নিজ শিবিরেই বিরোধিতার মুখে ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বিশাল আকারের, অসামান্য ব্যয় প্যাকেজের কথা বলে আসছেন। তার ভাষায়, এই 'বিগ বিউটিফুল বিল' মার্কিন জনগণের অনেক সমস্যার সমাধান করবে। তবে বিভিন্ন কারণে সরকারি ব্যয় অনুমোদনের এই বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এই বিলে মার্কিন কংগ্রেসের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাম্প। শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাটিক পার্টিই নয়—রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারাও বিলটির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।

ওই বিলে জাতীয় দেনা বড় আকারে বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতা কমিয়ে আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যার বিরোধিতা করছেন কংগ্রেসের সদস্যরা।

আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা পর্যন্তও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। দুই ঘণ্টা আগে বিলটি হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভসে (প্রতিনিধি সভা) উত্থাপন করা হয়েছিল।

তখনো হাউস স্পিকার মাইক জনসন 'প্রসিডিউরাল ভোট' প্রক্রিয়া বন্ধ করেননি। এই ভোটে অনুমোদন পেলেই বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে।

অচলাবস্থার অবসান ঘটার কোন সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে স্পিকার ও তার সহকারীরা পর্দার আড়ালে দলের বিদ্রোহী আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এই 'বিদ্রোহী' কংগ্রেস সদস্যরা রিপাবলিকান দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্পের বিলে 'না' ভোট দিয়েছেন।

পাশাপাশি, যেসব আইনপ্রণেতা তখনো হাউস ফ্লোরে এসে পৌঁছাননি, তাদের 'হ্যাঁ' ভোট নিশ্চিত করার তৎপরতাও দেখা গেছে। 

ক্যাপিটলে সাংবাদিকদের স্পিকার মাইক জনসন বলেন, 'আমরা আজ রাতেই আমাদের লক্ষ্যে পৌছাব। আমরা সেট অর্জনে কাজ করছি এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে আমার মনোভাব অত্যন্ত ইতিবাচক।'

চলছে অনুমোদন প্রক্রিয়া

হাউস স্পিকার মাইক জনসন। ছবি: রয়টার্স
হাউস স্পিকার মাইক জনসন। ছবি: রয়টার্স

মে মাসে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অনুমোদন পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে এই বিল সিনেটে পাস হয়। কিন্তু সিনেট সদস্যরা এতে কিছু পরিমার্জনা যোগ করে।

সে কারণে গতকাল বুধবার আবারও হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভসে ভোটের জন্য বিলটি ফেরত পাঠায় সিনেট।

এই সরকারি ব্যয় প্যাকেজে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অনেকগুলোই পূরণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যার মধ্যে আছে সামরিক খরচ বৃদ্ধি, অবৈধ অভিবাসী/অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বড় একটি উদ্যোগের অর্থায়ন ও তার প্রথম মেয়াদে প্রতিশ্রুত সাড়ে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার কর রেয়াতের মেয়াদ বাড়ানো।

কিন্তু এসব উদ্যোগে এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দেনার সঙ্গে বাড়তি তিন দশমিক চার ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হবে। যার ফলে বাজেট ঘাটতি নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছাবে।

পাশাপাশি, মেডিকএইড স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের বাজেটে বড় আকারে কাটছাঁট করতে চান ট্রাম্প। বিলটি পাস হলে, এটাই হবে ১৯৬০ সালে এই প্রকল্পের উদ্বোধনের পর সবচেয়ে বড় বাজেট কর্তন।

রিপাবলিকান দলের মধ্যপন্থিরা আশংকা করছেন, এ ধরনের অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তে পরবর্তী নির্বাচনে দলের জয় সংশয়ে পড়ে যেতে পারে।

প্রায় ২৫-৩০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা জানিয়েছেন, তারা ট্রাম্পের বিলে সম্মতি দেবেন না।

এদের মধ্যে যদি তিন-চারজনও এই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তাহলে প্রসিডিউরাল ভোটেই এই বিলের অপমৃত্যু ঘটবে।

বিল নিয়ে যত বিতর্ক

কংগ্রেসে চলছে বিগ বিউটিফুল বিল নিয়ে বিবাদ। ছবি: রয়টার্স
কংগ্রেসে চলছে বিগ বিউটিফুল বিল নিয়ে বিবাদ। ছবি: রয়টার্স

রিপাবলিকান নেতারা আশা করেছিলেন, বুধবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই ওই প্যাকেজ অনুমোদনের সবুজ সংকেত পাবে। তবে বাস্তবে তা হয়নি।

ট্রাম্পের দেওয়া ৪ জুলাইর সময়সীমার আগে অবশ্য তাদের হাতে দুই দিন রয়েছে।

৮৮৭ পৃষ্ঠার বিলটি সিনেটে অনুমোদন পেলেও এতে বেশ কিছু সংশোধন যোগ করেন আইনপ্রণেতারা।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বিল পাস হলে স্বাস্থ্য বিমা খাতে অন্তত ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার হবেন। পল্লী অঞ্চলের অনেক হাসপাতাল অর্থায়নের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। 

বুধবার হোয়াইট হাউসে একটি ব্যক্তিগত বৈঠকে বিল পাসের জন্য দলের নেতাদের চাপ দেন ট্রাম্প।

মধ্যরাতের পর তিনি ট্রুথ সোশালে লেখেন, 'রিপাবলিকানরা কিসের জন্য অপেক্ষা করছে?'

'আপনারা কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন? মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন—যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও মহান দেশ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ) নাখোশ হয়েছে এবং এতে আপনাদের ভোট কমে যাচ্ছে।'

ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই বিলের বিরুদ্ধে তারা লড়াই অব্যাহত রাখবেন এবং ২০২৬ সালের কংগ্রেস নির্বাচনের প্রচারণায় এই বিলের বিরোধিতা বড় ভূমিকা রাখবে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বিল সবচেয়ে গরীব মার্কিনীদের সরকারি অর্থ বঞ্চিত করে তা ধনীদের কাছে বণ্টনের ব্যবস্থা করেছে, যা নজিরবিহীন।

হাউস মাইনরিটি নেতা হাকিম জেফরিস। ছবি: রয়টার্স
হাউস মাইনরিটি নেতা হাকিম জেফরিস। ছবি: রয়টার্স

হাউস মাইনরিটি নেতা ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা হাকিম জেফরিস সাংবাদিকদের বলেন, 'সিনেটে রিপাবলিকানদের এই ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয় (বিল) পাস করার জন্য লজ্জা হওয়া উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

11h ago