ধর্ষণ-নিপীড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে সংসদ ভবনের সামনে নারীদের সমাবেশ

ধর্ষণ, নিপীড়ন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নারীরা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর সংসদ ভবনের সামনে তারা এই প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
ঘটনাস্থল থেকে দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ জানান, বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশে অন্তত ২০০ জন নারী অংশ নেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি ও নারী অধিকার নিশ্চিত করাসহ নানা বক্তব্য সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তারা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তারা 'আজাদি, আজাদি' স্লোগান দিয়ে একটি র্যালির মাধ্যমে সমাবেশ শেষ করেন।
মানববন্ধনকারীরা এক জরুরি বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের সব নারীদের নিরাপত্তা এখন একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশজুড়ে সমাজের সব স্তরের নারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, নির্যাতন, ধর্ষণ, গণপিটুনি ও সাইবার বুলিংয়ের উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বরং এটি নারীদের বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত সহিংসতা ও ভয় দেখানোর ধারাবাহিক প্যাটার্নের অংশ।
'এর মাঝে ঢাকার শ্যামলীতে যৌনকর্মীদের ওপর হামলা, লালমাটিয়ায় দুই শিক্ষার্থীর ওপর জনসমক্ষে নির্যাতন ও হয়রানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি স্টাফের হাতে এক শিক্ষার্থীর হয়রানির ঘটনা, কক্সবাজারে হিজড়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, রংপুর ও জয়পুরহাটে মেয়েদের ফুটবল মাঠে আক্রমণ, আদিবাসী নারীদের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনের হয়রানি, এমনকি নিষ্ঠুর মব অ্যাটাক উল্লেখযোগ্য। নারীদের প্রতি সহিংসতার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও প্রতিশোধমূলক হামলা, হুমকি ও সংগঠিত মব অ্যাটাক এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।'

এতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা গণআন্দোলন এবং জনগণের বিচার, স্বাধীনতা ও বৈষম্যহীনতার দাবির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, এখন পর্যন্ত তাদের প্রতিশ্রুতি ও আকাঙ্ক্ষা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। নারীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করেনি, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনেনি। বরং তাদের নিষ্ক্রিয়তা এসব অপরাধকে আরও উসকে দিয়েছে। সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তা খুবই উদ্বেগজনক, যেন নারীদের ওপর হামলা ও ভয় দেখানো স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য ঘটনা।
'সরকারের প্রতিক্রিয়াগুলো কেবলমাত্র মুখের কথায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বিবৃতিগুলো নারীদের আশ্বস্ত করার পরিবর্তে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ভুল তথ্য, আইন ও বাস্তবতা সম্পর্কে বিভ্রান্তি তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, যা কিনা ঘটনার বিচার না করে বরং অপরাধীদের রক্ষা করেছে। নারী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর ওপর এই সংঘবদ্ধ হামলা, প্রকাশ্য বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ও উসকানিমূলক কার্যক্রম অবিলম্বে অবসানের দাবি জানাই। সাংবাদিকতার নৈতিকতার পরোয়া না করা গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন আচরণ—নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা আর এর প্রতিবাদ ভুলভাবে দেখানো অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি সহিংসতাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে, যা আমরা কখনো মেনে নেব না।'
অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর অপসারণ দাবি জানিয়ে বার্তায় বলা হয়, তার দায়িত্বহীন ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য জনমানুষের আস্থা নষ্ট করেছে। আমাদের দাবি, সব শ্রেণি, ধর্ম, জাতি ও পরিচয়ের নারী যেন নিরাপদে ও নির্ভয়ে তাদের অধিকার চর্চা করতে পারে। আমরা চুপ থাকব না। আমরা আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না আমরা একটি নিরাপদ, স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে পারি।
Comments