সরকারের ভুল শুধরে গণতান্ত্রিক পথ সৃষ্টিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন
জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চাপ সৃষ্টি করতে বিএনপি 'দ্রুত আন্দোলনের দিকে যাবে' বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
আজ বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দেশের জনগণের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে দলের এই অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সরকার মাত্রই সিদ্ধান্তের মধ্যে ভুল করতে পারে... সেটা সব সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব সিদ্ধান্ত নির্ভুলভাবে নেবে এটা তো সঠিক নয়... ভুল তাদেরও হতে পারে। কিন্তু সেটা সঠিকভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব এদেশের সাংবাদিক সমাজের যেমন আছে, রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক শক্তি ও সামাজিক শক্তিগুলোরও আছে।'
'সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে চিন্তা করছি যে, সরকারের ভুল শুধরিয়ে সঠিক রাস্তায় এনে গণতান্ত্রিক রাস্তা বিনির্মাণের জন্য এবং একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের পথ পরিষ্কার করার জন্য আমরা খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবো... সেটাকে (পদক্ষেপ) আপনারা... সরকার আন্দোলনও বলতে পারেন, সমালোচনাও বলতে পারেন।'
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, 'মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মাঝে মধ্যে বলেন, যে আমরা বেশি বেশি করে যেন সমালোচনা করি যাতে সরকার সঠিক পথে থাকে। এই সরকারের একটি ভালো গুণ আছে তা হচ্ছে, সরকার মাঝেমধ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সমালোচনার মুখে সেই ভুলগুলো শুধরায়, গো ধরে বসে থাকে না। সরকার যখন ভুল শুধরায় তখনই মনে করতে হবে এই সরকার জনগণের সরকার।'
অন্তর্বর্তী সরকারকে সঠিক রাস্তায় রাখতে 'যথেষ্ট সমালোচনা'র ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, 'আজকের দিনে প্রশ্ন হচ্ছে যে, আমরা সামনের দিকে কী কী সংস্কার চাই, কীভাবে নির্বাচন চাই, কখন নির্বাচন চাই ইত্যাদি প্রশ্ন হচ্ছে এই সরকারের সফলতা, ব্যর্থতা, সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তহীনতা।'
'আমরা যদি এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল হতে দিতে চাই, তাহলে সরকারকে গাইড করার জন্য, পরিচালনা করার জন্য আমাদেরকে যথেষ্ট সমালোচনা করতে হবে। এমনকি আমাদেরকে সড়কে আন্দোলনও করতে হতে পারে সরকারকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার জন্য।'
জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা' শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
সংস্কার প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'নির্বাচন যদি বিলম্বিত করবেন, সেই যৌক্তিকতা আপনাদেরকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। ইতোমধ্যে ছয় মাস পার হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট দিয়েছে সরকারের কাছে। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলগুলো, সামাজিক শুক্তিগুলো ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলার কথা... রিপোর্ট প্রদানের পরে প্রায় ১৪/১৫ দিন পার হয়ে গেছে, সেই উদ্যোগ অবশ্য এখনো দেখা যায়নি। আমি আশা করি আপনারা (সরকার) যে সমস্ত বিষয়গুলো রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তিগুলো, বিশেষজ্ঞরা ঐকমত্য পোষণ করতে পারে, সেগুলো আগে চিহ্নিত করুন সংস্কারের মধ্যে।'
'সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো অত্যন্ত সুন্দর... বুঝলাম। কিন্তু সকল বিষয়গুলো কি এসেছে? অবশ্যই না। আবার কিছু বিষয় কি অতিরিক্ত এসেছে? অবশ্যই হ্যাঁ। আর কিছু বিষয় এসেছে যেগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে না... যে বিষয়গুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক কালচারে, সামাজিক কালচারে যায় না, সেইগুলো আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। কারণ যারা সংস্কার কমিশনের বসেছেন আপনারাও মানুষ... আপনাদের সব বক্তব্য রিকমেন্ডেশন ১০০ ভাগ সঠিক এমন কোনো নিশ্চয়তা নাই... সেজন্য আলোচনার কথা এসেছে।'
আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, 'আমরা বিভিন্নভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছি... কালকেও দেখলাম যে, আওয়ামী লীগ এ দেশে নির্বাচন করতে পারবে না... করতে দেওয়া হবে না... নিষিদ্ধ করা হবে। এ বিষয়ে আমরা পরিষ্কার বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে। যেই দল ফ্যাসিবাদী চরিত্রে দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যে দল দায়ী, যে দলের নির্ধারিত সরকার দায়ী... শেখ হাসিনা অনির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন, তার সিদ্ধান্তে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই দেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং ব্যক্তির সঙ্গে সেই সংগঠনের বিচার করতে হবে।'
'ব্যক্তির বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও অন্যান্য আদালতে মামলা হয়েছে। কিন্তু সংগঠন হিসেবে বিচার করার প্রভিশন সংবিধানের আর্টিক্যাল ৪৭ আছে... কিন্তু সংগঠনের বিচারের বিষয়ে আমরা তো ততবেশি সোচ্চার নই কেন?'
তিনি আরও বলেন, 'আপনরা শুনেছেন, সংগঠন হিসেবে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে একটা সংশোধনী আনার কথা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে সরকার সরে গেল। এখন যদি সরকারের অংশ হিসেবে কোনো কোনো উপদেষ্টা বলেন যে, আমরা আওয়ামী লীগের বিচার চাই।'
'তো বিচার চাওয়ার বিষয়ে আপনারা কিছু করলেন না। আর বিচার করার জন্য আমরা দাবি করছি, আপনারা দাবি করছেন, এদেশের জনগণ দাবি করছে ফ্যাসিবাদী শক্তি, গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণহত্যাকারী মানবতাবিরোধী অপরাধী যারা, তারা এবং সেই সংগঠনের বিচার হোক... বিচারের মাধ্যমে নির্ধারিত হোক... তা হলে জনগণ মেনে নেবে।'
ফ্যাসিবাদীবিরোধী জাতীয় ঐক্যে যাতে কোনো বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
নতুন দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ছাত্র নেতাদের সম্মান করি, তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করি, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়াসকে স্বাগত জানাই। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার জন্য যদি বিভিন্ন কৌশলে সরকারের শক্তিকে প্রয়োগ করতে হয়, সেটা হলে ফ্যাসিবাদকে দোষারোপ করে আপনার কি লাভ হবে?
'আমরা যদি অতীতের ইতিহাস অনুসরণ করি, তাহলে আমরা কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাব?'
সংবিধানের মৌলিক সংশোধনের বিষয় তুলে ধরে 'স্বাধীনতার সঙ্গে অন্যকিছু সমকক্ষ করা ঠিক হবে না' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সংগঠনের সভাপতি পার্থ সারথি দাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বাছির জামালসহ সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।
Comments