গবাদি পশু ও পোল্ট্রি খাতে ঋণ বিতরণ কমছে

পোল্ট্রি খাতে ঋণ
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষি শিল্পের প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি খাতে ঋণ বিতরণ কিছুটা কমেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষি খাতে মোট ঋণের প্রায় ২৪ শতাংশ দেওয়া হয়েছে প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি খাতে। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২৫ শতাংশ।

এ দিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ফসল খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৪৫ শতাংশ।

তবে মৎস্য খাতে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সবচেয়ে কম ১৫ শতাংশ ঋণ পেয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ১৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তফসিলি ব্যাংকগুলো কৃষিতে মোট ২২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় দশমিক ৬০ শতাংশ কম।

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১৬ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ।

অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ ও চার দশমিক ৯৩ শতাংশ।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তারা তাদের পণ্যের উপযুক্ত দাম পেয়েছেন।'

তার মতে, উদ্যোক্তাদের মুনাফা বেড়েছে। এর ফলে ঋণের ওপর তাদের নির্ভরতা কমেছে। পরবর্তীতে সামগ্রিক ঋণ বিতরণ কমেছে।

মূল্যস্ফীতি কমার কারণে উৎপাদন খরচ কমেছে। তাই কৃষি ঋণের চাহিদা কমেছে বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ ও পোল্ট্রি ব্যবসায় তাদের ঋণ বিতরণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০২ কোটি টাকা বেড়েছে।

তিনি আরও জানান, একই সময়ে সার্বিক কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৬৮৯ কোটি টাকা।

এক কৃষকের ঋণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা

দিনাজপুরের কৃষক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি গত বছর জামানত ছাড়াই চার শতাংশ সুদে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন।

ঋণের নথিতে ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও ৪৮ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ব্যাংক প্রথমে এক লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকায় টাকা কমিয়ে দেয়।

'সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো—ব্যাংক শুরুতে চার শতাংশ সুদের কথা বললেও পরিশোধের সময় এলে আমার কাছ থেকে ১১ শতাংশ সুদ নেয়।'

পরে খোঁজ নিয়ে ব্যাংক তাকে জানায়, ঋণের সব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তারা সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমি সব শর্ত পড়তে পারিনি। যদি জানতাম সুদের হার ১১ শতাংশে বেড়ে যাবে, তাহলে কখনই ঋণ নিতাম না।'

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ও বিতরণ সাধারণত ব্যাংকের স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপকরা পরিচালনা করে থাকেন।'

তবে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ উপখাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তারা কতটুকু যোগাযোগ রক্ষা করছেন সেটাই মূল বিষয়। এসব উপখাতের বর্তমান পরিস্থিতি সংকটময়। ঋণের অনেক চাহিদা থাকলেও ব্যাংকগুলো এগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।

সার্বিকভাবে ঋণ বিতরণ কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এসব শিল্পকে সহায়তার জন্য ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Structural weaknesses, poor governance plague economic reform: Debapriya

“If there is no stability in the economy, no other reform will be sustainable,” he said.

2h ago