বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমা এখন শেষ: আইসিজি
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে বিপুল সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল, তা অনেকটা কমতে শুরু করেছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)।
আইসিজি বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুধু অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির বিভেদ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে না, দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা নিয়েও জনসমালোচনার মুখে পড়েছে। এছাড়া, প্রতিশ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করতে তত চাপে পড়ছে।
গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও এর সদস্যদেশগুলো কী উদ্যোগ নিতে পারে, তা নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রাইসিস গ্রুপ তাদের মতামত তুলে ধরেছে।
ইইউ ও এর সদস্যদেশগুলো কোথায় শান্তির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে, তা চিহ্নিত করে প্রতিবছর ক্রাইসিস গ্রুপ 'ইইউ ওয়াচ লিস্ট' বা 'ইইউ পর্যবেক্ষণ তালিকা' প্রকাশ করে।
এ বছরের তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও ইউক্রেন, সিরিয়া, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম রয়েছে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শিরোনাম, 'বাংলাদেশ: গণতান্ত্রিক উত্তরণে উভয়সংকট'।
ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার ও বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট থমাস কিয়ান বলেছেন, 'বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমা এখন পুরোপুরি শেষ। রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ সংস্কার নিয়ে দরকষাকষি করায় এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় এই বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বাড়তে পারে। জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণেও অন্তর্বর্তী সরকার চাপে রয়েছে, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যবস্থাপনার উত্তরাধিকার হিসেবে তারা পেয়েছে।'
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, 'অর্থনীতিকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চলমান প্রচেষ্টার সুফল বাংলাদেশের জনগণের বাস্তবে পেতে আরও সময় লাগবে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে এখনো টানাপোড়েন রয়েছে আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।'
'এরপরও আগামী বছর বাংলাদেশের সামনে দেশটির জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং এটিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক করার একটি বিরল সুযোগ রয়েছে। এই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনগুলো কয়েক শ প্রস্তাব সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দিতে শুরু করেছে। এদিকে নির্বাচনী রাজনীতিতে বাংলাদেশের জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে,' যোগ করেন তিনি।
গণঅভ্যুত্থানে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার সমর্থকরা আশা করছেন, এই ভোট কেবল গণতন্ত্রই পুনরুদ্ধার করবে না, বরং ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী ও দমনমূলক শাসনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করবে।
থমাস আরও বলেন, 'সংস্কার প্রক্রিয়ার সমর্থনে এবং অন্তর্বর্তী সরকার যাতে বাংলাদেশকে একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হয় তা নিশ্চিতে আলাপ-আলোচনা, কারিগরি ও আর্থিকভাবে বিদেশি অংশীদারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে ইইউর সামনে গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন দেওয়ার এবং অত্যন্ত ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের একটি অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ এক বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ এনে দিয়েছে বাংলাদেশ।'
আইসিজির মতে, বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে ইইউ ও এর সদস্যদেশগুলোর যা করতে পারে:
বাংলাদেশে উচ্চপর্যায়ের সফর ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজে সমর্থনের ওপর জোর দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে; যাতে ড. ইউনূস সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাওয়া শক্তিগুলো দুর্বল হয়। পাশাপাশি নতুন অংশীদারি প্রতিষ্ঠা ও সহযোগিতামূলক চুক্তি করার চেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিকে কারিগরি এবং আর্থিকভাবে সমর্থন দেওয়া দরকার। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা, শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন ও মানবাধিকার রক্ষাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা দিতে পারে ইইউ। নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণে একটি নির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানো উচিত এ জোটের।
আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সমর্থন আদায় করে জাতীয় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে অবদান রাখতে পারে ইউরোপ; এতে অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার—আরও আকর্ষণীয় বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে। তৈরি পোশাক উৎপাদন খাতের বাইরে এনে দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার প্রচেষ্টায় সমর্থন, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত সম্পদ পুনরুদ্ধারে সহায়তা এবং ২০২৯ সালের পরও ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার বিস্তৃত করতে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা চালিয়ে যাওয়া দরকার।
ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এবং দুই দেশের মধ্যে অনাস্থা কাটিয়ে সম্পর্ককে ভালো অবস্থানে নিতে ইইউর উচিত হবে দুই পক্ষের ওপরই প্রভাব খাটানো। ইইউ ২০২৫ সালে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উচ্চপর্যায়ের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে নীরবে ভারতকে উৎসাহিত করা, যা বাংলাদেশের সংস্কারে আরও সহায়ক হবে।
রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা দরকার। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘের একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনে ঢাকার চেষ্টাকে সহায়তা প্রদান এবং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎসাহিত করতে হবে।
সংস্কারের জানালা
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন অভিমুখে লাখো বিক্ষোভকারী এগিয়ে আসায় আগস্টের শুরুতে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরও মাসখানেক আগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়, যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় চাকরির কোটা ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তায় নামেন। হাসিনার নিষ্ঠুরভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার শাসন নিয়ে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গণআন্দোলনে রূপ নেয়—যা তাকে সরে যেতে বাধ্য করে। শেখ হাসিনার পতন বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক মূহূর্ত।
অবশেষে, সেনাবাহিনী, ছাত্র নেতা এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত সিদ্ধান্তে ড. ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। দেশে ও বিদেশে ড. ইউনূসের প্রতি শ্রদ্ধা অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা আদায়, উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজনৈতিক সংস্কারকাজে সমর্থন জোগাড় ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠায় ছিল জরুরি। হাসিনাকে উৎখাতের সঙ্গে যে উচ্ছ্বাস মিশে ছিল, তা ইউনূসের প্রশাসনের জন্য ব্যাপক সমর্থনে রূপ নেয়। তবে সেই মধুচন্দ্রিমা শেষ। কেবল প্রতিশ্রুত সংস্কার নয়, দৈনন্দিন শাসন-ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্যও এ সরকারের ওপর জনগণের চাপ বেড়েছে।
এর একটি হলো, নতুন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ বাড়াচ্ছে। তফসিল ঘোষণা হলে বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে। গত ১৬ ডিসেম্বর ড. ইউনূস বলেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর অর্থ, তার প্রশাসন দুই বছরের কম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবে।
পুরোপুরি না হলেও এই ঘোষণা সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছে। সম্ভাব্য নির্বাচনে যথেষ্ট সময় থাকলেও বিএনপি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল (যেমন জামায়াতে ইসলামী) এবং ছাত্র নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেছে। ছাত্ররা এখন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনার ব্যাপারে নিশ্চিত।
নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণার বাইরেও নির্বাচনপ্রক্রিয়ার অনেক কিছু ও নির্বাচন-পরবর্তী সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ড. ইউনূস বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। চারটি কমিশন জানুয়ারির মাঝামাঝিতে তাদের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারকাজ চালানোর সুপারিশ করেছে তারা। মুহাম্মদ ইউনূসও একটি কমিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন। সব কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর তা নিয়ে তিনি সরকার রাজনৈতিক দলগুলো, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্য শক্তির সঙ্গে আলোচনা করবে। এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে এবং কোনগুলো বাদ দেওয়া হবে অথবা ভবিষ্যতের সরকারের জন্য রেখে দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে হাসিনার আওয়ামী লীগের প্রায় হারিয়ে যাওয়া, নেতাদের পলায়ন ও দেশের ভেতর দলটির কর্মকাণ্ড অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিএনপি। দলটি ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের অপেক্ষায় আছে বলে ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে এমন সম্ভাবনায় বাংলাদেশের অনেকেই আতঙ্কিত। অতীতে, বিশেষত বিংশ শতকের শুরুতে আওয়ামী লীগের মতো প্রায় একই রকমের স্বৈরশাসন দেখিয়েছে বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকার ও এর সমর্থকদের জন্য এটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয়, কেননা সরকারের সংস্কার কর্মসূচির লক্ষ্য দেশকে পুনরায় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন থেকে রক্ষা করা। অবশ্য ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারে জনগণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ড. ইউনূসের জন্য সুবিধাজনক হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিএনপি 'ভক্ষকের' ভূমিকা এড়াতে চাইবে।
রাজনৈতিক জটিলতা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকার অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি জনগণের অসন্তুষ্টির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক দুর্নীতি, আর্থিক খাতে তার সঙ্গীদের লুটপাট। সরকারের এক তদন্ত অনুযায়ী, অর্থনৈতিক খাতের অরাজকতা অন্তত ১০টি ব্যাংককে 'কার্যত দেউলিয়া' করে ফেলেছে।
ইউনূস যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছিল এবং খাদ্যমূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। নীতি নির্ধারণে উন্নতি ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয়গুলোতে যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগসহ তার পদক্ষেপগুলো অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য যে অনিশ্চয়তার বীজ বপন করা হয়েছে, তার ফলে অর্থনীতি এখনো স্থিতিশীল হতে পারছে না। বাংলাদেশিরা ক্রমাগতভাবে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগছে, বিশেষত খাবারের দামে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন করছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আশা করছে, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে এবং মুদ্রাস্ফীতি অর্ধেকে নেমে আসবে। তবে একটি উজ্জীবিত অর্থনীতির জন্য স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ উত্সাহিত করা, দুর্নীতি ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্য মোকাবিলা এবং নতুন খাতে বৈচিত্র্য আনতে সংস্কার প্রয়োজন।
অন্যদিকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের যুবক, ক্রমবর্ধমান সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি করবে।
বিভ্রান্তিকর তথ্য ও আঞ্চলিক উত্তেজনা
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে 'নতুন বাংলাদেশে' ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ উঠছে, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে, যারা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশে ইসলামপন্থী শক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে যদি সরকার উৎসাহ নাও দিয়ে থাকে, তবুও সরকারের বিরুদ্ধে এসব দেখেও না দেখার অভিযোগ উঠছে। প্রতিহিংসামূলক এসব অভিযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আসছে আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং ভারত থেকে। ভারত দীর্ঘসময় ধরে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে আসছে এবং হাসিনার সবচেয়ে শক্তিশালী সমর্থক ভারত। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও এসব অভিযোগ ছড়াচ্ছে এবং সেখানকার সমালোচকদের দাবি, বাংলাদেশ 'তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের মতো অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।'
হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর প্রথম কয়েক দিন। সে সময় পুলিশ ছিল না থানায়। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিন্দুরা ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে আগের সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধীরা এসব ঘটনাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। একটি প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে, ২০২৪ সালে হিন্দুদের ওপর ১২৭টি সহিংসতার ঘটনার কথা বলা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি হলেও ২০২১ সালের তুলনায় কম।
একইভাবে, এই অভ্যুত্থানের পেছনে ইসলামপন্থী শক্তির হাত ছিল এবং এখন সরকারের ওপর ওই শক্তির যথেষ্ট প্রভাব থাকার অভিযোগটিও বিভ্রান্তিকর। ইসলামোফোবিয়ার ওপর ভর করে ঢাকার প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন দুর্বল করার জন্যই এসব প্রচার করা হচ্ছে বলে মনে হয়। এমন আক্রমণাত্মক ধারার বেশিরভাগ দায় ভারতীয় মিডিয়া ও রাজনীতিবিদদের। সেইসঙ্গে হিন্দু প্রবাসীদের শক্তিশালী একটি গোষ্ঠীও আছে এর পেছনে, যারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার শেষ সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে কথা বলে রাজি করিয়েছিল।
এসব অভিযোগ তোলা এবং এর ব্যাপ্তির কারণে ভারতের সাথে সম্পর্ক রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার অসুবিধার মধ্যে পড়ছে। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রতি নয়াদিল্লির সমর্থন বাংলাদেশিরা ভালোভাবে দেখছে না এবং এতে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। ইউনূস সরকারকে ভারত দুর্বল করার চেষ্টা করছে এবং আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে—এমন ধারণা থেকেও বাংলাদেশিদের ভেতর ভারতবিরোধিতা বাড়ছে।
ভারত শুধু শেখ হাসিনাকে আশ্রয়ই দেয়নি বরং বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়াও কঠিন করে ফেলেছে। এছাড়া, নিয়মিতভাবে সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে ঢাকার সমালোচনা করছে।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খুব ঘনিষ্ঠ দেশটির অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ হাসিনার আমলের অর্থ পরিশোধ না করায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। এতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি আরও বেড়েছে। সীমান্তে ভারতের বেড়া দেওয়া নিয়ে বিরোধ শুধু উত্তেজনাই বাড়িয়েছে।
ভারতের মতো আঞ্চলিক পরাশক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার উপায় নেই ঢাকার। ভারত এখনো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশীদার। তবে অভ্যন্তরীণ জনমতকে উপেক্ষা করা যায় না। মাঝে মাঝে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নয়াদিল্লির আচরণের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। যেমন, গত সেপ্টেম্বরে হিন্দুদের দুর্গাপূজার আগে জনপ্রিয় জাতের (ইলিশ) মাছ রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে বাংলাদেশ। আবার, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করার একটি প্রকল্পও বাতিল করে ঢাকা। অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা বাংলাদেশিদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী কর্তৃক হত্যার বিষয়টিও তুলে ধরেছে ঢাকা। সীমান্থত্যা আগেও নিয়মিত হতো এবং হাসিনা সরকার উপেক্ষা করে যেত।
বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্তের অবস্থা আরও বেশি অস্থির। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা তীব্র হয়, জনপ্রিয় নেত্রী অং সান সুচিকে কারারুদ্ধ করা হয়। পশ্চিম মিয়ানমারে বেশ কয়েক বছর ধরেই সহিংসতা চলছে। বৌদ্ধ রাখাইন জাতির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ধীরে ধীরে রাখাইন রাজ্যের প্রায় পুরো অঞ্চল থেকে সামরিক শাসন নির্মুল করেছে। ডিসেম্বরে মংডু শহর দখল করে আরাকান আর্মি। আর তখন থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।
২০১৬-২০১৭ সালে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম যেসব এলাকা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল সেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণও আরাকান আর্মির হাতে। কিন্তু, ঢাকা আরাকান আর্মির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে অনিচ্ছুক, কারণ এটি কোনো রাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী নয়। এর মধ্যে আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্বিধা কাটিয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
ইইউ যা করতে পারে
হাসিনার পতনের পর নিজেদের জাতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে একে আরও অন্তর্ভুক্তি ও জবাবদিহিমূলক করে তোলার বিরল সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। এই সংস্কারকাজে সফল হতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মৌখিক, প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সমর্থন খুবই প্রয়োজনীয়। এবং ইইউর উচিত এই প্রক্রিয়ায় যথাসাধ্য সহায়তা করা।
এক্ষেত্রে একটি ভালো সূচনা হতে পারে ইউনূস সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানানো, যা বাংলাদেশ এবং ইউরোপে উচ্চপর্যায়ের সফরের মাধ্যমে কার্যকর হতে পারে। ইইউকে নতুন অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। গত জুলাইয়ে দেশ যখন সহিংসতার তুঙ্গে, তখন বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করেছিল ইইউ। নভেম্বরে তা পুনরায় শুরু হয়।
এ ধরনের সমর্থন আগামী মাসগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ তখন সরকারের ওপর চাপ বাড়বে। অন্যদিকে, সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে লাইনচ্যুত করতে বিরোধীদের চেষ্টা এবং দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চাপ অব্যাহত থাকবে।
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারের পতনের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, তা প্রতিরোধে ইইউ বেশ কয়েকটি ছোট ছোট প্রকল্পে সহায়তা দিতে শুরু করেছে, যার মধ্যে সুশীল সমাজকে সমর্থনও অন্তর্ভুক্ত।
নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে কাজ করার সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে ব্রাসেলসের সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো দমনমূলক আইন সংস্কারের মাধ্যমে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে ভূমিকা রাখা উচিত।
ব্রাসেলস এবং ইউরোপীয় রাজধানীগুলো যখন তাদের সমর্থন প্রদান করবে, তখন তাদের উচিত 'টিম ইউরোপ' হিসেবে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করা। যেমন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলো যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের সম্পদ ও দক্ষতা ভাগাভাগি করতে পারে। অন্যান্য দাতাদের সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ করতে পারে, যাতে একই প্রচেষ্টার পুনরাবৃত্তি না হয় এবং সরকারের সীমিত মানব ও প্রশাসনিক সম্পদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকারের সুরক্ষায় ইইউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দিতে চাইছে তাদের দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখতে ইউনূস সরকারকে উৎসাহ দিয়ে যাওয়া উচিত ইইউর।
রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নারীদের সুযোগ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতেও কাজ করতে হবে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তাদের ক্ষমতায়ন অব্যাহত রাখতে হবে।
এক্ষেত্রে ইউনূস সরকারের সহযোগিতা পাওয়ার কথা। অন্তর্ভুক্তি তাদের সংস্কার কর্মসূচির একটি স্তম্ভ। এই সরকারব্যবস্থায় বেশ কয়েকজন নারী ও সংখ্যালঘু নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে এ ধরনের উন্নয়ন পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইইউর সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে এলজিবিটিকিউআই অধিকার নিয়ে কথা বলার সময়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজে সহায়তার মাধ্যমে ইইউ বাংলাদেশে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবে। এর আগে সেখানে সাবেক সরকারকে অতিরিক্ত সমর্থন দিয়ে গেছে ইইউ, প্রায় সময় নিজেদের আর্থিক স্বার্থের দিকটিই শুধু বিবেচনা করেছে।
ইউরোপীয় কূটনীতিকদের মধ্যে কারও কারও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। এখন ইইউর উচিত, দেশটির সব রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে নিজেদের যোগাযোগ বাড়ানো। যাদের মধ্যে ছাত্রনেতা এবং ইসলামপন্থী গোষ্ঠীও রয়েছে। তারা এখন বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপটের একটি অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।
হাসিনার আমলকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি এই রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে সংস্কারকাজে সহায়তা করে এবং নির্বাচনের আগে উত্তেজনামূলক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলতে সাহায্য করার মাধ্যমে ব্রাসেলস বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও ভালোভাবে জায়গা করে নিতে পারে।
তিনটি ত্রুটিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচনী রাজনীতিতে বাংলাদেশের জনগণের আস্থা ফেরাতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ইইউর বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ব্রাসেলস একটি নজরদারি দল পাঠাতে পারে, যারা বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
বাণিজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংশীদার হিসেবে দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নেও সহায়তা করতে পারে ইইউ। অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে।
যদিও দেশটির আরও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় এবং তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা থাকায় (বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে)।
ইইউ নানাভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সাহায্য করতে পারে। প্রথমত, নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক খাতে বাড়তি সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আরও আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে উন্নত করতে পারে ইইউ। তা করতে শুল্ক ব্যবস্থাপনা ও আইনগত কাঠামোর সংস্কার এবং পোশাক শিল্পের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিতে পারে।
তৃতীয়ত, ইউরোপের দেশগুলোতে নিরাপদে এবং বৈধ পথে আরও অভিবাসী পাঠানোর পথ প্রশস্ত করার মাধ্যমে ইইউ বাংলাদেশের বৈদেশিক আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। যেমন ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে পারে।
এবং সর্বশেষ, হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, যারা অবৈধভাবে ইইউর বিভিন্ন দেশে সম্পদ গড়েছেন, সেসব দেশ নিজ নিজ দেশ থেকে সম্পদ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ইইউ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা নয়াদিল্লির কাছে জোর দিয়ে বলতে পারে, আওয়ামী লীগ এখন আর তাদের জন্য কার্যকরী নয়।
পরিশেষে, ইইউ এবং এর সদস্য দেশগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিরসনে তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যেতে পারে। গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক তহবিল অনেক কমে গেছে।
যদিও ইউরোপের কয়েকটি দেশ তাদের সহায়তা হ্রাস করেছে। এরপরও রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি দাতাদের একটি ইইউ।
Comments