ফ্যাশনে প্রাধান্য পাচ্ছে আরাম

২০২৫ সালে বসে ফ্যাশনের জন্য আরামের সঙ্গে সমঝোতা করার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ বর্তমান ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আরামদায়ক পোশাক অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। ঢিলেঢালা প্যান্ট, শার্ট, টপস তাই এগিয়ে আছে সবার আগে।

প্যান্ট, শার্ট, কুর্তি, সালওয়ার-কামিজ যাই হোক না কেন, ফ্যাশনের এই সময়টাতে এসে ঢিলেঢালা এসব পোশাকে আমার মতো নারীরা শেষমেশ স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন। এই স্বস্তির মধ্যেই অনেকে আবার পেয়েছেন অন্য রকম এক মুক্তির স্বাদ, যেমন ইচ্ছে আরামদায়ক পোশাক পরার মুক্তি।
ফ্যাশনের চক্রাকার স্বভাবের কারণে বর্তমানে নব্বই দশক ও ২০০০ সালের স্টাইলগুলোও ফিরে এসেছে। সব বয়সের মানুষ এই নতুন ট্রেন্ডে গা ভাসাচ্ছেন। কোভিড মহামারির কারণে বিশ্ব এমন সব নতুন ধরনের 'ওয়ার্ক মডেলে'র সঙ্গে পরিচিত হয়েছে, যা সম্পর্কে আগে কোনো ধারণাই হয়তো আমাদের ছিল না। রিমোট ওয়ার্ক বা হাইব্রিড ওয়ার্ক মডেলগুলো প্রভাব রেখেছে মানুষের পোশাক-আশাকের ওপরও। আর তাই বর্তমানে তথাকথিত অফিস পাড়াতেও দেখা যাচ্ছে ক্যাজুয়াল পোশাকের ছড়াছড়ি। এই বিষয়টির গ্রহণযোগ্যতা দিনদিন আরো বাড়ছে।
এর ফলেও আরামদায়ক পোশাকের দিকে ক্রেতাদের নজর আগের চেয়ে বেশি পড়ছে। লিনেন কিংবা সুতি প্যান্ট, সুতি শার্ট, ঢিলেঢালা জিন্স, রঙিন কাফতান, কুর্তি আর কো-অর্ড সেট তো ২০২৫ এর নিত্য পরিচিত ফ্যাশনচিত্র। নারীরা আজকাল হালকা ধাঁচের কাপড়ের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। খুব বেশি ভারি কাজ বা সিনথেটিক কাপড় ছেড়ে তারা এখন ছিমছাম, সুতার কাজের পোশাকই বেশি বেছে নিচ্ছেন।

কেউ কেউ জেনে হয়তো খুশি হবেন যে আঁটোসাটো জিন্স এখন আর ফ্যাশনে নেই। আমার সবসময়ই আঁটোসাটো জিন্সের স্টাইল আর কাটিং অস্বস্তিকর মনে হতো। তাই ওটা যে আর স্টাইলে নেই, তা ভেবে বেশ ভালোই লাগছে। শিগগিরই তা আর ফ্যাশন আঙিনায় ঘুরে না বেড়াক।
চুলের সাজ ও মেকআপ
আরামদায়ক পোশাকের ফ্যাশন নারীদের চুলের ছাঁট ও মেকআপের ওপরও প্রভাব ফেলছে। কারণ এই ফ্যাশনের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, কোনো ধরনের চেষ্টা ছাড়াই ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠা। আর তাই নারীরা বর্তমানে এমন চুলের ছাঁটই বেছে নিচ্ছেন, যাতে তেমন একটা যত্ন না নিতে হয়। এসব সাজের মধ্যে রয়েছে ব্লান্ট কাট, লেয়ার্স, লং বব ইত্যাদি হেয়ারকাট।
কসমেটিকসের দুনিয়ায় ভারি আই মেকআপের সঙ্গে এই ফ্যাশনটা একেবারেই মানায় না, তাই বর্তমানে ট্রেন্ডে রয়েছে ব্রাউন ও কপার আইশ্যাডো, হালকা ঠোঁটের সাজ, সফট আর ন্যাচারাল লুকিং ব্লাশ অন- যার মধ্যে গোলাপি, কোরাল আর টেরাকোটা বেশ জনপ্রিয়।
মিনিমাল মেকআপের এই নতুন ধারণাটিতে রূপচর্চার চেয়েও ত্বকের যত্নের দিকে বেশি খেয়াল রাখা হয়। সুস্থ ত্বকই সবচেয়ে ফ্যাশনেবল- এমন ধারণা থেকে সাজগোজ করা হয়।
২০২৫ সালের এই নতুন সময়ে আমরা আমাদের ভারি মেকআপের আড়ালে না লুকিয়ে প্রাকৃতিকভাবে আমরা যেমন দেখতে, সেটির দিকে বেশি নজর দিতে চাই। তাই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, নিয়মিত শরীরচর্চা, পানির চাহিদা পূরণ করার মধ্য দিয়ে ত্বককে সুস্থ রাখার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জুতা
রেট্রো স্টাইলের পোশাকের সঙ্গে জুতার কথাটাও ভাবতে হবে। লেদার স্লাইড এখন খুবই জনপ্রিয় এবং রিলাক্সড স্টাইলের সঙ্গে খুব ভালো মানায় এ ধরনের জুতা।
স্লাইডের পাশাপাশি ওয়েজ, জেলি স্যান্ডেল, ব্যালে শু এবং ছুঁচালো ধরনের পাম্প শু ইত্যাদিও ফুটওয়্যারের জগতে বর্তমানে বেশ ট্রেন্ডি।

গয়নার বাক্স
এ ধরনের ফ্যাশনে এমন সব গয়নাই বেছে নেওয়া হচ্ছে, যেগুলো সাধারণত প্রতিদিনই চাইলে পরা যায়। সোনার গয়নার মধ্যে রয়েছে গোল্ড স্টাড, গোল্ড হুপ, পেন্ডেন্ট সহ চেইন আর ব্রেসলেট। যদি একটু আলাদা কিছু চান, তাহলে কাফ ব্রেসলেট পরতে পারেন।
মুক্তার গয়না তো সবসময়ই চিরায়ত সাজের উপকরণ হিসেবে সাজিয়ে চলেছে আমাদের। এক জোড়া মুক্তোর স্টাড কিংবা একটা ছিমছাম মুক্তার হার পড়লে আরামদায়ক সাজের সঙ্গে যোগ হবে আভিজাত্য।
ফ্যাশন দুনিয়ায় তো এখন পুরোদমে রেট্রো স্টাইলের জয়জয়কার চলছে- যেখানে পোশাক ও সাজের আরামই শেষকথা। মহামারি পরবর্তী বিশ্বে আমাদের জীবনের বদলে যাওয়া গল্পগুলোয় আরামদায়ক ফ্যাশনের সঙ্গে পথচলাটা বেশ দীর্ঘ হবে বলেই মনে হচ্ছে।
অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments