোনায় বা শিশু হাতের আঁকিবুকিতে আর কোনো বাধা থাকবে না। তাতে আপনার দেয়ালে নখের আঁচড়ও পড়বে না। নাগরিক জীবনে শব্দ দূষণের হাত থেকেও বাঁচবেন এই একটি বাদামি দেয়ালের কারণে। কারণ কর্কবোর্ডের রয়েছে শব্দশোষণ ক্ষমতা।

দেয়ালে আঁকানো ছবি ঝোলানোর মতো করে কর্কবোর্ডের দেয়ালকর্মও তৈরি করতে পারেন। তাতে লাগাতে পারেন মনমতো ছবি। বানাতে পারেন একটি রেডিমেড ফটো কোলাজের স্থান কিংবা দেয়াল জোড়া স্ক্র্যাপ বুক। যা কিনা আপনার শিশুদের বড় হওয়ার প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে। এখানে কৌশল হলো- কর্কবোর্ডের টুকরোটি কেটে ছবি আঁটার ফ্রেমে রূপান্তরিত করতে সাজাতে হবে ছবির মতো সুন্দর করে এবং তা খুবই পরিচ্ছন্ন ও সাধারণ সরলরৈখিক উপায়ে। রঙ করে নিয়ে রঙের লাইন অনুসারে কিংবা ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ছবি বসান। যেমন আপনার প্রথম পরিচয়ের সময়ের ছবি দিয়ে শুরু করুন। তারপর দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় মধুচন্দ্রিমা পর্যন্ত।

কিংবা পরিবারের সদস্যদের ৪ X৬ ইঞ্চি আকারের ছবির একটি ফ্রেম বানান কার্ডবোর্ডের টুকরো দিয়ে। আকার হবে আট থেকে বারো ইঞ্চি। তারপর ঝোলান বসার ঘরে বা প্রবেশদ্বারের পরপর।

ছবির ফ্রেম তো হলো। শিশুর ক্যানভাস, শব্দরোধী দেয়াল তৈরি ছাড়াও রান্নাঘরের সঙ্গে কর্কবোর্ডের রয়েছে চিরায়ত সম্পর্ক। কাবার্ড কিংবা দেয়ালে লাগানো কেবিনেটের কথা বলছি না। তা একেবারে গতানুগতিক আর অনেক বেশি প্রথাগত হয়ে পড়বে। আপনি কর্কবোর্ডকে রান্নাঘরের খুব জরুরি একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। রান্নাঘরের দরজায় কর্কবোর্ড লাগাতে পারেন। চুলার ঠিক ওপরে কিংবা ডানে-বামে লাগানো কেবিনেটের দরজায় আকার মতো কেটে-ছেঁটে বসিয়ে দিন! অনেক কেবিনেট নিচেও রাখেন। মাপ হবে কেবিনেটের দরজার চেয়ে ছোট, ঠিক ফ্রেমমতো। আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিন। ব্যস কাজ সারা। এবার সেখানে লাগান কোনো রান্নার রেসিপি, হাতে আঁকা ছবি আর হ্যাঁ, প্রয়োজনে মুদির দোকানের লিস্টি ঝুলিয়ে দিন। তবে হ্যাঁ, দরজায় কর্কবোর্ড লাগাতে এমন একটি দরজা বেছে নিন যাতে পরিবারের সবার হাতের নাগালে থাকে।

কর্কবোর্ড উপকরণের বড় সুবিধা হলো এর আকার। সাধারণত আয়তাকার হলেও সে আকার বজায় রেখে কাজ করতে হবে, এমন কোনো কারণ নেই। ধরুন আপনি দেয়াল বানিয়েছেন কর্কবোর্ড দিয়ে। বাড়তি অংশ দিয়েই ইউটিলিটি নাইফ দিয়ে কেটে-ছেঁটে শিশু-উপযোগী আকার গড়ে দিতে পারেন। যেমন- বিন্দু, তারা, চাঁদ, পৃথিবী, ত্রিভুজ কিংবা চতুর্ভুজ। খেলার ছলে পড়াশোনার কাজটাও চলল। বিভিন্ন আকারে কেটে বিভিন্ন ধরনের কোলাজ বানান। যেমন- সৌরজগৎ কিংবা বৃত্ত এবং বিন্দু। তারপর দু’দিকেই আঠা লাগানো টেপ দিয়ে সেঁটে দিন দেয়ালে।

শিশুর জন্য অক্ষর কিংবা নম্বর কাটুন। কেটে লাগান দেয়ালে। আর হাত আরেকটু পেকে উঠলে শিশুর প্রিয় কার্টুন চরিত্রটিই কেটে বানিয়ে দিন না! চিরচেনা কর্কবোর্ডের নিত্যনতুন ব্যবহার হোক এবার।

ছবি : সংগ্রহ 

 

Comments

The Daily Star  | English

Grameen Bank ownership, board to see major changes 

Grameen Bank, the Nobel-winning microfinance institution, is set for a major shake-up in its ownership structure and board as the government plans to reduce its stake to 5 percent from the current 25 percent.

1h ago