অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ

ভারতকে হারিয়ে আবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

ছবি: বিসিবি

ব্যাট হাতে পুঁজিটা খুব বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ। কোনোমতে দুইশর কাছাকাছি পুঁজি। তখন মনে হয়েছিল, ৩০/৪০ রান কম করেছে তারা। তবে তাই নিয়ে বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং। বিশেষ করে পেসারদের। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইকবাল হোসেন ইমন। তাতে দারুণ এক জয়ে যুব এশিয়া কাপের শিরোপা ধরে রাখল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারতকে ৫৯ রানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে যুব টাইগাররা। জবাবে ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল।

এই প্রতিযোগিতার প্রথম নয় আসরে কোনো শিরোপা ছিল না বাংলাদেশের। ২০২৩ হওয়া গত আসরে এই মাঠেই স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ফাইনালে হারিয়ে খরা ঘোচায় তারা। সাফল্যের ধারা বজায় রেখে এবার তারা টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।

এদিন শুরু থেকেই দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে যুবারা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আসে সাফল্য। আইয়ুস মার্থেকে (১) বোল্ড করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন আল ফাহাদ। তাতে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় ভারত।

পঞ্চম ওভারে মারুফ মৃধাকে দুটি বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আঘাত হানতে চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ভাইভাব সুরিয়াবানশি (৯)। তবে আরও একটি মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। গ্যালিতে শিহাব জেমসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সেই ওভারেই ফিরে আসেন তিনি।

তিন নম্বরে নামা আন্দ্রে সিদ্ধার্থ সেট হয়ে গিয়েছিলেন। ৩৫ বলে ২০ রানও করেন। তবে বড় ক্ষতি করার আগে তাকে বোল্ড করে দিয়ে সাজঘরের পথ দেখান রিজান হোসেন। টপ অর্ডারের তিন উইকেট তুলে তখন ভারতীয়দের চেপে ধরে বাংলাদেশ।

এরপর কেপি কার্থিকেয়াকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ভারতীয় অধিনায়ক মোহামেদ আমান। ২৯ রানের জুটিও গড়েন তারা। তবে ১৩তম ওভারের এই জুটি ভাঙার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। দুই প্রান্তেই রানআউট করার সুযোগ নষ্ট করেন বোলার ইকবাল হোসেন ইমন ও উইকেটরক্ষক ফরিদ হাসান।

পরের ওভারে ভারতীয় ব্যাটারদের সঙ্গে তর্কেও জড়িয়ে পড়েন টাইগাররা। তাতে উত্তেজনা বাড়ে ম্যাচে। কার্থিকেয়া দুটি বাউন্ডারি মেরে মোমেন্টাম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালান। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি।

২১তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে এনে দেন ইমন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কার্থিকেয়াকে উইকেটরক্ষক ফরিদের ক্যাচে পরিণত করে ভাঙেন জুটি। ২১ রান আসে কার্থিকেয়ার ব্যাট থেকে। এক বল নিখিল কুমারকেও (০) একইভাবে ফেরান ইমন। তাতে বিপদেই পড়ে যায় ভারত।

পরের ওভারে ফিরে সেই বিপদ আরও বাড়ান ইমন। এবার ফেরান হারভানশ পাঙ্গালিয়াকে (৬)। তাকেও উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করেন এই পেসার। অবশ্য এক বল আগেই ফিরতে পারতেন। থার্ডম্যানে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন হারভানশ। তবে সে সুযোগ লুফে নিতে পারেননি রিজান।

পরের ওভারে আল ফাহাদকে আক্রমণে ফিরিয়ে আনেন অধিনায়ক আজিজুল হাকিম। দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পান। কিরান চোরমালেকে (১) উইকেটরক্ষকের ক্যাচে পরিণত করে লেজ বের করে আনেন ভারতের।

তবে গলার কাঁটা হয়ে আটকে ছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক আমান। এক প্রান্ত আগলে রেখে আশা বাঁচিয়ে রাখেন তাদের। ৩২তম ওভারে বল হাতে নিয়েই তাকে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক আজিজুল। ব্যক্তিগত ২৬ রানে বোল্ড করে দেন আমানকে। তাতে জয় দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। 

নয় নম্বরে নামা হার্দিক রাজ উইকেটে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং পাল্টা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেন। ২১ বলে ২৪ রানও করেন। বড় ক্ষতি করার আগে তাকেও ফেরান আজিজুল। এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তাকে। এরপর চেতন শর্মাকে (১০) ফিরিয়ে ভারতীয় ইনিংসের ইতি টানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

লেগস্পিনার দেবাশিস দেবা ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে সব বোলারই উইকেট পেয়েছেন। তবে উইকেট না পেলেও দারুণ বোলিং করেন দেবা। ২৪ রানের খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ইমন। আজিজুলও নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া দুটি শিকার আল ফাহাদের। 

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৭ রানে কালাম সিদ্দিকিকে হারায় বাংলাদেশ। একাদশ ওভারে ফেরেন থিতু হওয়া আরেক ওপেনার জাওয়াদ আবরার (২০)। অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ খেললেও এদিন ব্যর্থ। ২৮ বলে ১৬ রান করে তিনি ক্যাচ দিয়ে ফিরলে চাপে পড়ে দল।

এরপর শিহাব-রিজান মিলে গড়েন প্রতিরোধ। চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৬২ রান। দুজনেই ফেরেন অসময়ে। আয়ুশ হাটরের বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন শিহাব। হার্দিক রাজের বলে বোল্ড হয়ে যান রিজান। দেবাশীষ দেবা, সাইমুন বাসির ব্যর্থ হলে দলকে এরপর টানেন ফরিদ। নবম উইকেটে মারুফ মৃধাকে নিয়ে যোগ করেন ৩১ রান।

দলের হয়ে ৬৫ বলে ৩টি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেছেন রিজান। ৬৭ বলে ৩টি চারে ৪০ আসে শিহাবের ব্যাট থেকে। ১৬৭ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর টেল এন্ডারদের নিয়ে দলকে দুইশোর কাছে নিতে ৪৯ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন ফরিদ। তিনিও চার মারেন ৩টি।

Comments

The Daily Star  | English

People will have to take to the streets for voting rights: Fakhrul

People will have to take to the streets like they did on August 5 to realise their voting rights, said BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today

56m ago