কতটা গুরুতর চীনে ছড়ানো ‘নতুন ভাইরাস’
কোভিড মহামারি শুরুর ঠিক পাঁচ বছর পর চীনে আরেক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যাচ্ছে। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নামের এই ভাইরাসের খোঁজ চীনের মতো প্রতিবেশী জাপানেরও কিছু অঞ্চলে পাওয়া গেছে। আজ সোমবার ভারতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এইচএমপিভি কেমন ভাইরাস? এটি মানবদেহের জন্য কতটা বিপজ্জনক? এই ভাইরাসেও কি কোভিডের মতো মহামারি বা অতিমারি হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
এইচএমপিভি কী?
নতুন আতঙ্ক এইচএমপিভিও কোভিডের মতো একটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যা ফ্লু বা সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে। তবে এটি বৃদ্ধ, শিশু এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এমন ব্যক্তিদের ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো গুরুতর রোগের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
করোনার মতো আরএনএ ভাইরাস হলেও এইচএমপিভি একই ভাইরাস পরিবারের সদস্য না। এটি শ্বাসতন্ত্র-জনিত সিন্সিশিয়াল ভাইরাসের (আরএসভি) পরিবারভুক্ত। ২০০১ সালে প্রথম নেদারল্যান্ডসে শনাক্ত হয় এ ভাইরাস। শীতকালে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে।
এইচএমপিভি কীভাবে ছড়ায়? লক্ষণ কী?
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা শ্বাসতন্ত্র থেকে বেরোনো যেকোনো কিছুর সংস্পর্শে এলে অথবা সংস্পর্শে আসা কোনো জায়গার সংস্পর্শে এলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
এই ভাইরাসের লক্ষণ সাধারণ সর্দি বা ফ্লুর মতো। লক্ষণের মধ্যে আছে কাশি, জ্বর, অবসাদ ও নাক বন্ধ থাকা। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার তিন থেকে ছয় দিনের মাথায় লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া শুরু করে।
কোভিডের মতো এর কোনো টিকা বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই। মূলত লক্ষণগুলো সামলানোর মাধ্যমেই এর চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রোগটি কতটা গুরুতর?
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্যের সিনিয়র লেকচারার ড. জ্যাকলিন স্টিফেনসের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, যে কয়টি ভাইরাসের সংক্রমণকে সাধারণ 'ঠাণ্ডা লাগা' হিসেবে শনাক্ত করা হয়, তার একটি এইচএমপিভি। কোভিড বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো গুরুতর কিছু না এই ভাইরাস।
'সাধারণত এই ভাইরাসের সংক্রমণ আমরা টের পাই না, কারণ এর লক্ষণ খুবই সাধারণ এবং অনেকেই সংক্রমিত হয়। এতে আপনি কয়েকদিন অসুস্থ থাকবেন, কিন্তু ঠিকমতো বিশ্রাম ও শরীরের যত্ন নিলে আবার ভালো হয়ে যাবেন,' বলেন স্টিফেনস।
তবে বৃদ্ধ, ছোট শিশু এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এমন ব্যক্তিরা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তাদের ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আক্রান্ত হয়ে গেলে অসুস্থ ব্যক্তিকে এসব রোগের চিকিৎসা দিতে হয়।
কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব নিয়ে ছড়ানো উদ্বেগকে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্ররোচনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
আজ সোমবার দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়কে বলা হয়, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র থেকে এ নিয়ে কোনো সতর্কতা আসেনি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো প্রতিবেদন নেই। কিন্তু, চীনে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবের খবরের ভেসে যাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম।'
শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এক বিবৃতিতে বলেন, 'শীতে শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন বাড়ে। তবে এই (এইচএমপিভিতে ছড়ানো) রোগগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর।'
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে চীনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কম হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচএমপিভি শনাক্তে নতুন প্রযুক্তি আসায় সম্প্রতি এর সংক্রমণের হার বেশি দেখাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পল গ্রিফিন গার্ডিয়ানকে জানান, 'এই ভাইরাস নিয়ে মহামারির উদ্বেগ দেখতে পাচ্ছি না। তবে সংক্রমণের সংখ্যা আসলেই বেড়েছে।'
বিশ্লেষকরা বলছেন, এইচএমপিভি সংক্রমণ কোভিড-১৯ এর মতো গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ গত কয়েক দশক ধরে এই ভাইরাস বিরাজ করছে। অতীতের সংক্রমণের কারণে বৈশ্বিক জনসংখ্যার একটি বড় অংশের এই রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। কোভিড-১৯ ছিল একদম নতুন রোগ। মানুষ আগে এতে সংক্রমিত না হওয়ায় বৈশ্বিক মহামারির রূপ নিয়েছিল এটি।
Comments