মাল্টিপল স্কলেরোসিসের কারণ ও চিকিৎসা, প্রতিরোধ কি সম্ভব?

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস
ছবি: সংগৃহীত

মাল্টিপল স্কলেরোসিস রোগটি সম্পর্কে অনেকেই খুব বেশি কিছু জানেন না। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রভাবিত করে এমন একটি রোগ। মাল্টিপল স্কলেরোসিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী।

মাল্টিপল স্কলেরোসিস কী 

অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, মাল্টিপল স্কলেরোসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে (কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে) প্রভাবিত করে। এই রোগে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে স্নায়ুর চারপাশে থাকা প্রতিরক্ষামূলক স্তর (মায়েলিন শিথ) আক্রমণ করে। মায়েলিন শিথ ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্নায়ু সংকেত পরিবহনে বাধা সৃষ্টি হয়, যার ফলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মাল্টিপল স্কলেরোসিস কেন হয়

মাল্টিপল স্কলেরোসিস ঠিক কী কারণে হয় তা এখনো অজানা। তবে মনে করা হয় জিনগত এবং পরিবেশগত কিছু কারণের সংমিশ্রণে এই রোগ হতে পারে। মাল্টিপল স্কলেরোসিসের কিছু সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রয়েছে-

১. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অস্বাভাবিকতা: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন নিজের স্নায়ুকোষের মায়েলিনকে বহিরাগত শত্রু ভেবে আক্রমণ করে তখন মাল্টিপল স্কলেরোসিস হতে পারে।

২. জিনগত কারণ: যাদের পরিবারের সদস্যদের মাল্টিপল স্কলেরোসিস আছে, তাদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি। তবে এটি সরাসরি বংশগত রোগ নয়।

৩. পরিবেশগত কারণ: কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ভিটামিন ডি এর অভাব, ধূমপান এবং ভৌগলিক অবস্থানের সঙ্গে এই রোগের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।

লক্ষণ

অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, মাল্টিপল স্কলেরোসিসের লক্ষণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। যেমন-

১. মাথা ঘোরা ও ভারসাম্যহীনতা, হাঁটাচলায় অসুবিধা।

২. শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি এটি একটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

৩. দৃষ্টি সমস্যা হতে পারে, ঝাপসা দেখা, ডাবল ভিশন বা চোখের পাতা নড়াচড়া করতে অসুবিধা।

৪. স্পর্শ অনুভূতিতে পরিবর্তন, ঝিনঝিন করা বা ব্যথা অনুভব করা।

৫.  মাংসপেশির দুর্বলতা ও খিঁচুনি, হাত বা পায়ের দুর্বলতা, ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা।

৬. কথা বলায় সমস্যা হওয়া, অস্পষ্ট ও জড়ানো কথা।

৭. মূত্রাশয় ও অন্ত্রের সমস্যা হওয়া। প্রস্রাব ধরে রাখতে অসুবিধা বা কোষ্ঠকাঠিন্য।

৮. স্মৃতি ও মনোযোগে সমস্যা হওয়া, মনে রাখতে বা মনোযোগ দিতে অসুবিধা।

৯. মেজাজের পরিবর্তন, বিষণ্নতা বা উদ্বেগ দেখা দেয়।

চিকিৎসা কী

অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ইমিউনোথেরাপির যুগান্তকারী অগ্রগতির সঙ্গে মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে-

ডিজিজ-মডিফাইয়িং থেরাপিস-ডিএমটিএস: এই ওষুধগুলো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুর ক্ষতি কমিয়ে রোগের অগ্রগতি ধীর করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের ডিএমটিএস বর্তমানে পাওয়া যায়।

লক্ষণ উপশমকারী চিকিৎসা (সিম্পটোমেটিক ট্রিটমেন্ট): মাংসপেশির খিঁচুনি, ব্যথা, ক্লান্তি, মূত্রাশয় বা অন্ত্রের সমস্যা এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট লক্ষণগুলোর উপশমের জন্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

মাল্টিপল মাল্টিপল স্কলেরোসিসের কোনো নিরাময় নেই। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগের অগ্রগতি ধীর করা, লক্ষণগুলো উপশম করা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।

প্রতিরোধ করা যায় কি না

মাল্টিপল স্কলেরোসিস সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা যায় না এবং কিছু ঝুঁকির কারণ, যেমন- বয়স, লিঙ্গ এবং পারিবারিক ইতিহাস পরিবর্তন করা যায় না। তবে খাদ্য এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন মাল্টিপল স্কলেরোসিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

যদিও মাল্টিপল স্কলেরোসিস সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা যায় না ,তবে ধূমপান ত্যাগ করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, খাদ্যাভ্যাস, সূর্যের আলোর মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

 

Comments

The Daily Star  | English

BNP sticks to demand for polls by December

In a meeting with Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night, the BNP restated its demands that the next general election be held by December and the government immediately announce a roadmap to that end.

1h ago