এবার পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলা, হাসপাতাল অবরোধ
গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পর এবার অধিকৃত পশ্চিম তীরে মনোযোগ দিয়েছে ইসরায়েল।
বুধবার পশ্চিম তীরের শহর জেনিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের একটি সরকারি হাসপাতাল ও নিকটবর্তী শরণার্থী শিবির অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। এ ছাড়া, পশ্চিম তীরজুড়ে বেড়েছে সেটেলারদের সহিংসতাও।
বর্তমানে ইসরায়েলের দখলকৃত ভূখণ্ডের গাজা ও পশ্চিম তীরেই বসবাস করেন সিংহভাগ ফিলিস্তিনি। গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পরপরই পশ্চিম তীরে আবারও সামরিক অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দেয় ইসরায়েল।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সাম্প্রতিক অভিযান ও অবরোধকে দেশটির 'নিরাপত্তা কৌশলের পরিবর্তন' বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে জেনিনের শরণার্থী শিবির ও আশেপাশের এলাকায় হতাহতদের কাছে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে আইডিএফ।
জেনিনের খলিল সুলাইমান সরকারি হাসপাতালের প্রধান উইজাম বাকের গার্ডিয়ানকে বলেন, 'এখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালের সামনের রাস্তাগুলো ভেঙে ফেলেছে। ভাঙা রাস্তার ধ্বংসাবশেষ এনে হাসপাতালের ফটকের সামনে ফেলে রেখেছে, যাতে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে বা বের হতে না পারে।'
তিনি আরও জানান, হাসপাতালের ভেতরে থাকা প্রায় ৬০০ মেডিকেল কর্মী ও রোগী এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অবরোধের কারণে হাসপাতালে খাবার সরবরাহও বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার হাসপাতালের সামনের রাস্তায় ইসরায়েলি বাহিনী দুজন নার্স ও তিনজন ডাক্তারকে গুলি করেছে বলেও জানান তিনি।
শুধু জেনিন না, পশ্চিম তীরের অন্যান্য ফিলিস্তিনি শহরের প্রবেশপথও বন্ধ করে রেখেছে আইডিএফ।
গার্ডিয়ান জানায়, আইডিএফের হামলার পাশাপাশি পশ্চিম তীরজুড়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেটেলারদের সহিংসতাও বেড়েছে। প্রান্তিক অঞ্চলের অনেক ফিলিস্তিনি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া, পশ্চিম তীরে রামাল্লাহর কাছাকাছি তুরমুস আয়া অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের গাড়ি ও সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করেছে সেটেলাররা।
এসব সাম্প্রতিক সহিংসতায় অন্তত ২১ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিন শিশুও রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার ইসরায়েলের কট্টরপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ ঘোষণা দেন, 'গাজা ও লেবাননের পরে আজ ঈশ্বরের ইচ্ছায় আমরা পশ্চিম তীরে নিরাপত্তা নীতির পরিবর্তন শুরু করেছি এবং এই অঞ্চলে সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান শুরু করেছি।'
গাজার গণহত্যাকেও 'সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান' বলে আখ্যা দিয়েছিল ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা।
ইসরায়েলের ওপেন ইউনিভার্সিটির সামরিক-বেসামরিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইয়াগিল লেভি গার্ডিয়ানকে বলেন, 'পশ্চিম তীরে এই অভিযানের কোনো যৌক্তিকতা নেই।'
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দুর্বল করতে এবং পশ্চিম তীরকে আরও অস্থিতিশীল করে সেখানে অবৈধ ইসরায়েলি বসতির সংখ্যা বাড়াতে এসব সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে বলে মনে করেন লেভি।
তিনি বলেন, পশ্চিম তীরে অভিযান চালানোর নিশ্চয়তা পাওয়াতেই গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছিলেন স্মৎরিচ। তিনি রাজি না হলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের সম্ভাবনা ছিল বলেও দাবি লেভির।
Comments