চুরি যাওয়া সম্পদ ফেরত পেতে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশের শত শত বিলিয়ন চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও বিশেষ কার্যাদির ফেডারেল মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিট, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেটংটার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সাবেক মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সহ অন্যান্যদের সঙ্গে।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনামলে বাংলাদেশে কীভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছিল তা খতিয়ে দেখার জন্য শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, থিংক ট্যাঙ্ক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে পাঠাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

লুৎফে সিদ্দিকী জার্মান মন্ত্রী উলফগ্যাং শ্মিটকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, সরকার এই বিষয়ে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

তিনি বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ জন অর্থ পাচারকারীকে তাদের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে চিহ্নিত করেছে।

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জার্মান মন্ত্রীকে বলেন, 'আমরা যখন নতুন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলি, তখন আমরা পরিষ্কার বাংলাদেশের কথাও বলি।'

প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে জার্মান সমর্থন চেয়েছেন এবং জার্মান মন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন।

জার্মান মন্ত্রী বলেন, এপ্রিলে একটি নতুন জার্মান ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ নেপালের জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা অন্বেষণের জন্য ভারত, নেপাল ও ভুটানকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চায়।

তিনি বলেন, 'নেপাল সত্যিই বিদ্যুৎ বিক্রি করতে প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ একটি ভালো বাজার। এটি প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।'

প্রধান উপদেষ্টা সুইস ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিসের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং জলবায়ু অর্থায়নসহ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তিনি সুইজারল্যান্ডকে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে কার্বন রোধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

তিনি সুইজারল্যান্ডকে বাংলাদেশের যুবসমাজের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের অবহিত করেন।

জার্মান মন্ত্রী এবং সুইস কাউন্সিলরের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করেন।

বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও কঙ্গোর রাষ্ট্রপতি ফেলিক্স শিসেকেদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়, বেলজিয়ামের একজন রাজপুত্রের নেতৃত্বে একটি গোষ্ঠীর চালু করা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি কীভাবে আফ্রিকান দেশটিতে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন সংরক্ষণের আকার সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে।

কঙ্গোর সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে ক্ষুদ্রঋণ প্রচলনকারী প্রিন্স ইমানুয়েল ডি মেরোড বলেন, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে সেখানে ২১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পর কঙ্গোর বন এখন ব্রিটেনের আকারের দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি এই অঞ্চলের কিছু অংশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট এবং জাহাজ চলাচলসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়েও আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান করতে চাই। কারণ আরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।'

বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীদের একজন সিনাওয়াত্রা বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের পর দুই দেশের মধ্যে যুব সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীর পিতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার একজন বড় ভক্ত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা থাই প্রধানমন্ত্রীকে 'থ্রি জিরো' ধারণা সম্পর্কে অবহিত করেন, যার লক্ষ্য দারিদ্র্য, সম্পদের ঘনত্ব, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে একটি আত্মবিধ্বংসী সভ্যতাকে উদ্ধার করা।

অধ্যাপক ইউনূস সিনাওয়াত্রাকে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে প্রায় ৫ হাজার 'থ্রি জিরো' ক্লাব রয়েছে।

থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন এই বছরের এপ্রিলে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত হবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি সংগঠনের পরিকল্পিত শীর্ষ সম্মেলনের সময় বিমসটেকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে আসিয়ানের একটি সেক্টরাল সংলাপ অংশীদার হতে এবং ফলস্বরূপ সংস্থার পূর্ণ সদস্য হতে থাইল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

7h ago