গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের সুযোগ বাড়াচ্ছে মৌ-পালন

ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই তিন মাস দেশজুড়ে সরিষার খেতগুলো বন্য ও পালিত মৌমাছির চারণভূমিতে পরিণত হয়। হলুদ এই ফুলের আকর্ষণে মৌমাছির দল শশব্যস্ত হয়ে পড়ে। সারাদিন ফুলে ফুলে বিচরণ করে সংগ্রহ করে পুষ্পরস। পুষ্পরস হচ্ছে মধু তৈরির প্রধান উপকরণ।
এই পুষ্পরস থেকে পাওয়া মধু সংগ্রহ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। অবদান রাখেন গ্রামীণ অর্থনীতিতে। অন্যদিকে, ফুলের পরাগায়ণের মাধ্যমে মৌমাছি কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
কাজটি শ্রম-ঘন হলেও মৌ-পালন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয়ের ভালো উৎস। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মধুর চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। সে হিসাবে গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই মৌ-পালন।
তবে এই শিল্পেও সংকট আছে। অনিশ্চিত আবহাওয়ার বিরুদ্ধে মৌমাছি পালকদের লড়াইয়ের পাশাপাশি মৌমাছির পরিবেশগত গুরুত্ব সম্পর্কে প্রতিনিয়ত শিখতে হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, খুলনা, বগুড়া, নওগাঁ, মাগুরা, সিলেট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে সরিষা, কালোজিরা, লিচু, আম, সূর্যমুখী, জলপাই ও বরইসহ অন্যান্য ফল-ফসলের ফুল থেকে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলে অনেক কৃষক ও মৌমাছি পালনকারী সরাসরি মধু উৎপাদনে জড়িত। তাদের আনুমানিক সংখ্যা ১০ থেকে ২০ হাজার।
তবে সরবরাহ ব্যবস্থার নানান পর্যায়ে মধু উৎপাদন ও বিপণনে জড়িতদের কথা বিবেচনা করলে আনুমানিক সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০ হাজার।
বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন ও কৃষি জরিপে জানা যায়, দেশে বছরে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন মধু উৎপাদিত হয়।
এর বেশিরভাগই সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে আসে। তবে গ্রাম ও মফস্বলে মৌমাছি পালনের কয়েকটি কাঠামোগত পদ্ধতি আছে।
ধারণা করা হয়, দেশে বছরে মধু ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টন। বিশেষ করে, ঢাকায় ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সচেতন জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মধু কেনেন।
দেশে গড়ে মাথাপিছু মধু ব্যবহারের পরিমাণ তুলনামূলক কম। দেশে বছরে মাথাপিছু মধু ব্যবহার হয় প্রায় ১০০ গ্রাম। পশ্চিমের দেশগুলোর তুলনায় তা অনেক কম।
নগরায়ণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক মিষ্টির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কারণে প্রতি বছর মধুর ব্যবহার পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে দেশে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার ১৭১ লাখ হেক্টর জমিতে মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মৌমাছি সাধারণত সরিষা ফুলের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। শুধুমাত্র পরাগ ও খাবারের উত্স হিসেবে নয়, সরিষা ফুল থেকে মৌমাছিরা সহজে মধু সংগ্রহ করতে পারে।
এই বছর ৯৩ হাজার ৪৭৮টি মৌমাছির বাক্স বসানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশা, এ থেকে ১৫ লাখ কেজি মধু পাওয়া যেতে পারে।
করোনা মহামারির পর সিরাজগঞ্জের গাড়ুদহের শাহাদাত হোসেন মৌমাছি পালনে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি আগে তাঁত কারখানায় কাজ করতেন।
এখন তার কাজ সরিষা খেত ও আম-লিচু বাগানকে ঘিরে।
এলাকায় 'মধু শাহাদাত' নামে পরিচিত ৫৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি প্রতি বছর সরিষা খেতে মৌমাছির বাক্স বসান। প্রতি বাক্সে এক ঝাঁক মৌমাছি থাকে। এর মধ্যে একটি রানি মৌমাছি ও প্রায় ৮০০ থেকে ১২ শ কর্মী মৌমাছি।
শাহাদাত জানান, রানি মৌমাছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিম দেওয়ার পাশাপাশি ফেরোমোন উত্পাদন করে মৌচাক নিয়ন্ত্রণ করে। মৌমাছিরা 'কুইন গেট' নামে ফাঁকা জায়গা দিয়ে চলাচল করে।
শাহাদত মৌমাছিদের চলাফেরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতি আট দিন পরপর বাক্সগুলোকে সরিষা খেতের নতুন নতুন দিকে নিয়ে যান। তিনি কাজ করার সময় অস্থায়ী তাঁবুতে থাকেন।
গত সপ্তাহে তিনি ৬৫ কেজি মধু সংগ্রহ করলেও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে চলতি সপ্তাহে তা কমে ৩৭ কেজি হয়েছে।
শাহাদাত তার উৎপাদিত মধু কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করে প্রতি মৌসুমে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা আয় করেন।
মধুর বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি গ্রামে ২৪ শতক জমি কিনেছেন।
তার ভাষ্য, 'নিজের বাড়ি ছিল না। এতদিন কালিদাসগাতীতে শ্বশুর বাড়িতে থাকতাম। এখন আমি গাড়ুদহে জমি কিনেছি। বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করছি।'
গান্ধাইলের মেহেদী হাসান মুরাদের মতো অনেক ক্রেতা শাহাদাতের মধু কেনার অপেক্ষায় থাকেন। তার কাছ থেকে পাওয়া মধু দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়।
শাহাদাতের পরিকল্পনা মৌসুমের বাকি সময় যমুনা নদীর পূর্ব তীরের চরাঞ্চলে গিয়ে থাকা। এরপর লিচু ফুলের মধুর জন্য ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর যাওয়া। তিনি ইতোমধ্যে মধু জোগাড় করতে লিচু বাগানের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
মধু উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জেলা সিরাজগঞ্জে উর্বর কৃষিজমি ও সরিষা খেত আছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ জেড এম আহসান শহীদ সরকার ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর জেলায় সরিষার আবাদ বেড়ে হয়েছে ৮৭ হাজার ১২৫ হেক্টর। গত বছর ছিল ৮৫ হাজার ১৭০ হেক্টর।
তিনি আরও বলেন, 'উচ্চ ফলনশীল সরিষার জাত বারি-১৪ কৃষকদের সবচেয়ে পছন্দের। এখানকার মাটিতে এই জাতের সরিষা ভালো হয় বলে এটি এখন বেশ জনপ্রিয়।'
সরিষা চাষ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ৪০০ টন মধু পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। গত বছর পাওয়া গিয়েছিল ৩৮২ টনের একটু বেশি।
তবে মৌমাছি পালন সহজ কাজ নয়। দীর্ঘ সময়, প্রতিকূল আবহাওয়া ও মৌসুমি অনিশ্চয়তা এটিকে সংকটময় পেশায় পরিণত করেছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মতো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও মৌমাছি পালনের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ, সহায়তা ও সচেতনতার মাধ্যমে দেশে মৌমাছি পালনের ভবিষ্যৎ আশাব্যঞ্জক বলে মনে হচ্ছে।
তবে, অনুকূল পরিবেশ, প্রশিক্ষণের সহজলভ্যতা ও মধুর ক্রমবর্ধমান চাহিদা সত্ত্বেও মৌমাছি পালনকারীরা বেশকিছু সংকটে পড়েন।
একটি প্রাথমিক সমস্যা হলো কৃষকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাঈদী রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরাগায়ণের সুফল পাওয়া সত্ত্বেও অনেক কৃষক এখনো মৌমাছিকে ফসলের জন্য হুমকি মনে করেন। এমন অনেকে আছেন যাদের ধারণা মৌমাছি ফসলের ক্ষতি করে। অথচ মৌমাছির পরাগায়ন ফলে ফলন ১৫ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।'
এমন ভুল ধারণা দূর করতে, কৃষকদের মৌমাছি পালন ও ফসল উৎপাদনে মৌমাছির ভূমিকা তুলে ধরতে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের আরেকটি বড় কেন্দ্র পাবনা। জেলার সুজানগর উপজেলায় গত ১৫ বছর ধরে মৌমাছি পালন করছেন মো. অলি প্রামাণিক।
তিনি পরিবারের সহায়তায় ৪০০টি মৌমাছির বাক্স পরিচালনা করেন। মৌমাছির যত্ন, বাক্স মেরামত ও মধু সংগ্রহের জন্য সারাবছর কাজ করেন।
গত জানুয়ারিতে তিনি একটি সরিষা খেতে ১২৫টি বাক্স বসিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন, মাস শেষে ৮০০ থেকে এক হাজার কেজি মধু পাবেন।
'প্রতি ১০ দিনে একটি বাক্স থেকে আড়াই থেকে তিন কেজি মধু পাওয়া যায়' জানিয়ে তিনি বলেন, 'খেতে বাক্স বসানোর পর মৌমাছিদের মধু সংগ্রহের জন্য কমপক্ষে ১০ দিন দিতে হয়। প্রত্যাশা অনুযায়ী মধু না পেলে বাক্সগুলো খেতের অন্যদিকে সরিয়ে নিই।'
শাহাদাতের মতো প্রামাণিকও সারা বছর একাধিক খেত ও ফসল নিয়ে কাজ করেন। তিনি সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের পর শীতে অন্যান্য ফসল ও গ্রীষ্মে লিচু বাগানে চলে যান।
কয়েক প্রজন্ম ধরে মৌমাছি পালন করায় এই পরিবার এখন এই বিষয়ে অভিজ্ঞ।
প্রামাণিকের ছেলে মো. সিরাজুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মধু সংগ্রহের প্রধান সময় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরিষা খেত থেকে মধু সংগ্রহ শুরু হয়। মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত লিচু বাগান থেকে মধু সংগ্রহ করি।'
'বর্ষায় কাজ থাকে না। তখন পরবর্তী মৌসুমের জন্য মৌমাছির পরিচর্যা ও বাক্স মেরামত করি।'
নানান জাতের উদ্ভিদ, বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি ও মধুর ক্রমবর্ধমান চাহিদাসহ অনুকূল পরিবেশের কারণে দেশে মৌমাছি পালন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এম এ হোসেন ও পরিচালক (গবেষণা) এসকে পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মৌমাছি পালনে বিনিয়োগ কম। লাভ বেশি।'
মধু ও মোমসহ অন্যান্য পণ্যের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে মৌ-পালন অবদান রাখতে পারে।
'দেশে মৌমাছি পালন—অবস্থা ও সম্ভাবনা' গবেষণায় তারা বলেন, 'উন্নতমানের পণ্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশের সুযোগের কারণে টেকসই মৌমাছি পালনের চাহিদা বাড়ছে।'
মৌমাছি পালনে আগ্রহ বাড়ছে। জৈবচাষের দিকেও কৃষকরা বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। তাই গত দশকে মধু উত্পাদন বেড়েছে। এই ক্রমবিকাশমান খাতের মাধ্যমে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অনেকে অনলাইন মধু বিক্রি করেছেন।
মধুর চাহিদা বাড়তে থাকায় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও এই শিল্পে এগিয়ে আসছে।
এসিআই লিমিটেড সরিষা, লিচু ও কালোজিরাসহ অন্যান্য ফুলের মধু উৎপাদন করছে।
এসিআইয়ের কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস মার্কেটিংয়ের ব্র্যান্ড ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম ইমরান ডেইলি স্টারকে জানান, সরিষা ফুলের মধু উৎপাদনে প্রাথমিক সংকট থাকলেও সারাদেশে এসিআইয়ের এই পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।
তিনি বলেন, 'ই-কমার্সের পাশাপাশি খুচরা বিক্রির মাধ্যমে আমাদের পণ্য সব জেলায় যাচ্ছে।'
মধু সংগ্রহ শুধু সরিষা খেতেই সীমাবদ্ধ নেই। সুন্দরবনসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকেও মধু আসে।
বিসিকের উন্নয়ন বিভাগের ব্যবস্থাপক আমিনা খাতুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর মৌমাছি পালকরা সাত হাজার ৪৪৯ দশমিক ৪০ টন মধু সংগ্রহ করেছেন। ধারণা করা হয়েছিল সাত হাজার টন মধু পাওয়া যাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'মধু উৎপাদন মূলত আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে বেশি মধু পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে আরও বেশি মধু পাওয়ার আশা করছি।'
এই শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিসিক নতুনদের প্রশিক্ষণে মূল ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছর ৪৮০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
'প্রশিক্ষণ শেষ করার পর প্রতি প্রশিক্ষণার্থীকে সহায়তার জন্য মৌমাছির বাক্স দিই।'
দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা ও খুলনা দেশের মধু উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এখনো সুন্দরবনের মধুর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে, খালিশা ফুলের মধু ভালোমানের মধু হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।
এই অঞ্চলে সরিষা ফুল থেকেও প্রচুর পরিমাণে মধু সংগৃহীত হয়।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর ৭৫ টন সরিষা ফুলের মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকটি এলাকায় সরিষা চাষ হয়নি।
তিনি বলেন, 'এ পর্যন্ত ২১ টন মধু সংগ্রহের তথ্য পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে জেলা মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদন পেলেই চূড়ান্ত তথ্য দিতে পারব।'
এর পরিমাণ ৫০-৫৫ টনের বেশি হবে না বলেও জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সদর থানার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা প্লাবনী সরকার ডেইলি স্টারকে জানান, সদর উপজেলায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আনুমানিক ১৬ হাজার ১২৫ কেজি মধু সংগৃহীত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।'
এই এলাকায় ১৫ মৌমাছি পালক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তারা দুই হাজার ৯৬০টি বাক্স বসিয়েছেন। গত বছর ছিল দুই হাজার ৬৪৩টি।
মাগুরাতেও সরিষা চাষ বেশ ভালো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইয়াছিন আলী ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর ২২ হাজার ৮৬২ হেক্টরে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছর ছিল ২২ হাজার ২১১ হেক্টর।
তিনি বলেন, 'মধু উৎপাদনের জন্য ১৪৪ জন সাত হাজার ৮৯৫টি বাক্স বসিয়েছেন। তারা মধু পেয়েছেন সাড়ে ২৭ টন। গত বছরের তুলনায় তা ৪৯ শতাংশ বেশি।'
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতলুবর রহমান ডেইলি স্টারকে জানান, 'জেলায় ৩৭ হাজার ৫০০ হেক্টরে সরিষা চাষ হয়েছে।'
তিনি দুপচাঁচিয়া, শেরপুর ও ধুনট উপজেলা পরিদর্শন করেছেন। সেখানে মৌমাছি পালকরা বিশেষভাবে সক্রিয়। তবে তারা জানান যে, সামনের পথটি সহজ হবে না।
শাহাদাত, অলি ও অন্যান্য মৌমাছি পালকরা আবহাওয়াসহ অন্যান্য সংকটের কথা জানিয়েছেন।
বিশেষ করে যখন মৌসুম শেষ হয়ে যায় বা যখন খুব কম পরিমাণে মধু পাওয়া যায় তখন মৌমাছির স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি সেগুলোকে উত্পাদনশীল রাখার জন্য খাওয়ানো উচিত।
শাহাদাত জানান, তার মৌমাছিদের চিনি খাওয়ানোর জন্য ৫০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে এক কেজি চিনির প্রয়োজন হয়।
মৌমাছি পালকদের জন্য আরেকটি সংকট হলো রানি মৌমাছি পরিচালনা করা। রানি মৌমাছিরা বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো কলোনি নষ্ট হয়ে যায়।
তাছাড়া উৎপাদন বাড়লেও মধু রপ্তানির সুযোগ তেমন নেই। মধু রপ্তানি হয় খুব অল্প পরিমাণে। ধারণা করা হয়, প্রতি বছর কয়েক শত টন মধু রপ্তানি হয়। গুণ-মান ঠিক রেখে রপ্তানি বাড়ানো এই খাতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে সংকটগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব। দেশের মধুশিল্প অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।
Comments