‘বড় খেলোয়াড়রা সুযোগ কাজে লাগান’

নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে সফরকারীরা বাংলাদেশ ও ক্রিকেটের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েন। ছবি: এএফপি

প্রায় পাঁচ মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল টেস্ট খেলার তুলনায় টি-টোয়েন্টিতে বেশি মনোযোগ দেওয়ার কারণে তাঁর কোন অনুশোচনা হয় কি?

সাকিবের তাৎক্ষণিক ও শীতল প্রতিক্রিয়া: “বাংলাদেশ যদি টেস্ট না খেলে, তাহলে লোকজন কেন বলবে যে আমি টি-টোয়েন্টিতে বেশি মনোযোগী?”

এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান যে খেদ প্রকাশ করেছিলেন তা দেখে মনে হয়েছিল তিনি এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পছন্দ করেন না। আসলে এটা সাকিবের একটা কৌশল যা তিনি ব্যবহার করেন কোন বিব্রতকর প্রশ্নের মুখোমুখি হলে।

পাঁচ মাস পর মনে হবে সাকিব সেদিন সত্য-উচ্চারণ করেছিলেন। যারা মনে করেন সাকিব গত ১০ বছরে নিজেকে সীমিত-ওভারের বিশেষজ্ঞ করে তুলেছেন, তাদের জন্য এটা একটা জবাব আর কী। গতকাল তিনি যে খেলা নিউজিল্যান্ডে দেখিয়েছিলেন তা সব তত্ত্বকে খারিজ করে দেয়।

হ্যাঁ, সাকিব এমনভাবেই খেলেন। ওয়াইড বলগুলোও মারতে দ্বিধা করেন না, যেমনটি করে থাকেন সীমিত-ওভারের খেলায়। একই সঙ্গে তিনি এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর দিকে ছোঁড়া বলগুলোকে তিনি সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দিতেই বেশি পছন্দ করেন।

নিল ওয়াগনারের সেই বিশেষ ওভারটা মনে করে দেখুন, ছয় বারই সাকিব এগিয়ে এসে বল মেরে ছিলেনে। শুধু তাই নয়, বল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সীমানার বাইরে। এমন আগ্রাসী ও নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টার ফলে এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ২১৭ রানের স্কোরে পৌঁছোতে পেরেছেন। আর এখন পর্যন্ত এটাই কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের টেস্টে সর্বোচ্চ স্কোর।

গতকালের ইনিংসটি খেলার পথে সাকিবকে পার হতে হয়েছে নানা বাঁধা-বিপত্তি, আর এটিই তাঁর মতে এই অনন্যসাধারণ ইনিংসের অন্যতম অংশ।

সাকিব বলেন, “সত্য বলতে কী, গতকাল যখন আমার ক্যাচটি মিচেল স্যান্টনার ফেলে দিলেন, হোটেল রুমে ফিরে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছিলাম। ও একটু একটু করে ক্রিকেট বুঝতে শুরু করেছে। তাঁর কোন কথার উত্তর আমি দেইনি। কিন্তু মনে মনে এক ধরণের আত্মবিশ্বাস তৈরি হচ্ছিল। ভাবছিলাম, বড় খেলোয়াড়েরা তো এমন সুযোগ কাজে লাগিয়েই বড় স্কোর করেন।”

“এছাড়াও, আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল। অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে পরিতৃপ্তির বিষয়টি হলো আমি সেই কঠিন পরিস্থিতির অনেক কিছুই উতরে নিয়ে এই ইনিংসটি সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি।”

সাকিব ও মুশফিকুর রহিমের মিলিত ৩৫৯ রানের জুটির অন্যতম দিক ছিল একের পর এক রেকর্ড ভেঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। আর এজন্যই দ্বিশতক অর্জনের মাইলফলক পার হওয়ার পরও সাকিব আবেগে ভেসে যাননি। গত বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ যারা দেখেছেন তারা বলবেন যে বিপিএল শিরোপা অর্জনের পরে সাকিব এর থেকে দশগুণ বেশি উল্লসিত ছিলেন।

“আমি জানি না কেন আমি বিষয়টি তেমন উদযাপন করিনি। আমার আসলে উদযাপন করার কথা মনেই হয়নি। আমি শুধু ভাবছিলাম, একটি অর্জনের পরে আরও বড় অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার কথা।”

“ইনিংসের শেষের দিকে আমি বেশ ক্লান্ত বোধ করেছিলাম। কিন্তু সত্য কথা হলো, যদি খেলাটি গ্রীষ্মকালে এশিয়া অথবা বাংলাদেশে খেলতে হতো তাহলে এর থেকেও খারাপ অবস্থায় পড়তাম। এখানে তো আমি ২১৭ রানের স্কোর করার পরও একবারের জন্যও গ্লাভস বদলাইনি।

তামিম ইকবালের ২০৬ রানের রেকর্ডটি ভেঙ্গে ফেলার পরও সাকিবকে কোন উল্লাস করতে দেখা যায়নি। সাকিবের আগে ওটাই ছিলো কোন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। সেটার অবশ্যই অন্য একটি কারণ আছে।

সাকিব জানান, “আমি ভেবেছিলাম তামিম ২০৬ নয় ২১৪ রানের স্কোর করেছিল। কিন্তু যখন আমি সিঙ্গেল নিতে দৌড় শুরু করলাম, তামিম হাত তালি দিতে শুরু করল। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সেটাই ছিল সর্বোচ্চ স্কোর।”

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

15h ago