অ্যাজমার কারণ ও লক্ষণ, চিকিৎসা কী

অ্যাজমা বা হাাঁপানি
ছবি: সংগৃহীত

অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অ্যাজমা আক্রান্তের সংখ্যাও। শীতকালে বাড়ে রোগের প্রকোপ।

অ্যাজমা কেন হয় ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।

হাঁপানি বা অ্যাজমা কী ও কেন হয়

অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, শ্বাসনালীর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত সমস্যাই হচ্ছে হাঁপানি বা অ্যাজমা। বিভিন্ন উদ্দীপকের প্রভাবে শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হলে শ্বাসনালী ফুলে যায় এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। প্রদাহ শ্বাসনালীকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। ফলে শ্বাসনালী সংকুচিত হয় এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।

হাঁপানি কেন হয় তার কারণ এখনও অজানা। তবে যে কারণগুলো হাঁপানি রোগের উৎপত্তি বা স্থায়ীত্বকে বেশি প্রভাবিত করে তার মধ্যে জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণ অন্যতম।

১.  জেনেটিক ও বংশগত কারণে অ্যাজমা হতে পারে। বংশে কারো অ্যাজমা থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

২. পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে অ্যাজমা হতে পারে। যেমন- বায়ু দূষণ, ধোঁয়া, ধুলাবালি বা মাইট, পরাগ রেণু, কুকুর, বিড়ালসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণীর লোম থেকে হতে পারে।

৩. কারো কারো অ্যালার্জির কারণে অ্যাজমা হতে পারে।

৪.  প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ, ব্যায়ামের কারণে হতে পারে।

৫.  গর্ভাবস্থায় অ্যাজমা হতে পারে।

৬. ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে অ্যাজমা হতে পারে।

৭. পেশাগত কারণে যেমন- বিভিন্ন কারখানার রাসায়নিক দ্রব্য, ঝাঁজালো গন্ধ বা দুর্গন্ধ, কারখানার পরিবেশ অ্যাজমার কারণ হতে পারে।

৮. বিভিন্ন ওষুধ আছে যেগুলো অ্যাজমাকে প্রকট করে।

৯.  অনেক সময় মানসিক চাপ, আবেগ প্রবণতার কারণে অ্যাজমার তীব্রতা বাড়তে পারে।

শিশু থেকে বয়স্ক যেকোনো বয়সেই অ্যাজমা হতে পারে। তবে ৬ বছরের নিচে এই সমস্যাকে ব্রঙ্কিওলাইটিস বলা হয়।

লক্ষণ

ট্রিগার অর্থাৎ এমন বিষয় বা উপাদান যা অ্যাজমার উপসর্গগুলোকে উদ্দীপ্ত করে শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে অ্যাজমার লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন- শ্বাসকষ্ট হয়, কাশি বা শুকনা কাশি, বুকে চাপ অনুভূত হয়, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে বাঁশির মতো শব্দ হয়। হাঁপানি রোগে সবার ক্ষেত্রে সব লক্ষণ থাকবে এমনটা নয়।

চিকিৎসা

অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, অ্যাজমার চিকিৎসায় উপশমকারী এবং প্রতিরোধকারী এই ২ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। তাৎক্ষণিকভাবে রোগ উপশমের জন্য সালবিউটামল জাতীয় উপশমকারী ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে, যা শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।

স্টেরয়েডসহ কিছু প্রতিরোধকারী ওষুধ আছে যেগুলো অ্যাজমা প্রতিরোধের জন্য দেওয়া হয়। বিভিন্নভাবে এগুলো প্রয়োগ করা যায়। যেমন- ইনহেলার পদ্ধতিতে, ট্যাবলেট বা সিরাপ, নেবুলাইজার, ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয় অ্যাজমার চিকিৎসায়। ইনহেলার ও নেবুলাইজার অ্যাজমার চিকিৎসায় ভালো কাজ দেয়।

অ্যাজমার অনিয়মিত চিকিৎসা বা সঠিক চিকিৎসা না হলে দীর্ঘমেয়াদে রোগের জটিলতা বাড়ে। সবসময় শ্বাসকষ্ট হবে, কাশি হবে। এতে করে রোগীর কার্যক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হবে। তাই হাঁপানির সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রতিরোধ

অ্যালার্জি অ্যাজমার কারণ হতে পারে। তাই অ্যালার্জি হয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি কোনো খাবারে অ্যালার্জি হয় সেগুলো পরিহার করতে হবে। ধূমপান পরিহার করতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে না যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ধূলাবালি, ধোঁয়া, পরাগ রেণু, প্রাণীর লোম থেকে দূরে থাকতে হবে।

ব্যাথানাশক বিভিন্ন ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের বিভিন্ন ওষুধ অ্যাজমার ট্রিগার করে সেগুলো পরিহার করতে হবে এবং মানসিক চাপ কমাতে হবে। ঘরবাড়ি, বিছানা, বালিশ, মশারি এবং ব্যবহৃত পোশাক সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। যাদের হাঁপানির মাত্রা বেশি তারা প্রতি বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন নিতে পারেন। কারণ ভ্যাকসিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে আর ইনফ্লুয়েঞ্জা কম হলে অ্যাজমা প্রতিরোধ সহজ হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Domestic tourism heats up this winter

The local tourism industry was suffering from apprehension over the loss of business amid a long recession stemming from mass unrest, which began in July

2h ago