ফুটবলে আসলেই কি সোনালী দিন ফিরছে?

bd football fan

ক্রীড়া সাংবাদিক পেশায় আসার পর আর স্রেফ দর্শক হিসেবে নির্ভার হয়ে মাঠে গিয়ে খেলা দেখার সুযোগ হয় না। দীর্ঘদিন পর সেই সুযোগ এলো। ফুটবল ভক্ত পুত্রকে নিয়ে বাংলাদেশ-ভুটান ফুটবল ম্যাচ দেখতে চড়লাম মেট্রোতে। মতিঝিলগামী অনেকের গায়েই তখন বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি। সবার ঠিকানা কোথায় বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না।

সংস্কার কাজের জন্য ৫৫ মাস বন্ধ ছিলো 'হোম অব ফুটবল'। নতুন করে চালুর সময়ে অনেক পালাবদল হয়ে গেছে। দেশের ক্ষমতা বদলে গেছে, সেই ঝাপটায় অনেক স্থাপনার মতন এই স্টেডিয়ামের নামও বদল হয়ে এখন তা জাতীয় স্টেডিয়াম (আগের নাম বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম)। বাংলাদেশ ফুটবল দলেও এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। প্রবাসী বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন তারকা চলে এসেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটের চরম ব্যর্থতা মিলিয়ে ফুটবলে গণ-জোয়ারের এক আভাস দেখছেন অনেকে।

অনেকদিন পর দেশের ফুটবল ঘিরে বিপুল উন্মাদনা। স্টেডিয়ামের কাছে গিয়ে টের পেলাম আমরা একটু দেরিই করে ফেলেছি। সবগুলো গেটেই তখন বিশাল লাইন। এত মানুষের চাপ নেওয়ার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা না থাকায় ফুটবল ফেডারেশনের অব্যবস্থাপনা তখন দৃশ্যমান। অনলাইন টিকেট বাফুফের চেকারদের স্ক্যান করার অদক্ষতায় তখন উল্টো আপদ। খেলা শুরু হয়ে যাওয়ায় অস্থির জনস্রোত একটা চেকিং গেটই গুঁড়িয়ে ঢুকে যায় ভেতরে।

পদপিষ্ট হওয়ার শঙ্কা নিয়ে অনেকটা অপেক্ষা করে আমরাও টিকেট হাতে নিয়ে স্ক্যান ছাড়াই ঢুকে যাই (ততক্ষণে পুরো ব্যবস্থাপনাই ভেঙে পড়েছে)। ভেতরে ঢুকে ঘুটঘুটে অন্ধকার এক সিঁড়ি দিয়ে মোবাইলের বাতি জ্বালিয়ে দর্শকদের ঢুকতে হচ্ছিলো গ্যালারিতে। একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রবেশ পথে বাতির ব্যবস্থা নেই কেন এই প্রশ্ন আর তখন কাকে করা যায়?

গ্যালারিতে তখন অবশ্য আলোর রোসনাই,  বসতেই হামজার গোল, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া। তখন গোটা গ্যালারিতে 'হামজা', 'হামজা' বলে আওয়াজ উঠেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সব খেলা মিলিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় বোধহয় তিনিই।  শক্তিতে অনেক পিছিয়ে থাকা ভুটানের বিপক্ষে হামজাকে নিয়ে অন্তত ৩-৪ গোলে বাংলাদেশ জিতবে সেই প্রত্যাশাই ছিলো মানুষের। একেকটি আক্রমণের তোড়ে গ্যালারিতে উঠে উন্মাদনার ঢেউ, গোল বঞ্চিত হলে তা আক্ষেপের  শব্দে থেমে আসে। একটা অদ্ভুত ছন্দে চলছিল গোটা আবহ। আক্রমণের তুলনায় গোল কম হলেও বাংলাদেশের খেলায় দর্শকদের আশাবাদী মনে হলো। ফুটবলে কিছু একটা হতে পারে এই বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে। কয়েকজনকে মনে হলো বেশ আশাবাদী। এই দেশের মানুষের খুব দ্রুত আশাবাদী হওয়ার ক্ষমতা আছে, আবার সেই আশা পড়তেও সময় লাগে না। এই মুহূর্তে ফুটবল ঘিরে আশা আছে, প্রবল আশা।

বাংলাদেশে নব্বুই দশক থেকে ক্রিকেট-ফুটবলের একটা রেষারেষি ছিলো। এক সময় ফুটবলের দাপট পেছনের বেঞ্চিতে ছিলো ক্রিকেট। ফুটবল পথ হারানোর দিকে হাঁটলে ক্রিকেট জায়গা করে নেয় সর্বোচ্চ মঞ্চে। জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট চলে যায় তুঙ্গে, ফুটবল মাঠ যেন ভাঙা হাট। আবার ক্রিকেটকে পেছনের বেঞ্চিতে ঠেলে পুরনো প্রেম কি আবার জেগে উঠবে বাঙালির? প্রশ্নের উত্তর দিবে হয়ত আগামী, তবে কতগুলো প্রশ্নের ভিড় সরিয়ে রাখার উপায় নেই।

যেমন এই স্রোত কতটা বজায় থাকবে এই প্রশ্নই এখনই তোলা যায়। মূলত ফুটবল জাতীয় দল কেন্দ্রিক খেলা না। সারা বছর ঘরের মাঠে জাতীয় দলের খেলা হবে চার-পাঁচটা। বাদবাকি সময় ক্লাব ফুটবল। যেই ক্লাব ফুটবলই মূলত গড়ে দেয় জাতীয় দলের স্থায়ী ভিত। সোনালী অতীতে বাংলাদেশের সেই ক্লাব ফুটবলে ছিলো এমন বিপুল উন্মাদনা, শক্ত ভিত। আবাহনী-মোহামেডানের নামে গ্যালারি ভাগ হতো। এখন কি আর তা হবে? ক্লাব ফুটবলে ভঙ্গুর অবস্থা, অ-পেশাদারিত্ব, নানাবিধ কেলেঙ্কারি এমনকি ম্যাচ পাতানোর মতন ঘটনাও থাকে খবরের শীর্ষে। ঘরোয়া ফুটবলে গ্যালারি করে খাঁ খাঁ। এই সেদিন ময়মনসিংহে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে চরম অব্যবস্থাপনায় জন্ম হয়েছে বিব্রতকর দৃশ্যের।

কলকাতায় ইস্ট বেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি দেখার যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন এই সাম্প্রতিক কালেও প্রতিবেশীদের ঘরোয়া ফুটবল সংস্কৃতি আমাদের তুলনায় কতটা পোক্ত, কতখানি এগিয়ে।  হঠাৎ জাতীয় দল কেন্দ্রিক তৈরি উন্মাদনা কতদিন স্থায়ী হবে তা নির্ভর করে এই ফুটবল সংস্কৃতির উপর।

কয়েকজন প্রতিভাবান প্রবাসী ফুটবলার এনে দেশের পচে যাওয়া গোটা ফুটবল সিস্টেমটাকে কি ঢেকে রাখা যাবে? ফুটবলে সাময়িক একটা সাফল্য আসতে পারে, তবে সোনালী দিন ফিরছেই এই কথা এখনই জোর দিয়ে বলার উপায় আসলে কতটা?

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

4h ago