যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নতুন শুল্ক মোকাবিলায় উদ্যোগ নিন

ট্রাম্পের হাতে নতুন শুল্ক চার্ট। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের হাতে নতুন শুল্ক চার্ট। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ দেশটির সকল বাণিজ্য অংশীদারদের পণ্য আমদানির ওপর 'রেসিপ্রোকাল শুল্ক' আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। ২ এপ্রিল ঘোষিত ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আমাদেরকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।

এই নীতি গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করেছে এবং এতে বেশ কয়েক দশক ধরে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ধারায় আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে। নতুন নীতিমালায় যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয়ে আসা সব বিদেশি পণ্যে সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ও ভারসাম্যের তারতম্য অনুযায়ী অসংখ্য দেশের পণ্যে বাড়তি শুল্ক যোগ করা হবে।

মজার বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রই সেই দেশ, যারা ১৯৪৭ সালে শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির (গ্যাট) মাধ্যমে মুক্ত ও অবাধ, বৈশ্বিক বাণিজ্য-প্রথা চালুর উদ্যোগে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছিল। এই উদ্যোগ থেকেই পরবর্তীতে ১৬৬ সদস্যের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ধারণাটি বিকশিত হয়। তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতে এবং এটি বিশ্বায়নের ধারণায় কুঠারাঘাত করে আবারও ভীষণভাবে সুরক্ষিত মার্কিন অর্থনীতিতে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য অর্থনীতি অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। নতুন এই মার্কিন নীতি এতে অনিশ্চয়তার নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে, যা ইতোমধ্যে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও দীর্ঘদিন ধরে চলমান মূল্যস্ফীতির সমস্যায় জর্জরিত।

বিশ্ব যখন এক নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন বাংলাদেশকেও তাদের নিজ স্বার্থ রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা নি:সন্দেহে দেশটির তৈরি পোশাক খাতকে বড় আকারে প্রভাবিত করবে, কারণ, ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত বছর ৮৪০ কোটি ডলার মূল্যমানের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২০ কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যে বাংলাদেশের পাল্লা ভারি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

চীন ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বাংলাদেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি শুল্ক দেবে। তবে একইভাবে ভারতের মতো অন্যান্য দেশগুলোর পণ্যে শুল্কের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম থাকছে, যা তাদেরকে খানিকটা সুবিধা দিতে পারে। এতে ভারতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাকের বাজার হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তবে সরকার ইতোমধ্যে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক যাচাই করে দেখছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই, শুল্ক কাঠামোর পুন:বিন্যাস ও সুনির্দিষ্ট মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের মাধ্যমে আমরা আশা করি ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেওয়া সম্ভব হবে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা, যা পরবর্তীতে আরও দরকষাকষির পথ খুলে দেবে। তবে, বাংলাদেশকে দরকষাকষিতে দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং আরও কৌশলী হতে হবে। পাশাপাশি, দিনে দিনে অনিশ্চিত হতে থাকা বিশ্ব বাণিজ্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশকে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে রপ্তানি বাজার ও পণ্য, উভয়ের ক্ষেত্রেই আরও বৈচিত্র্য আনতে হবে, যাতে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপযোগিতা ও উৎপাদনশীলতা অর্জন করা যায়। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ট্রাম্পের নীতিমালা আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ, তবে এই বিষয়টির মোকাবিলায় সৃজনশীল ও অভিনব কৌশল অবলম্বনে আমাদের পিছপা হওয়া উচিত হবে না।   

 

Comments

The Daily Star  | English

Govt declares 10-day Eid holiday starting June 5

Offices to remain open on two weekly holidays— May 17 and 24—to offset Eid vacation

2h ago