'ইসরায়েলি হুমকিতে আত্মসমর্পণ করবে না হিজবুল্লাহ'

হিজবুল্লাহ প্রধান নাঈম কাশেম। ছবি: সংগৃহীত
হিজবুল্লাহ প্রধান নাঈম কাশেম। ছবি: সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের পুরো সময়টিতে ইরানের মিত্র ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী একেবারেই নীরব ছিল। যুদ্ধে চলাকালীন সময়ে তাদের কোনো উপস্থিতি বা ভূমিকা তো ছিলই না, এমন কী, ওই সশস্ত্র সংগঠনটির কাছ থেকে তেমন কোনো বিবৃতিও আসেনি।

অবশেষে নিরবতা ভেঙে বক্তব্য দিয়েছেন হিজবুল্লাহ প্রধান। জানিয়েছেন, ইসরায়েলের হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছে না তার সংগঠন। 

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে দীর্ঘদিনের নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার পর নেতৃত্বভার আসে হিজবুল্লাহর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাঈম কাশেমের (৭১) ওপর।

আজ তিনি এক ভাষণে জানান, ইসরায়েলের হুমকিতে পাত্তা দেবে না হিজবুল্লাহ। অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণের আহ্বানকেও বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না হিজবুল্লাহ। 

সোমবার মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি টমাস বারাক লেবানন সফরে আসবেন। বলে নাম না প্রকাশের শর্তে লেবাননের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সফর চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ বছরের শেষ নাগাদ হিজবুল্লাহ'র নিরস্ত্রীকরণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসতে পারে।

আজ পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে নাঈম কাশেম বলেন, 'এই (ইসরায়েলি) হুমকি আমাদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করবে না।'

গত বছর ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর যুদ্ধের পর লেবাননের সশস্ত্র সংগঠনটি বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও সামরিক নেতৃত্বের বড় একটি অংশ ওই যুদ্ধে প্রাণ হারান। সে সময় থেকেই লেবাননের সরকারি কর্মকর্তারা চাইছেন হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ হোক। এতে শুধু রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর হাতেই অস্ত্র থাকবে এবং তারাই দেশের প্রতিরক্ষায় কাজ করবে। পাশাপাশি, নভেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে সাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি যাতে স্থায়িত্ব পায় এবং সব ধরণের সংঘাতের অবসান ঘটে, সে চেষ্টাও চালিয়ে গেছে বৈরুত। 

বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে হাজারো সমর্থকদের সামনে টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে হিজবুল্লাহ প্রধান নাঈম বলেন, 'হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা অস্ত্র ত্যাগ করবেন না। আগে ইসরায়েলের 'আগ্রাসন' বন্ধ হতে হবে।'

নভেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি চালু হলেও ইসরায়েল লেবাননে হামলা বন্ধ করেনি।

বৈরুতে ইসরায়েলি হামলার পর ধ্বংসস্তুপ পরিদর্শন করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফাইল ছবি: এএফপি (৩ জুলাই, ২০২৫)
বৈরুতে ইসরায়েলি হামলার পর ধ্বংসস্তুপ পরিদর্শন করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফাইল ছবি: এএফপি (৩ জুলাই, ২০২৫)

দেশটির দাবি, তারা হিজবুল্লাহর অবস্থান ও যোদ্ধাদের নির্মূলের উদ্দেশ্যে এসব হামলা পরিচালনা করছে। ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, লেবাননের সরকার হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণের জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি।

লেবাননের কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা ইসরায়েল সীমান্তের কাছে, দেশের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত ছিল, হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা ইসরায়েল সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে,  লিটানি নদীর উত্তরে পিছু হটবে।

অপরদিকে, চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাদের লেবানন থেকে সরে যাওয়ার কথা। তবে পাঁচটি 'কৌশলগত' অবস্থানে সেনা মোতায়েন অব্যাহত থাকবে।

নাঈম কাশেমের দাবি, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানছে না।

তিনি বলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে 'অধিকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে, আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং গত বছরের যুদ্ধের সময় আটক সব বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে'। পাশাপাশি, লেবানন পুনর্নির্মাণের কাজও শুরু হতে হবে। 

তিনি জানান, 'এসব শর্ত পূরণ হলে আমরা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য প্রস্তুত হব, যার মধ্যে আছে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার কৌশল।'

নাঈম আরও বলেন, হিজবুল্লাহর নিরস্ত্রীকরণ দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার অংশ হতে পারে। 

কালো পোশাকে সজ্জিত ভক্ত- সমর্থকরা নাঈমের ভাষণ শুনতে আসেন। তাদের হাতে হিজবুল্লাহর ব্যানারের পাশাপাশি লেবানন, ফিলিস্তিন ও ইরানের পতাকাও ছিল। 

কেউ কেউ প্রয়াত নেতা হাসান নাসরাল্লাহর পোস্টারও বহন করেন।

নাঈম কাশেম বলেন, 'ইসরায়েলি শত্রুর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো উদ্যোগ মেনে নেওয়া হবে না।'

এর আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার দাবি করেন, তার সরকার এ ধরণের উদ্যোগ নিতে আগ্রহী। তিনি সিরিয়ার কথাও উল্লেখ করেন।

লেবানন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

দামেস্ক জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনার 'সময় এখনো হয়নি'।

Comments

The Daily Star  | English

Rod prices hit 3-year low as construction demand dries up

Steel rod prices have fallen below Tk 90,000 per tonne for the first time in more than three years, as construction demand continues to fall amid reduced government spending and economic uncertainty..The retail price of 60-grade mild steel (MS) rod, widely used by construction sites and in

1h ago