আমাদের যত রকমের ফেসবুক বন্ধু

ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক এখন নিত্য দিনের একটা অংশ। আমরা সবাই মিলে মোটামুটি একটা ‘ফেসবুকসমাজ’। আশে-পাশে দেখলে খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন না। এখন আমাদের অবস্থা হলো কেউ ভালো রেজাল্ট করুক, কিংবা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করুক কিংবা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাক – এসব অনেক খবরই এখন ফেসবুকে পাওয়া যায়। আমাদের সবার ফেসবুক বন্ধুর তালিকায় আছেন নানান ধরণের মানুষ।এদের প্রকারভেদ করা যেতে পারে:

. বিন্দাস জীবনযাপন যাদের: এই ধরণের বন্ধুরা সবচেয়ে কমন। আপনার এই বন্ধুদের টাইমলাইন দেখলে মনে হয়, এদের জীবন একটি ফুর্তির কারখানা। প্রায় প্রতিদিন এদের দেখবেন বাইরে খাচ্ছে এবং চেকইন দিচ্ছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ছবিও পোস্ট হলো। আপনি যখন অফিসে কাজের চাপ নিতে পারছেন না, তখন এই বন্ধুরা কনসার্টে গিয়ে সেলফি দেয়, না হলে বারবিকিউ পার্টির ছবি পোস্ট করে। শুধু কি তাই, এরা কয়েকদিন পর পর আবার শহরের বাইরে বা দেশের বাইরেও বেড়াতে যান – এক কথায় বললে, হিংসায় গা জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো এদের কারবার।

. সেলফি-কুলফি বন্ধু: এই বন্ধুদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।এরা প্রতিদিন কারণে-অকারণে সেলফি পোস্ট করে।এদের মুখ বাঁকানো, রং মাখানো সেলফিতে আপনার হোমপেজ ছড়াছড়ি। একই রকমের একাধিক ছবি এরা একসাথে পোস্ট করতেই থাকেন, এবং আপনি যদি এদের প্রতিটি ছবিতে লাইক না দেন, কিংবা 'সুন্দর লাগছে' বলে কমেন্ট না করেন তাহলে এরা খুবই কষ্ট পায়। অনেক সময় লাইক বাড়ানোর জন্য এরা নিজেদের এসব ছবিতে আপনাকে ট্যাগ করে দেয়। এসব বন্ধুরা সাধারণত মেয়ে হলেও, আজকাল ছেলেরাও কম যাচ্ছে না। এদের প্রেমে অন্যরা কি পড়বে, এরা নিজেরাই নিজেদের প্রেমে হাবুডুবু খায়।

. বন্ধুতালিকার শার্লক হোমস: এরা ভয়াবহ! কারণ এরা আপনার সকল ‘দুই-নম্বারি’ ধরে ফেলবে। আপনি কি মনে করেন, একদিন পেট ব্যাথার দোহাই দিয়ে অফিস না গিয়ে যদি ডেটিংয়ে চলে যান তাইলে আপনি কোনোদিন ধরা পড়বেন না? আপনার মা এবং আপনার বস – উভয়ই শার্লক হোমস! চাইলেও আপনি লুকাতে পারবেন না – গর্তে ঢুকে বসে থাকলে, সেখান থেকেও এরা টেনে বের করে ফেলবে। (বি: দ্র:) এই ধরণের বন্ধু এবং তাদের গোয়েন্দাগিরিতে আমি পড়েছি - সেও এক ইতিহাস।

. অন্ধ ভক্ত: এরা আপনার অন্ধ ভক্ত।আপনি একটা ছবি পোস্ট করার সাথে সাথে দেখবেন এরা বুলেটের গতিতে রি্-অ্যাকশন দিবে, এবং খুব তেল মারা কমেন্ট করবে। এরা লাইক দিয়েই খ্যান্ত দেবে না, মাঝে মাঝে গভীর রাতে আপনাকে মেসেঞ্জারে নক করে আলাপ জুড়িয়ে বসবে। হয়তো এক পর্যায় অতি আবেগী হয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসবে।

. বিজ্ঞ বন্ধু: সকল বিষয়ে আপনার এই বন্ধুটির একটি মন্তব্য থাকবেই। শুধু তাই না, নিজের মন্তব্যটি যে সঠিক, এবং পৃথিবীর সকল মানুষ যে বেঠিক – সেটি প্রমাণের চেষ্টায় এরা মোটামুটি সবার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান। তর্ক এক পর্যায় বিশ্রী ঝগড়ায় পরিণত হয় এবং আনফ্রেন্ড বা ব্লক পর্যন্তও গড়ায়।

এছাড়াও, আপনার ফেসবুকে আছেন কবি-সাহিত্যিক বন্ধু, যাদের প্রোফাইল ভর্তি সুন্দর সব স্ট্যাটাস; আছেন সেলিব্রিটি – যাদের ফোলোয়ারের সংখ্যা আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের চেয়েও বড়ো; আছেন ফটোগ্রাফার – যারা সবার ছবি সুন্দর করে তুলে দেয় কিন্তু আপনার ছবি তুলে দেয় না; আছেন আপনার ক্রাশ – যার নামের পাশে সবুজ বাতি দেখলেই আপনার মনের ঘন্টা বেজে ওঠে এবং আরো আছেন একদল মানুষ যাদের জীবন অনলাইন শপিংয়ে সীমাবদ্ধ। তারপরেও সবাই বন্ধু – আপনারই বন্ধু – প্রিয় পাঠক, আপনি কেমন ফেসবুক বন্ধু?

Comments