চুরি করা হাঁস রান্নায় রাজি না হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেই নারীকে খুন দাবি পরিবারের

অভিযুক্ত রনি। ছবি: স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চুরি করে আনা রাজহাঁস রান্না করতে রাজি না হওয়ায় নারীকে হত্যার পর মরদেহ পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীর পরিবারের।

অভিযুক্ত ফারহান রনি এর আগেও বেশ কয়েকবার হাঁস চুরি করে এনে তাকে দিয়ে রান্না করিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই ঘটনায় দায়ের করার মামলার বাদী ও নিহতের বড় মেয়ে রুমা আক্তার এসব অভিযোগ করেছেন।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শারমিন বেগম ও তার স্বামী নুরুল ইসলাম প্রায় ৪০ বছর ধরে রনির বাবা স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার হীরাপুর গ্রামের একটি জায়গায় ঘর করে বসবাস করছিলেন। আগে শাহনেওয়াজের বাড়ির কাজকর্মে সহযোগিতা করতেন তিনি। এখন ভিক্ষাবৃত্তি ও মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিনাতিপাত করতেন। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ঘটনার দিন ভোরে রনি তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে শারমিনকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তার মরদেহ উদ্ধার হয়।

নিহতের বড় মেয়ে রুমা আক্তারের দাবি, রনি তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে ডেকে নিয়ে চুরি করা রাজহাঁস রান্না করে দিতে বলেন শারমিনকে। এতে রাজি না হওয়ায় রনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করে নৃশংসভাবে জবাই করে এবং পরে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এর আগেও অনেকবার অভিযুক্ত রনি হাঁস চুরি করে নিয়ে শারমিনকে দিয়ে রান্না করিয়েছেন।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীর বাজার এলাকার এনামুল ও রোমান—দুই ভাইয়ের কয়েকটি রাজহাঁস চুরি হয়। মঙ্গলবার সকালে তারা চুরি যাওয়া রাজহাঁস খুঁজতে যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার বাড়িতে যান। সেখানে তারা ভাঙা ও পরিত্যক্ত টিনের ঘর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখেন এবং পোড়া গন্ধ পান। সেসময় ওই ঘরের পাশে ছিলেন শাহনেওয়াজের ছেলে রনি। তিনি জানান, শুকনো পাতায় আগুন দিয়ে তাপ নিচ্ছেন। তবে এনামুল ও রোমান তার কথায় বিশ্বাস না করে ঘরে ঢুকে ভেতরে কী দেখতে চাইলে রনি তাদেরকে বাধা দেন এবং মারধরের হুমকি দেয়। এতে সন্দেহ আরও বাড়লে ওই দুই ভাই কিছু সময়ের মধ্যেই গ্রামের আরও কয়েকজনকে নিয়ে গিয়ে গর্তের মধ্যে মানবদেহ পুড়তে দেখে চমকে যান। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, রনি মাদকাসক্ত এবং চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রনি 'অসংলগ্ন' কথাবার্তা বলছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মরদেহ উদ্ধারের সময় ছিলেন আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনুর ইসলাম। তিনি জানান, পুরো শরীর পুড়ে যাওয়ায় এবং দেহে মাথা না থাকায় প্রথমে মরদেহের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি। তবে পোড়া হাতে চুড়ি থাকায় দেহটি কোনো নারীর বলে ধারণা করা হয়। পরে মাথা উদ্ধার হলে নাম-পরিচয় শনাক্ত হয়।

জানতে চাইলে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় নিহত শারমিন বেগমের বড় মেয়ে রুমা আক্তার বাদী হয়ে ফারহান রনিকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি একেক সময় একেক কথা বলেছেন। পুলিশ আজ তাকে আদালতে পাঠিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন। পুলিশের ধারণা, তুচ্ছ কোনো বিষয় নিয়েই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Secretariat entry passes for all private individuals cancelled

Journalists' accreditation cards also cancelled until further notice

37m ago