জুলাই থেকে বিক্রি কম, স্বস্তিতে নেই ইস্পাত শিল্প

রড
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

নির্মাণ সামগ্রীর কম চাহিদার কারণে হালকা ইস্পাত (এমএস) রডের দাম ক্রমাগত কমছে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে রডের ব্যবহার কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গতকাল বুধবার ৬০ গ্রেডের এমএস রডের দাম ছিল টনপ্রতি ৮৫ হাজার টাকা। এক মাস আগে তা ছিল ৯৩ হাজার টাকা।

গত সেপ্টেম্বরে এই অত্যাবশ্যকীয় নির্মাণ সামগ্রীর দাম ছিল টনপ্রতি সাড়ে ৯৯ হাজার টাকা।

টিসিবির হিসাবে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রডের দাম কমেছে ১২ শতাংশ।

অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ও ব্যক্তিগত আবাসনে রডের ব্যবহার অনেক বাড়লেও দেশে রডের ব্যবহার গত বছর বা এর আগে থেকেই কমে যাচ্ছিল।

প্রায় ৬৭ শতাংশ রড বিক্রি হয় সরকারি প্রকল্পে। বছরে এর পরিমাণ ৭৫ লাখ টন।

বাজারের আকার ও বিনিয়োগের দিক থেকে দেশের ইস্পাত খাত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্প।

দেশে ৪০টি বড় কারখানাসহ প্রায় ২০০ ইস্পাত কারখানা আছে। মোট উৎপাদন প্রায় ১১ মিলিয়ন টন।

তবে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সরকারি প্রকল্প বন্ধ থাকায় রড বিক্রি মূলত একেবারেই কমে গেছে।

গত জুলাই ও আগস্টে গণআন্দোলনের সময় বেশিরভাগ ঠিকাদার পালিয়ে গেলে প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যায়। গত সাড়ে তিন মাসে সরকারের রডের চাহিদা প্রায় শূন্য।

উৎপাদিত রডে লোকসান হওয়ায় অনেকে কারখানা বন্ধ রাখছেন।

বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের (বিএসআরএম) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকদের বেতন, ইউটিলিটি বিল ও ঋণের কিস্তিসহ বকেয়া পরিশোধ করতে কারখানার মালিকরা উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে পণ্য বিক্রি করছেন।'

ইস্পাত কারখানার মালিকরা মজুদ পরিশোধ ও পরিচালন খরচ মেটাতে গত ১ ডিসেম্বর থেকে টনপ্রতি রডের দাম প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা দাম কমিয়ে দিয়েছেন।

তপন সেনগুপ্ত আরও বলেন, 'যেহেতু চাহিদা কম, তাই লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে।'

ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে আবাসন শিল্পের অসুবিধার সত্ত্বেও ইস্পাতের চাহিদা ছিল।

অনেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাজনৈতিক কারণে পালিয়ে যাওয়ার পর এখনো ফিরে আসেননি। মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে নতুন নির্মাণ প্রকল্পে সরকারি অনুমোদন বন্ধ আছে।

তপন সেনগুপ্ত মনে করেন, নির্মাণ প্রকল্প না বাড়লে ইস্পাত শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুমন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, মিল গেটে ৬০ গ্রেডের এমএস রড ৭৮ থেকে ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'কারখানা ও স্থানভেদে উৎপাদন খরচ টনপ্রতি সাড়ে ৮৪ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা হওয়ায় প্রতি টন রডে সাড়ে চার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।'

অন্তর্বর্তী সরকার চলমান নির্মাণ প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'কয়েকটি বড় কারখানার ছাড়া অনেক মালিক ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।'

উন্নয়নবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ঠিকাদারদের অনুরোধ করেন।

সরকার চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ আবার শুরু না করলে ইস্পাত খাত আরও সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Palak admits shutting down internet deliberately on Hasina's order

His testimony was recorded by the International Crime Tribunal's investigation agency following a questioning session held yesterday

57m ago