সালমান ‘চমৎকার মানুষ’, বিনিয়োগ বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন করার অনুরোধ ট্রাম্পের

মধ্যপ্রাচ্যের তিন তেলসমৃদ্ধ ও ধনী দেশ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম পর্যায়ে আজ মঙ্গলবার সৌদি আরব পৌঁছে গেছেন ট্রাম্প। 

এএফপি ও বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

পরবর্তীতে তিনি কাতার ও আরব আমিরাতও সফর করবেন। সফরের মূল উদ্দেশ্য ওই তিন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করা।

পশ্চিম নয়, মধ্যপ্রাচ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ

দ্বিতীয় মেয়াদে এটাই ট্রাম্পের প্রথম বড় আকারের বিদেশ সফর। হোয়াইট হাউস বলছে, এটা মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের 'ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন' এবং প্রেসিডেন্ট নিজে এই সফরের জন্য মুখিয়ে আছেন।

আট বছর আগেও প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন ট্রাম্প। সে সময় তিনি একটি উজ্জ্বল গোলক হাতে নিয়ে ছবি তুলে এবং 'তলোয়ার নাচে' অংশ নিয়ে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন।

২০১৭ সালে রিয়াদ সফরের সময় তলোয়ার নাচে অংশ নেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সৌদি শাসক রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ। ফাইল ছবি: এএফপি
২০১৭ সালে রিয়াদ সফরের সময় তলোয়ার নাচে অংশ নেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সৌদি শাসক রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ। ফাইল ছবি: এএফপি

আধুনিক যুগে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের প্রথাগত প্রথম সফরের গন্তব্য হলো মেক্সিকো, কানাডা বা যুক্তরাজ্য। ট্রাম্প সেই প্রথা ভেঙেছেন।

প্রথা ভেঙে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ট্রাম্প বর্তমান সময়ে ওই দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক গুরুত্বকে স্বীকার করে নিয়েছেন—এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।

পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যে ধনকুবের ট্রাম্পের নিজস্ব ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে।

সফরের মূল সুর 'চুক্তি'

এই সফরের মূল লক্ষ্য ধনী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সই করা।

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের স্কোক্রফট মিডল ইস্ট সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের সম্মানিত ফেলো ড্যানিয়েল বি. শাপিরো বলেন, 'হোয়াইট হাউস সূত্রগুলোর ইঙ্গিত এমন যে এই সফরে প্রেসিডেন্ট "চুক্তির" দিকে বিশেষ নজর দেবেন।'

রিয়াদে সৌদি-মার্কিন পতাকার প্রদর্শনী। ছবি: এএফপি
রিয়াদে সৌদি-মার্কিন পতাকার প্রদর্শনী। ছবি: এএফপি

রিয়াদ, দোহা ও আবুধাবি ৭৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা ও রাজকীয় প্রথায় স্বাগতম জানাবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সফরের আগে বলেন, 'প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যে তার ঐতিহাসিক সফরের জন্য মুখিয়ে আছেন। তিনি এমন একটি ভবিষ্যতের পক্ষে প্রচার চালাবেন যেখানে "বাণিজ্য ও ঐতিহ্য" উগ্রবাদকে পরাজিত করবে।'

গুরুত্বপূর্ণ সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ সম্মেলন

বিবিসি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—উপসাগরীয় দেশগুলোয়, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তহবিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সেটা ট্রাম্পের বিশেষ অর্জন হবে।

পাশাপাশি, দেশে ফিরে তিনি 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির সাফল্যের কথা প্রচার করতে পারবেন।

ট্রাম্পের সফরকে কেন্দ্র করে ওয়াল স্ট্রিট ও সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ নির্বাহীরা সৌদি আরবে ছুটছেন।

আজ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ সম্মেলনে ব্ল্যাকরক, প্যালান্টির, সিটিগ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ও ফ্র্যাঙ্কলিন টেম্পলটনের প্রধান নির্বাহীরা অংশ নেবেন।

রিয়াদের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
রিয়াদের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

এমন এক সময়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নানা প্রতিকূলতার মুখে। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের বলি হয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য, বিনিয়োগকারীদের আস্থা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থনীতিও চাপে পড়েছে।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উৎপাদন কমেছে, যা গত তিন বছরে এবারই প্রথম।

গত বছরের জানুয়ারিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা করেছিলেন, আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাশা, এ অঙ্ক বাড়িয়ে এক ট্রিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২১ লাখ ৫২০ হাজার কোটি টাকা) করা হবে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের চুক্তি বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'সৌদি যুবরাজ চমৎকার মানুষ। তাকে অনুরোধ করব যেন তিনি এটা (বিনিয়োগের পরিমাণ) বাড়িয়ে একটি পূর্ণ সংখ্যা, তথা এক ট্রিলিয়ন করেন। আমার ধারণা তারা এটা করবে কারণ আমরা তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো আচরণ করেছি।'

সৌদি আরব আরও বেশি মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম কিনবে বলেও আশা করেন ট্রাম্প।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সৌদি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, রিয়াদ যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন ডলার মূল্যের অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান ও উন্নতমানের আকাশ হামলা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্যেও ট্রাম্পের সঙ্গে দরকষাকষি করবে।

একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, 'আমরা এমন শর্ত দিতে চাই, যাতে ট্রাম্পের শাসনামলেই আমরা এসব অস্ত্রের চালান হাতে পেতে পারি।'

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে শুধু ইসরায়েলকে এখন পর্যন্ত এফ-৩৫ সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

Comments

The Daily Star  | English

No sharp rise in crime, data shows stability: govt

The interim government today said that available data does not fully support claims of a sharp rise in crimes across Bangladesh this year

45m ago