ব্যস্ততায় মাঝে মাঝে অনেক কিছু ভুলে যান এখন

নূর ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে। তাকে আমি দেখেছি নানাভাবে। এমনিতেই আমার সঙ্গে কারো হঠাৎ করে খুব ঋদ্ধতা তৈরি হয় না। আর নূর ভাইও ছিলেন একটু চুপচাপ প্রকৃতির। তাই নূর ভাইয়ের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তেই হয়েছে। তিনি কবিতা, নাটক, রাজনীতি এসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও নিজেকে কখনো সেভাবে তুলে ধরেননি। যার কারণে তিনি যখন নাগরিক নাট্যদলে যোগ দিলেন, তখন তার সম্পর্কে খুব একটা জানতেও পারিনি। হুমায়ূন আহমেদের অয়োময় নাটকে কাজ করতে গিয়ে তার সম্পর্কে জানতে শুরু করেছি। আর সবচেয়ে বেশি তাকে জানলাম যখন অফিসে একসঙ্গে কাজ করেছি। তাকে যখন জানা শুরু করলাম, তখন থেকেই আমার মনে হলো, নূর ভাই অনেক পরিশ্রমী আর বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। পরিশ্রমী, বুদ্ধিদীপ্ত, রাজনীতির সুবাদে দেশকে জানা, অমায়িক ব্যবহার সব মিলিয়ে তিনি ধীরে ধীরে আমার কাছে একজন ইন্টারেস্টিং ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। আমি তখন মনে মনে চিন্তা করতাম, আমিও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাকে আরো ভালো করে জেনে নেব। এভাবেই একসময় আমি তাকে একজন খুব ভালো বন্ধু হিসেবে পেলাম। তিনি আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন। অভিনয়ের সময় বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমি আর নূর ভাই প্রথমে আলাদা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। আমি রিসার্সে কাজ করতাম আর নূর ভাই ছিলেন এশিয়াটিকে। পরে এসে একসঙ্গে যখন এশিয়াটিকে কাজ শুরু করলাম তখন তার সহযোগিতা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। যখন আফগানিস্তানে ইউনিসেফের কাজ করেছি, তখন অনেক সময়ই যেতে পারতাম না, নূর ভাইকেই যেতে হতো। আমি বুঝতাম, তাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে।


আমরা একসঙ্গে কাজ করতে করতেই একসময় তিনি রাজনীতিতে আরো বেশি সক্রিয় হয়ে নির্বাচন করলেন। এটা একভাবে স্বাভাবিক। তিনি ’৯০-এর আন্দোলনে এত ভালো ভূমিকা রেখেছিলেন যে, এটা আর অস্বাভাবিক মনে হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। এ ছাড়াও সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্বাচনেও তিনি সহযোগিতা করেছেন। সব মিলিয়ে ব্যবসায় একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অনেক কাজই আমরা ভাগাভাগি করে নিয়েছি। একসঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে সব পরিচালকের মধ্যে এই মিলটা থাকার দরকারও আছে। আমরা চেষ্টা করেছি তাকে সাপোর্ট করতে। তিনি যে এখন মন্ত্রী হয়ে গেছেন, সেখানে অনেক সময় দিতে হয়, তবুও কিছু পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের সব সময়ই। তাকে দেখে বুঝেছি, সফলতার জন্য কোনো শর্টকাট নেই। পরিশ্রম করতে হয়, অনেক বেশি পরিশ্রম।


আবৃত্তিকার হিসেবে এবং অভিনেতা হিসেবে তিনি খুবই ভালো। কিন্তু মঞ্চ নাটকের ক্ষেত্রে তিনি খুবই নার্ভাস হয়ে যান। তিনি যতক্ষণ স্টেজে না উঠছেন ততক্ষণ ডায়ালগগুলো দেখতে থাকেন। আমাকে বলতেন, তুমি অফিস থেকে এসে সোজা মেকআপ রুমে চলে যাও। বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে, ডায়ালগ দেখে তারপর আসবে না।


এখনো মন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রচুর কাজ করে যাচ্ছেন। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অনেক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবেও সময় দিচ্ছেন। আমার মনে হয় এই অবস্থানে এসে তার আরেকটু হিসাব করে চলা দরকার। একজন দর্শকপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রীও হয়ে যাওয়াতে অনেক বেশি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নূর ভাইয়ের ওপর অনুরোধের চাপ থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি এই চাপটা কমাতে পারেন না বলে আমার মনে হয়। তার এটা একটু কমানো দরকার। অবশ্য এটাও বুঝি, সবার কাছেই তো তিনি নিজেদের মানুষ। যার ফলে কাউকে না করলে মনে কষ্ট পাবে এই ভেবে হয়তো চাপটা নিচ্ছেন। এখানে যদি তার চাপটা কম থাকে তাহলে তিনি অন্য একটা কৌশলগত কাজে আরো বেশি সময় দিতে পারতেন, যা তার এবং দেশের জন্য ভালো হতো।


নূর ভাইয়ের যে বিষয়টা খুব মজা লাগে তা হলো মাঝে মাঝে ভুলে যাওয়া। অনেক সময় দেখা যায় নূর ভাই দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় আমাকে অনেকে বলে যে নূর ভাইকে আমাদের ওমক অনুষ্ঠানে একটু অতিথি হতে বলেন। আমিও তাকে যখন এটা বলার জন্য কল দিচ্ছি, তিনিও রাজি হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সময় ঘনিয়ে এলে তিনি বলে বসেন, আমি এমন বলেছিলাম নাকি। এমন মজার অনেক ঘটনাই তার সঙ্গে হয়েছে।


আরেকটা ঘটনা মনে পড়ে। আমাদের এশিয়াটিকের অফিসের করিডোরে কয়েকটা সোফা ছিল। আমি যখন অফিসে ঢুকছি তখন দেখি সব সোফা ভর্তি লোক। সবাই বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। অনেকে অনেক অসুস্থও ছিল। নূর ভাই তাদের একজন একজন করে ডাকছেন, সমস্যা বুঝে সেই অনুযায়ী তাদের সমাধানের ব্যবস্থা করছেন। এভাবে মানুষের সেবা করতে তিনি খুব আনন্দ বোধ করেন।


সব মিলিয়ে তাকে আমি একজন ভালো বন্ধু হিসেবে পেয়েছি, যিনি তার নিজের স্বার্থ ছাপিয়ে আমার স্বার্থ দেখেছেন।

Comments

The Daily Star  | English

People didn’t sacrifice lives just for election: Asif Mahmud

The adviser stresses the need for reforms for which people came out and ousted 'fascist' Awami League government

22m ago