গাজার যুদ্ধবিরতি: ৫ দফায় মুক্ত ১৮ ইসরায়েলি জিম্মি ও ৫৫০ ফিলিস্তিনি বন্দি
![বাস থেকে নেমে আসছেন মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/09/screenshot_2025-02-09_084544.jpg)
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আবারও জিম্মি ও বন্দি বিনিময় করেছে ইসরায়েল ও হামাস। যার ফলে পাঁচ দফায় মুক্তিপ্রাপ্ত ইসরায়েলি জিম্মির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮। পাশাপাশি ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৫৫০ বন্দি।
গতকাল শনিবার এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
শনিবার সকালে হামাস তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। অপরদিকে, ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, তারা ১৮৩ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে।
মুক্তি পাওয়া বন্দিদের অধিকৃত পশ্চিম তীর, অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম ও গাজায় পাঠানো হয়।
১৯ জানুয়ারি থেকে চলমান চুক্তির আওতায় বন্দি-জিম্মি বিনিময়ের পঞ্চম দফা শেষ হলো।
তবে ইতোমধ্যে এই চুক্তির ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিস্ফোরক পরিকল্পনার প্রভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির আলোচনা ও বাস্তবায়নের সম্ভাবনা।
সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানান, তিনি গাজার দখল নিতে আগ্রহী। গাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের অন্য কোনো জায়গায় সরিয়ে নিয়ে তিনি ওই ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেবেন বলে জানান। পরবর্তীতে তার প্রশাসন এই অবস্থান থেকে খানিকটা পিছিয়ে আসলেও, সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
সতর্কতার মাঝে মুক্তি পেলেন ইসরায়েলিরা
![হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা জিম্মিদের ঘিরে রাখে। ছবি: এএফপি](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/09/afp_20250208_36xe9rl_v1_preview_palestinianisraelconflictgazahostage.jpg)
শনিবার সকালে উচ্চ মাত্রার নিরাপত্তা ও সতর্কতার মাঝে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির হাতে তুলে দেয় হামাস।
গতকাল মুক্তি পান এলি শারাবি (৫২), ওর লেভি (৩৪) ও ওহাদ বেন আমি (৫৬)।
গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর এল-বালাহ অঞ্চলে একটি মঞ্চে তিন জিম্মিকে উপস্থাপন করা হয়। সে সময় তাদেরকে ঘিরে রাখে হামাসের সশস্ত্র সংগঠন আল কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা।
জিম্মিদের হাতে ছিল মুক্তির সনদ, যা তারা উঁচিয়ে দেখান।
মঞ্চে সাজানো ব্যানারে লেখা ছিল, 'আমরা বন্যা, আমরাই যুদ্ধের পরবর্তী দিনের রচয়িতা'।
আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজৌম জানান, এ সময় উপস্থিত জনতা কাসাম ব্রিগেডের প্রতি সমর্থন জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যারা মুক্তি পেলেন
![মুক্তি পেয়েছেন হামাস নেতা জামাল আল তাউইল। ফাইল ছবি: সংগৃহীত](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/09/jamal_al_tawil.jpg)
মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সাতজনকে রামাল্লাহর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাত ফিলিস্তিনিকে মিশরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তারা ভিন্ন কোনো দেশে যাবেন।
মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ হামাসকর্মী রয়েছেন।
২০০০ সালের দিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা অংশ নেওয়ার অপরাধে হামাসকর্মী ইয়াদ আবু শাখদাম (৪৯) প্রায় ২১ বছর কারাবন্দি ছিলেন।
পশ্চিম তীরের স্বনামধন্য হামাস সদস্য ও রাজনীতিবিদ জামাল আল-তাউইল প্রায় ২০ বছর ইসরায়েলি কারাগারে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। এল-বিরেহ গ্রামের সাবেক এই মেয়রের বিরুদ্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগও ছিল না।
ইসরায়েলের নিন্দা
১৬ মাস আটক থাকার পর মুক্তি পাওয়া তিন ইসরায়েলিকে ছবিতে 'দুর্বল' দেখা গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলিরা।
এ বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম। দ্রুত বাকি জিম্মিদের মুক্ত করার দাবি জানিয়ে সংগঠনটি।
দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে ধোঁয়াশা
![মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হন। ছবি: রয়টার্স](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/09/released_.jpg)
প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধবিরতিতে মোট ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মি ও প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাবের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এতে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
হামাস আলোচনার এ পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী ভাবে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত রোডম্যাপ নিশ্চিত করতে চায়। অপরদিকে, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর ইসরায়েলি প্রশাসন। এ বিষয়টি নিয়ে চাপে আছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। এমন কী, যুদ্ধ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে শরীকরা বেঁকে বসতে পারেন—ভেঙে পড়তে পারে নেতানিয়াহুর জোট সরকার।
অপরদিকে, দরকষাকষির টেবিলে হামাসের একমাত্র হাতিয়ার এখন বাকি জিম্মিরা। ১৬ মাসের যুদ্ধে তারা বড় আকারে সামরিক সক্ষমতা হারিয়েছে। শীর্ষ নেতাদের সবাই নিহত হয়েছেন এবং যারা বেঁচে আছেন, তাদেরকে সারাক্ষণ লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে।
তাই খুব সহজে হামাস 'জিম্মি' নামের এই হাতিয়ার হাতছাড়া করতে চায় না বলেই জানা গেছে।
বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল যদি গাজায় 'জাতিগত নিধনের' কায়দায় জোর করে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নেয়, সে ক্ষেত্রে হামাস আলোচনা থেকে সরে যেতে পারে।
চুক্তির তৃতীয় পর্যায় হিসেবে গাজার পুনর্নির্মাণের কথা বলা হলেও মার্কিন কর্মকর্তারা এর বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, 'গাজা একটি ধ্বংসস্তূপ। এটি আর বসবাসের যোগ্য নেই।'
অপর এক মন্তব্যে তিনি গাজাকে পর্যটন বান্ধব জায়গা হিসেব গড়ে তুলে সারা বিশ্বের মানুষকে সেখানে থাকতে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে চেয়েছেন। বলেছেন, 'গাজা হবে মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা'।
![হামাসের আল-কাসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা জিম্মিদের ঘিরে রাখে। ছবি: এএফপি](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/images/2025/02/09/afp_20250208_36xf2gf_v1_preview_palestinianisraelconflictgazahostage.jpg)
এ মুহূর্তে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা নিয়ে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
যার ফলে আবারও মার্চে ইসরায়েলি হামলা শুরুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হবে চলতি যুদ্ধবিরতির মেয়াদ। নতুন আলোচনা বা চুক্তি সফল না হলে ইসরায়েল আবারও নেমে পড়বে হত্যাযজ্ঞে—যার বলি হয়েছেন গাজার ৬১ হাজার ৭০৯ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই সংখ্যা ১৪ হাজার ২২২ নিখোঁজ ফিলিস্তিনিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, তারা সবাই নিহত হয়েছেন।
২০২৩ এর নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে ১০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পেয়েছিলেন।
এর আগে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২৫০ জনকে জিম্মি ও এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। ওই ঘটনা সূত্রেই শুরু হয় গাজার যুদ্ধ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এখনো ৭০ জন জিম্মি গাজায় আছেন। তবে তাদের এক তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
Comments