তাইজুলকে 'বিশ্বের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড বোলার' বললেন তামিম: এটা কি সত্যি?

চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে তাইজুল ইসলাম তার ক্যারিয়ারের ১৬তম পাঁচ উইকেট শিকার করেন। এরপর এই বাঁহাতি স্পিনারকে "বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড বোলার" বলে আখ্যায়িত করেছেন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

তাইজুলের এই পাঁচ উইকেটের দারুণ সাফল্যে প্রথমে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের স্কোর দিনশেষে দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ২২৭ রান। দ্বিতীয় দিন সকালে কোনো রান খরচ না করে এই বাঁহাতি তুলে নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেটটিও।

'(তাইজুল) এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড বোলার। বর্তমানে খেলতে থাকা বোলারদের পরিসংখ্যান দেখুন, আমার মন্তব্য বুঝতে পারবেন। আরেকটি ৫ উইকেটের জন্য তাইজুলকে অভিনন্দন।' ফেসবুকে তাইজুলের প্রশংসা করে এমন মন্তব্য করেন তামিম।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—তাইজুল কি সত্যিই এতটাই উপেক্ষিত, নাকি এটি অতিরঞ্জন?

২০১৪ সালে টেস্টে অভিষেকের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন তাইজুল—মোট ২২৪টি—যা তাকে এই সময়ের মধ্যে বিশ্বে ১৩তম স্থানে রেখেছে। ৫৩টি টেস্ট খেলা এই অভিজ্ঞ বোলার বাংলাদেশের খেলা ৬৯টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১৬টি মিস করেছেন। বিশেষ করে দেশের মাটিতে তিনি স্পিন আক্রমণের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তার ওপর, অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে তাইজুল এখন প্রধান স্পিনারের ভূমিকায় অবিসংবাদিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাকিবের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার পর এখন তাকে 'উপেক্ষিত' বলা হয়তো যথার্থ নয়, কারণ অনেক আগেই তিনি বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

যদিও কিছু সময় গণমাধ্যমে সাকিবের সঙ্গে তুলনা করে তাইজুলের কৃতিত্বকে আড়াল করা হয়েছে, তারপরও তা তাকে স্থায়ীভাবে অবমূল্যায়িত মনে করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেনি। বরং প্রশ্ন আসে, দেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারের সঙ্গে তুলনা করাটাই কি তাকে চিরকাল 'উপেক্ষিত' প্রমাণ করে?

তামিমের পোস্ট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে তাইজুল বলেন, 'হ্যাঁ, আমার কাছেও মনে হয় আমি আন্ডাররেটেড। কারণটা আপনারাও ভালো জানেন আমার চেয়ে।'

তাইজুলের এই মন্তব্য বাস্তবতা থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন মনে হয়। বরং এটি আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নিজেকে ছোট করে দেখার প্রবণতার পরিচায়ক। আসলে তার অবদান তার নিজের পক্ষেই কথা বলে—নিয়মিত পারফরম্যান্স ও দলে প্রতিষ্ঠিত অবস্থানই তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। এর পাশাপাশি, তার জায়গার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীও নেই।

তামিমের এই পোস্ট এসেছে এমন সময়, যখন সিলেটে প্রথম টেস্টে ব্যর্থতার পর তাইজুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ওই ম্যাচে স্পিন সহায়ক উইকেটেও তিনি মাত্র দুটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন, যা জিম্বাবুয়ের ওয়েসলি মাধেভেরের সঙ্গে যৌথভাবে ম্যাচের সর্বনিম্ন স্পিন পারফরম্যান্স ছিল। স্বাভাবিকভাবেই, অভিজ্ঞ বোলারের এমন পারফরম্যান্স সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল।

সমালোচনার জবাবে তাইজুল বলেন, 'আমার মনে হয় এতগুলো টেস্ট খেলার পর একটা ম্যাচ দেখে যারা সমালোচনা করে আমার মনে হয় না তারা খেলা বোঝে।'

তাইজুলের এই অবজ্ঞাপূর্ণ মনোভাব প্রশ্ন তোলে—এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও কি তার কাছ থেকে ঘরোয়া কন্ডিশনে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্সের জন্য জবাবদিহি আশা করা অযৌক্তিক?

তামিম তার দাবির পক্ষে 'পরিসংখ্যান দেখার' আহ্বান জানালেও প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তাইজুলের গড় এবং স্ট্রাইক রেট তাকে বিশ্বমানের সেরা বোলারদের কাতারে স্থান দেয় না। তার অভিষেকের পর থেকে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় ১৩তম হলেও, গড় ও স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে তিনি যথাক্রমে ১৮ ও ১৯ নম্বরে আছেন। এখনকার হিসেবে, আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৩০ বোলারের মধ্যে তার বোলিং গড় (৩২.০১) সবচেয়ে খারাপ।

তাই, তাইজুলের অবদান প্রশংসার দাবিদার হলেও, তাকে বাংলাদেশ দলে 'মর্মান্তিকভাবে উপেক্ষিত' বলার যে প্রচেষ্টা তা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং এটি আবেগনির্ভর এক বিবৃতি, বাস্তব বিশ্লেষণের নয়।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda reaches Gulshan residence amid warm welcome

Khaleda reaches Gulshan residence amid warm welcome

Supporters waved party flags and chanted slogans as the vehicle, with Khaleda seated in the front and her daughters-in-law in the back entered

1h ago