রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের নামে ভুয়া পেজ থেকে সমন্বয়কদের হুমকি

ছবি: রিউমর স্ক্যানার

নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নামে ফেসবুকে পরিচালিত একটি ভুয়া পেজের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্যাক্টচেকিং প্লাটফর্ম রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ।

রিউমর স্ক্যানার জানায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে 'Hussain Saddam' নামের একটি পেজের পোস্টের স্ক্রিনশট প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, এটি সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত হওয়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ফেসবুক পেজের পোস্ট। কথিত ওই পোস্টে বলা হয়েছে, '১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কের তালিকা অনুযায়ী পরিবারের সদস্য ও ঠিকানা সংগ্রহ শুরু হয়েছে, একটাকেও পালাতে দেয়া হবে না।'

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের হুমকি দিয়ে পোস্ট দেওয়া 'Hussain Saddam' নামের আলোচিত পেজটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের আসল ফেসবুক পেজ নয়, বরং এটি সাদ্দাম হোসেনের নামে ফেসবুকে পরিচালিত একটি ভুয়া পেজ। প্রকৃতপক্ষে পেজটি ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর 'শেখ ফজলে শামস পরশ' নামে চালু করা হয়েছিল এবং চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিন বার পেজটির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সেই দাবির সত্যতা যাচাইয়ে সমন্বয়কদের হুমকি দেওয়া আলোচিত পোস্টটির সূত্রধরে সাদ্দাম হোসেনের নামে পরিচালিত পেজটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার। পেজটির বায়োতে 'আমার আগের পেজ নষ্ট হইয়া গেছে এই পেজটি সবাই ফলো করবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ' শীর্ষক লেখা দেখা যায়। এই বাক্যটির বানানে কিছু অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়; যা একটি ছাত্রসংগঠনের সভাপতির অফিশিয়াল পেজের সঙ্গে মানানসই নয়। 

এ ছাড়াও, পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পেজটি ২০১৯ সালের ২৬ নভেম্বর চালু করা হয়েছিল। সেসময় পেজটির নাম ছিল 'শেখ ফজলে শামস পরশ'। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'Md Nuyed Miah'। এরপর চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি আবারও পেজটির নাম পরিবর্তন করা হয়। এবার নাম রাখা হয় 'Md Nuyed Miah MP'। এরপর সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ আগস্ট পেজটির নাম পরিবর্তন করে 'Hussain Saddam' রাখা হয়। অর্থাৎ, 'শেখ ফজলে শামস পরশ' নামে পেজটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন (৫ আগস্ট) পরবর্তী সময়ে এই পেজটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নামে রাখা হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার বলছে, পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পেজটি বর্তমানে চারজন এডমিন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে; যাদের সবাই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।  

পরবর্তী অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক পোস্টে বলা হয়, 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ভেরিফায়েড পেজ এবং ব্যক্তিগত আইডি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্টিং এর কারণে এখনো সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি। ফেসবুক পেজ বা আইডি চালু হলে জানিয়ে দেয়া হবে। বিভিন্ন ফেক পেজ ও আইডির বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। ফেক আইডি বা পেজের পোস্টের আলোকে ভুল তথ্য না ছড়ানোর জন্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে।'

সেই পোস্টে সাদ্দাম হোসেনের বর্তমানে ব্যবহৃত ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টের লিংকও শেয়ার করা হয়।

সেই পোস্ট থেকে এটা নিশ্চিত যে, আলোচিত ফেসবুক পেজটি সাদ্দাম হোসেনের নয় বরং এটি তার নামে পরিচালিত একটি ভুয়া পেজ।

পাশাপাশি সংগঠনটির ফেসবুক পেজে গত ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত পোস্টে সাদ্দামের পূর্বের ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানানো হয়। সেই পেজ ও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি কিছুদিন আগে একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট চালু করেছিলেন। তবে সেটিও বর্তমানে নিষ্ক্রিয় রয়েছে।

বর্তমানে ফেসবুকে সাদ্দাম হোসেনের কোনো পেজ কিংবা অ্যাকাউন্ট চালু নেই।

রিউমর স্ক্যানার জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের হুমকি দিয়ে দেওয়া 'Hussain Saddam' নামের একটি ভুয়া ফেসবুক পেজের পোস্টকে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের পেজের পোস্ট দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lost over Tk 226,000cr for tax evasion: CPD

CPD estimated that around 50 percent of this amount has been lost to corporate tax evasion.

2h ago