ইফতারে দই-চিড়া কেন খাবেন?

দই-চিড়া
ছবি: হাবিবা কিচেন অ্যান্ড ব্লগ থেকে সংগৃহীত

রমজানে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে এমন খাবার খাওয়া উচিত, যা সহজপাচ্য, পুষ্টিকর এবং শরীরকে দ্রুত শক্তি জোগাতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে দই-চিড়া হতে পারে একটি চমৎকার স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এটি শুধু সুস্বাদু ও সহজপ্রস্তুত খাবারই নয়, বরং প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা শরীরের জন্য উপকারী।

চলুন জেনে নিই দই চিড়ার উপকারিতা। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

ইফতারে চিড়া দই খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। এটি সহজপাচ্য, দ্রুত শক্তি প্রদানকারী, হজমে সহায়ক, পানিশূন্যতা দূরকারী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। যারা স্বাস্থ্যকর এবং হালকা কিছু খেতে চান, তাদের জন্য এটি একটি দারুণ খাবার।

চিড়া, যা শুকনো চাল থেকে তৈরি হয়, সহজে হজমযোগ্য এবং দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। অন্যদিকে, দই প্রাকৃতিকভাবে প্রোবায়োটিক, প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই দুই উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি চিড়া দই ইফতারের জন্য একদম সঠিক একটি খাবার, বিশেষত যারা স্বাস্থ্যসম্মত ও হালকা খাবার খেতে চান।

দই- চিড়া খাওয়ার কারণ ও উপকারিতা

তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে

সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ শরীর দীর্ঘ সময় ধরে কোনো খাবার ও পানীয় পায় না। চিড়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) থাকে, যা দ্রুত গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়ে শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। ফলে এটি ইফতারের জন্য একটি আদর্শ খাবার হতে পারে।

সহজে হজম হয় ও পাকস্থলীর জন্য আরামদায়ক

অনেকেই ইফতারে ভারী ও তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন। চিড়া ও দই খুব সহজপাচ্য খাবার, যা হজমে সহায়তা করে এবং পাকস্থলীর জন্য আরামদায়ক। বিশেষ করে, দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান হজমশক্তি বাড়ায় ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়।

পানিশূন্যতা দূর করে

রমজানে দীর্ঘ সময় পানি পান না করার ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। দই শরীরের পানিশূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করে এবং ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে। বিশেষ করে গরমের সময় রোজা রাখলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, যা পূরণ করতে দই বেশ কার্যকর।

পেট ঠান্ডা রাখে ও অ্যাসিডিটি কমায়

অনেকেই সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে ইফতারের সময় অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন। দই পাকস্থলীর জন্য একটি ঠান্ডা ও আরামদায়ক খাবার, যা গ্যাস্ট্রিক ও অম্লতার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

প্রোটিনের ভালো উৎস

দই উচ্চমানের প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি খাবার, যা শরীরের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং পেশি গঠনে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যারা রোজার সময়ও শারীরিক পরিশ্রম করেন বা ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদের জন্য চিড়া দই একটি ভালো বিকল্প। এটি কম ক্যালোরিযুক্ত এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।

হাড়ের জন্য উপকারী

দইয়ে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে রোজার সময় শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি না পেলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই ইফতারে দই খেলে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে (উৎসাহিত) করে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া দইয়ের ভিটামিন ও মিনারেল শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি জোগায়।

ঘুম ভালো হয় ও মানসিক চাপ কমায়

দইয়ে ট্রিপটোফ্যান নামে একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। রোজার সময় পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দই খাওয়া মানসিক প্রশান্তি আনতে পারে।

তাই এই রমজানে তেল-মশলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর চিড়া দই রাখতে পারেন ইফতারিতে, যা আপনাকে সুস্থ ও সতেজ রাখবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

What are the likely tax and duty measures in FY26?

These include steps to reduce the cost of doing business and align tax policies with the requirements of LDC graduation

1h ago