সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে ধর্ষণ: মামলা তুলে নিতে হুমকি, বসতবাড়ি বিক্রি বাদীর

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মামলার আসামি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারের বিরুদ্ধে।

মামলার পর থেকে গত দেড় বছরে হত্যা, গুমের ক্রমাগত হুমকিতে বসতবাড়ি ও জমি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী নারী।

গতকাল শুক্রবার মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী নারী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 'মামলার প্রতিটি শুনানির দিনই আদালত চত্বরে আমাদের সামনা-সামনি হুমকি দেয় আসামি ও তার আত্মীয়-স্বজনেরা। মামলা তুলে নিতে বলে। নইলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়।'

জানা যায়, হুমকির ঘটনায় গত ১৯ জানুয়ারি চরজব্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। পুলিশের তদন্তে হুমকি দেওয়ার সত্যতাও পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী নারী জানান, এরপরও হত্যা-গুমসহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া বন্ধ হয়নি।

তিনি বলেন, 'মামলার প্রধান আসামি মুন্সি মেম্বার নিজে ও কারাগারে থাকা অন্য দুই আসামির আত্মীয়রা আমার বাড়িতে এসে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। তারা বলে মামলা তুলে না নিলে আমাদের হত্যা করা হবে।'

ওই নারী বলেন, 'মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি আবুল খায়ের তার লোকজন নিয়ে একাধিকবার আমার বাড়িতে এসে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হলে নগদ টাকা, জমি লিখে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। তাতেও রাজি না হওয়ায় হত্যা করার হুমকি দেন।'

তিনি বলেন, 'মামলার গত শুনানির দিন ২৪ জুনেও আদালত চত্বরে হুমকি দেওয়া হয়। আসামি আবুল খায়ের "তার টাকা আছে, রায় তার পক্ষেই যাবে" বলেও চাপের মধ্যে রাখেন আমাদের।'

ভুক্তভোগী নারী বলেন, 'এই ধরনের হুমকির পর স্বামী সন্তান নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছি। আসামিদের হুমকির মুখে গত সপ্তাহে বসতবাড়ি ও জায়গাজমিসহ ২০ শতক জমি অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছি। এখানে থাকলে আসামিরা আমাকে ও আমার মেয়েকে মেরে ফেলবে।'

তিনি জানান, এই পর্যন্ত চার জন আসামি মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে। সাক্ষীদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

গতবছর ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সূবর্ণচরে ঘরে ঢুকে গৃহবধূ ও তার কিশোরী মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।

এই ঘটনায় পরদিন গৃহবধূ বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ প্রধান আসামি আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

আসামি আবুল খায়ের গত বছর ৬ নভেম্বর আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।

অপর দুই আসামি হারুন ও মেহরাজ কারাগারেই আছেন।

অভিযোগ নিয়ে জানতে আসামি আবুল খায়েরকে একাধিকবার মোবাইলে ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুর রসুল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মামলার বাদী ভুক্তভোগী নারী ও সাক্ষীদের আসামিপক্ষ ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।'

বিষয়টি নিয়ে চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন মিয়া বলেন, বাদীকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গত ১৯ জানুয়ারি থানায় একটি জিডি করা হয়েছিল। পুলিশ জিডির তদন্ত করে ৪ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তদন্তে নারীকে হুমকি দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

6h ago