অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ

অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ছবি: এএফপি

জাতীয় ছুটির দিনে হাজারো অস্ট্রেলীয় নাগরিক দেশটির আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

অস্ট্রেলিয়ায় ১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ব্রিটেন থেকে ঔপনিবেশিক শাসকদের আগমন ঘটেছিল। দিনটিকে 'অস্ট্রেলিয়া ডে' হিসেবে উদযাপন করা হয়। 

তবে আজ রোববার সিডনি, মেলবোর্ন ও অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরে হাজারো মানুষ জমায়েত হয়ে দেশটির আদি জনগোষ্ঠীর সদস্যদের কারাবরণের উচ্চ হার, দুর্বল স্বাস্থ্য ও ঐতিহাসিক নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দেশটির প্রাচীনতম জনগোষ্ঠীগুলো ৬০ হাজার বছর আগে থেকে সেখানে বসবাস করছে।

১৭৮৮ সালের ২৬ জানুয়ারিতে একটি ব্রিটিশ নৌবহর সিডনি হারবারে এসে পৌঁছায়। জাহাজে ছিল ব্রিটেনের কারাগারে স্থানসংকুলান হয়নি এমন সব অপরাধী।

অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ছবি: এএফপি

মূলত, অস্ট্রেলিয়াকে একটি 'কারাগার-উপনিবেশ' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের উদ্দেশ্য।

অনেক অস্ট্রেলীয় নাগরিকের জন্য এই দিনটি বন্ধুপরিজনদের সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে বেড়ানো ও বাড়ির উঠানে বারবেকিউ করার মোক্ষম সুযোগ। পুরনো ইতিহাস নিয়ে তারা খুব একটা চিন্তা করেন না।

কিন্তু অধিকারকর্মীরা এই দিনটিকে 'আগ্রাসন দিবস' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাদের মতে, এই দিনটি থেকেই শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর ঔপনিবেশিক শোষণ। জোর করে ভূমিদখল, নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও শিশুদেরকে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার মতো নারকীয় সব অপরাধের সূত্রপাত এই দিন থেকেই।

মেলবোর্নে হাজারো বিক্ষোভকারী পথে নেমে আসেন। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, 'এই দিবস বাতিল করুন' এবং 'গণহত্যায় গর্বের কিছু নেই'।

আদিবাসী নারী ট্যামি মিলার বলেন, 'দিবসটি বদলানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। মূলত, আমরা চাই ওই দিনের পর থেকে যে অন্যায্য আচরণ করা হয়েছে (আদিবাসীদের প্রতি), সে বিষয়ে মানুষকে জানানো। ওই দিনে সাদা মানুষ (ব্রিটেন থেকে আসা শ্বেতাঙ্গরা) এসে যে অন্যায় আচরণ শুরু করেছে (আমাদের প্রতি), তা আজও অব্যাহত রয়েছে'।

'আমাদের পূর্বপুরুষ, দাদা-দাদী, নানা-নানীরা যেসব সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন, আমাদেরকেও একই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। কিন্তু বিক্ষোভে এত মানুষের সমাবেশ দেখে আমার গর্ব হচ্ছে', এএফপি আরও জানান ট্যামি।

সিডনি অপেরা হাউস। ছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়া ডের আগেই সিডনিতে ব্রিটিশ অভিযাত্রী জেমস কুকের মূর্তিতে লাল রঙ ঢেলে দেওয়া হয়। আরো কয়েক জায়গায় একই ধরনের ঘটনার কথা জানা গেছে।

২৬ জানুয়ারিকে ছুটির দিন হিসেবে নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরে অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

শুক্রবার সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের এক জরিপে জানা গেছে, গত দুই বছরে ছুটির দিনটির প্রতি সমর্থন ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশে পৌঁছে গেছে।

২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর আদিবাসীদের অধিকার সংস্কারের উদ্দেশ্যে সংবিধান সংস্কারের একটি উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এ ঘটনার পর আদিবাসীদের প্রতি মনোভাব বদলেছে বলে পত্রিকাটি মন্তব্য করে।

আনুষ্ঠানিক তথ্য মতে, অস্ট্রেলিয়ার ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে তিন দশমিক আট শতাংশ আদিবাসী।

অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়া দিবসে আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ছবি: এএফপি

আদিবাসীরা অন্যান্য অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের চেয়ে গড়ে আট বছর কম বেঁচে থাকেন। তাদের মধ্যে কারাবরণের হারও তুলনামূলকভাবে বেশি। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি এবং শিক্ষিতের হার কম।

Comments

The Daily Star  | English
special security for foreign investors in Bangladesh

Police, Bida launch special security measures for foreign investors

Held meeting with officials of foreign companies, introduced dedicated emergency contact line

3h ago