মধু খেলে কী উপকার, কীভাবে ও কতটুকু খাবেন

মধুর উপকারিতা
ছবি: সংগৃহীত

মধু প্রকৃতির অসাধারণ উপহার, যা স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য এবং রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রাকৃতিক, নিরাপদ এবং কার্যকর। তবে খাঁটি মধু ব্যবহার এবং সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দৈনন্দিন জীবনে মধু অন্তর্ভুক্ত করে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব।

আজকে জানব মধুর উপকারিতা। জানিয়েছেন সিলেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডায়াবেটিস এডুকেটর ও পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ বিজয়া।

পুষ্টিবিদ
পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ বিজয়া। ছবি: সংগৃহীত

মধু এক প্রাকৃতিক উপাদান, যা পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বহু প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি প্রাকৃতিক শক্তি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন।

মধুর পুষ্টি উপাদান

মধু একটি প্রাকৃতিক মিষ্টি খাদ্য এবং এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

সাধারণত ১০০ গ্রাম মধু থেকে পাওয়া যায়-

শক্তি (ক্যালরি): ৩০৪ ক্যালরি

শর্করা: ৮২.৪ গ্রাম (প্রধানত গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ)

প্রোটিন: ০.৩ গ্রাম

 চর্বি: ০ গ্রাম

ফাইবার: ০.২ গ্রাম

পানি: ১৭.১ গ্রাম

ভিটামিন সি: ০.৫ মিলিগ্রাম

বি-ভিটামিন (বি৬, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন) অল্প পরিমাণে

পটাশিয়াম: ৫২ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম: ৬ মিলিগ্রাম

ফসফরাস: ৪ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম: ২ মিলিগ্রাম

আয়রন: ০.৪২ মিলিগ্রাম

মধুর উপকারিতা

শক্তি সরবরাহকারী

মধু প্রাকৃতিক শর্করা (গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ) সমৃদ্ধ, যা দ্রুত শক্তি জোগায়। এটি শারীরিক পরিশ্রমের পর ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি বিভিন্ন জীবাণুজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

হজমের উন্নতি

মধু হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। এটি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ও বদহজমের সমস্যার সমাধান করে।

ওজন কমাতে সহায়ক

মধু শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় এবং অতিরিক্ত ফ্যাট কমাতে সহায়তা করে। সকালে কুসুম গরম পানির সঙ্গে মধু এবং লেবু মিশিয়ে পান করলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

ত্বকের যত্ন

মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে, ব্রণ কমায় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল রাখে। মধুতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

গলা ব্যথা ও সর্দি-কাশি নিরাময়ে উপকারী

মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং গলা ব্যথা ও সর্দি-কাশি থেকে দ্রুত আরাম দেয়। এটি শ্বাসতন্ত্রকে আরাম দেয় এবং কফ কমায়।

হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস

মধু রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়।

ক্ষত ও জখম সারাতে সহায়ক

মধুতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ রয়েছে। এটি ক্ষত বা পোড়া জায়গায় ব্যবহার করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

মানসিক প্রশান্তি

মধু মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক চাপ কমায় এবং ঘুমের মান উন্নত করে। রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু খেলে ঘুম ভালো হয়।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি

মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এটি মানসিক স্বচ্ছতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

অ্যালার্জি প্রতিরোধ

মধু নিয়মিত সেবন মৌসুমি অ্যালার্জির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সহায়ক

যদিও মধুতে চিনি রয়েছে, তবে এটি প্রাকৃতিক এবং রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ায় না। নির্দিষ্ট পরিমাণে মধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বার্ধক্য প্রতিরোধ

মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করে এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে।

চুলের যত্ন

মধু চুলের শুষ্কতা দূর করে, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং চুল পড়া রোধে সহায়তা করে। এটি চুলে প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য নিয়ে আসে।

সংক্রমণ প্রতিরোধ

মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান সমৃদ্ধ। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

পেটের আলসার নিরাময়

মধু হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সক্ষম, যা পেটের আলসারের প্রধান কারণ।

ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক

মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহনাশক বৈশিষ্ট্য শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয় এবং ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

মধু কীভাবে খাবেন

মধু খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে এবং এটি খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে উপভোগ করা যায়। কাঁচা মধু সরাসরি চামচ দিয়ে খেতে পারেন। সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

গরম পানির সঙ্গে মধু খেতে পারেন উপকার পেতে। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে ১-২ চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এতে লেবু যোগ করলে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।

চায়ের সঙ্গে চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। তাজা ফলের উপর মধু ঢেলে খান। দই বা দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ফল সালাদে ব্যবহার করতে পারেন। রুটি, পাউরুটি বা টোস্টে মধু মাখিয়ে খাওয়া যায়। মিষ্টান্ন বা হালুয়া তৈরিতেও চিনি বাদ দিয়ে মধু ব্যবহার করতে পারেন। সকালের নাস্তায় ওটস, দুধ বা সিরিয়ালের সঙ্গে মধু মেশাতে পারেন।

এ ছাড়া আদা, রসুন, কালোজিরা, অথবা তুলসি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি ঠান্ডা-কাশি উপশমে কার্যকর।

কতটুকু খাবেন

প্রতিদিন মধু খাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসের ওপর। সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দৈনিক ১-২ চা চামচ (প্রায় ১০-২০ গ্রাম) মধু খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী।

সতর্কতা

  • শিশুদের (১ বছরের কম) মধু দেওয়া উচিত নয়।
  • অতিরিক্ত মধু খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিমিত খাওয়াই ভালো।

     

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago