বিবিসির বিশ্লেষণ

গত ১০০ বছরে বিশ্ববাণিজ্যে এটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন

ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ব বাণিজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। প্রতীকী ছবি: রয়টার্স
ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ বিশ্ব বাণিজ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করা সব পণ্যের ওপর বড় আকারে শুল্ক আরোপ করায় বিশ্বজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

গতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্ব বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে বিবিসির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল ইসলাম মন্তব্য করেন, 'এসব শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।'

তার মতে, শুল্ক থেকে পাওয়া রাজস্বের পরিমাণ লাইন চার্টে বসালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় ১০০ বছর আগে সেই ত্রিশের দশকে ভীষণভাবে সুরক্ষিত মার্কিন অর্থনীতির আমলে সর্বশেষ শুল্ক থেকে এ ধরনের উচ্চ রাজস্ব আদায়ের নজির দেখা গিয়েছিল।

এবার নতুন করে শুল্ক ঘোষণার পর এক রাতেই বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারের দরপতন, বিশেষ করে, এশিয়ার বাজার পরিস্থিতি দেখেও বিষয়টির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত বিশ্ববাণিজ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এর মাধ্যমেই এই শুল্কের প্রকৃত প্রভাব বোঝা যাবে।

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র সর্বজনীন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে—যা যেকোনো ধরনের আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

আগামীকাল শুক্রবার রাত থেকে এটি কার্যকর হবে।

পাশাপাশি, বাণিজ্য ঘাটতির 'অপরাধে' অভিযুক্ত আরও কয়েক ডজন দেশের বিরুদ্ধে 'পাল্টা শুল্ক' আরোপ করা হয়েছে।

এশিয়ার দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ককে প্রকৃত অর্থেই 'অপ্রত্যাশিত' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এগুলো হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা প্রভাব ফেলবে। বেশ কয়েকটি দেশকে সার্বিকভাবে চরম বিপদে ফেলবে। ভেঙে পড়বে প্রচলিত ব্যবসায়িক কাঠামো।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা সরবরাহ ব্যবস্থা নিমিষেই ভেঙে পড়বে। অনেক মার্কিন ঘেঁষা প্রতিষ্ঠান চীনের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলেও মত দেন তিনি।

বিবিসির ফয়সাল ইসলামের প্রশ্ন, 'এটা কি শুধুই এক ধরনের উচ্চ পর্যায়ের দরকষাকষি?'

এ ক্ষেত্রে মার্কিন প্রশাসন সম্ভবত এমন দাবি করেছে যে পরিকল্পিত কর রেয়াতের ক্ষতি পোষাতেই শুল্ক থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থার সুযোগ সীমিত।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সরাসরি বলেছেন, 'এটা দরকষাকষি নয়, এটা জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ।'

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিমালার উদ্দেশ্য মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতিকে 'আবারও শূন্যে ফিরিয়ে নেওয়া'। এর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

তবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে কারখানা সরিয়ে নিতে অনেক বছর দরকার। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় কাপড়, খেলনা, ইলেকট্রনিক্সসহ বেশকিছু পণ্যের দাম খুব দ্রুত বেড়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে বাকি দেশগুলো প্রতিক্রিয়া জানাবে।

ইউরোপের ক্রেতারা স্থানীয় কাপড় ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য কম দামে কেনার সুযোগ পাবেন।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। দেশটির শুল্ক যুদ্ধের সিদ্ধান্তে বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় অর্থনীতিগুলো নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক বন্ধন আরও শক্তিশালী ও সমন্বিত করে নিতে পারে।

বিদেশি গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

টেসলার কমতে থাকা বিক্রি থেকে দেখা গেছে—এসব ঘটনার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ-প্রতিক্রিয়া শুধু গল্পের এক অধ্যায়-মাত্র। বর্তমান যুগে ক্রেতারাও তাদের নিজ অবস্থান থেকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন, যা তারা ইলন মাস্কের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দেখিয়েছেন।

একে নতুন ধরনের সামাজিক মাধ্যমের 'বাণিজ্য যুদ্ধ' হিসেবে দেখা যেতে পারে।

ইউরোপ চাইলে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত মার্কিন ব্র্যান্ডের পণ্য না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যের ওপর খড়গ নেমে আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রায় অনিবার্য হয়ে পড়া মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারে।

সব মিলিয়ে একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানো কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না বলেই মত দেন বিবিসির অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক।

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

12h ago