কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, কী খাবেন, কী খাবেন না

কোষ্ঠকাঠিন্য

কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ সমস্যা মনে হলেও এটি যন্ত্রণাদায়ক এবং অনেকেই ভুগছেন এই সমস্যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ।

কোষ্ঠকাঠিন্য কী

অধ্যাপক ফারুক আহমেদ বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই পরিচিত একটি সমস্যা, প্রতি ৭ জন্য ব্যক্তির মধ্যে ১ জনের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ রয়েছে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ দিনে ৩ বার অথবা সপ্তাহে ৩ বার মলত্যাগ করলে সেটিকে স্বাভাবিক মনে করা হয়।

কারো যদি সপ্তাহে ৩ বার মলত্যাগ না হয়, অর্থাৎ যদি সপ্তাহে ১ বার বা সপ্তাহে ২ বার মলত্যাগ হয় তাহলে সেই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। এছাড়া মলত্যাগ করতে কষ্ট হয়, মলত্যাগে অতিরিক্ত চাপ দিতে হয়, শক্ত মলত্যাগ করে এবং কষ্ট হয়, কারো যদি মলত্যাগ করার পর মনে হয় পুরোপুরি মলত্যাগ হয়নি, পায়ুপথের কাছে এসে মল আটকে যাচ্ছে এমন অনুভূতি হয়- এই সব বিষয়গুলো যখন একত্রে পরিলক্ষিত হয় তখন তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।

কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়

বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন-

১. জীবনযাত্রায় যদি কোনো পরিবর্তন আসে, ভ্রমণ অবস্থায়, নতুন কোনো জায়গায় বেড়াতে গেলে, খাদ্যাভাস পরিবর্তন হলে, আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

২. ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন হলে হতে পারে।

৩. কিছু কিছু ওষুধ আছে, যেমন- ব্লাডপ্রেশারের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, এরকম আরো অনেক ওষুধ আছে যেগুলো সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

৪. কিছু কিছু পরিপাকতন্ত্রের রোগ যেমন- ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) যদি থাকে, পরিপাকতন্ত্রের কোথাও যদি টিউমার থাকে যার কারণে মলত্যাগ বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক মুভমেন্ট বা চলন যদি কোনো কারণে অস্বাভাবিক হয়ে যায়, ধীর হয়ে যায় কিংবা কমে যায় তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

৫. পরিপাকতন্ত্রের রোগ ছাড়াও কিছু অন্যান্য রোগ যেমন- হরমোনজনিত রোগ, থাইরয়েডের কারণে হতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রের কোনো রোগ, যেমন- পারকিনসন রোগ, স্ট্রোক, নড়াচড়া করতে পারেন না, বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় এমন রোগীদেরও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

৬.  পানি কম পান করার কারণে হতে পারে।

৭. নিয়মিত ব্যায়াম না করা, নড়াচড়া কম করা, কায়িক পরিশ্রম না করা।

লক্ষণ

১.  সপ্তাহে ৩ বারের কম পায়খানা হওয়া।

২.  মলত্যাগের সময় কষ্ট, অতিরিক্ত চাপ দিতে হয়।

৩.  মল শক্ত হয়।

৪. অসম্পূর্ণ মলত্যাগের অনুভূতি হওয়া, পায়খানা পরিষ্কার না হওয়া।

৫.  পেট ব্যথা হওয়া

৬. মলত্যাগে চাপ দেওয়া বা কোনো রোগের কারণে যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে পেট ফুলে যেতে পারে, মলত্যাগের সময় রক্ত যেতে পারে, রক্তশূন্যতা হতে পারে, ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যেতে পারে।

চিকিৎসা

অধ্যাপক ফারুক আহমেদ বলেন, কোষ্ঠাকাঠিন্য কী কারণে হয়েছে সেটি শনাক্ত করার পর প্রয়োজনে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। কারো যদি হরমোন, থাইরয়েডজনিত রোগ থাকে, পারকিনসন বা অন্য কোনো রোগ থাকে তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা নিলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়ে যাবে।

কোনো রোগ ছাড়া এবং পরিপাকতন্ত্রের অস্বাভাবিক মুভমেন্ট, ধীর হওয়া বা কমে যাওয়ার কারণে যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।

ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো না হয়, অন্ত্রের গঠনগত কোনো সমস্যা থাকে বা মলত্যাগের প্রক্রিয়া যদি কাজ না করে সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। এছাড়া মানসিক চিকিৎসা বায়োফিডব্যাক থেরাপিও দেওয়া হয় রোগীকে, যা রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে তীব্র কষ্টে এনেমা নামক ওষুধ মলদ্বারের মাধ্যমে প্রবেশ করালে পায়খানা হয় এবং রোগীর কষ্ট লাঘব হয়।

প্রতিরোধ

অধ্যাপক ফারুক আহমেদ বলেন, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে, সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন ও খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত হতে হবে। যে খাবারে ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ বেশি এমন খাবার, শাকসবজি, ফল খেতে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে কারণ কম পানি খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি ও কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। পরিমিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। যদি বেশি ভ্রমণ করতে হয় তাহলে ভ্রমণ অবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করার পাশাপাশি খাবার খেয়ে নিতে হবে। এছাড়া যেসব ওষুধ খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় সেসব ওষুধ যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী খাবেন

আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। পুঁইশাক, কচু শাক, পালং শাকসহ সব ধরনের শাক খেতে হবে। শিম, শিমের দানা, বাদাম, ঢেঁড়স, মিষ্টি আলু, লাউ এবং আঁশ আছে এমন শাকসবজি বেশি পরিমাণে রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। আপেল, কলা, পাকা পেঁপে, আঙুর, পেয়ারার মত আঁশযুক্ত ফল খেতে হবে। প্রতিদিন আড়াই থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। এছাড়া ওট মিল বা ইসবগুলের ভুসি উচ্চ মানের ফাইবার জাতীয় খাবার। তাই প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে খাওয়া উপকারী।

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কী খাবেন না

কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কম আঁশযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। ফাস্ট ফুড, যেমন- বার্গার, পিৎজা, চিপস, কোমল পানীয় ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। রিফাইন্ড ফুড, ফ্রাইড ফুড পরিহার করতে হবে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

1h ago