বাজারের ৫৩ শতাংশ ৪ ইস্পাত কারখানার দখলে

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশে প্রায় ৪০টি ইস্পাত কারখানা থাকলেও বর্তমানে দেশের মোট চাহিদার ৫৩ শতাংশ পূরণ করছে চট্টগ্রামের চারটি কারখানা।

ইস্পাত উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম), আবুল খায়ের স্টিল (একেএস), জিপিএইচ ইস্পাত ও কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম)।

মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কনসাল্টিংয়ের প্ল্যাটফর্ম বিগমিন্টের তথ্য অনুসারে, বিএসআরএম দেশের চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ, একেএস ১৪ শতাংশ, জিপিএইচ আট শতাংশ ও কেএসআরএম ছয় শতাংশ মেটাচ্ছে।

বর্তমানে দেশে ইস্পাতের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৮৫ লাখ টন। উৎপাদন হচ্ছে ৯০ লাখ টন।

বিএসআরএমের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৪ লাখ টন। একেএসের ১৫ লাখ টন। জিপিএইচ ও কেএসআরএম বছরে প্রায় আট লাখ টন করে ইস্পাত উৎপাদনে সক্ষম।

বিএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা গুণগত মান বজায় রেখে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছি। এটি আমাদের বিক্রি বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।'

ইস্পাতকে অবকাঠামো উন্নয়নে অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'চলমান অর্থনৈতিক চাপ সত্ত্বেও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ যেহেতু উচ্চ আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাই আগামী ৩০ বছর ইস্পাতের চাহিদা বাড়তেই থাকবে।'

বাজারে বিএসআরএমের পণ্যের বেশি চাহিদা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি ইস্পাত বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটির একচেটিয়া থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। কারণ অনেক ছোট কারখানাও সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানও এ শিল্পে আসছে।

তিনি মনে করেন, বিএসআরএম দীর্ঘদিন ধরে ইস্পাত তৈরি করছে বলে বাজারে এর চাহিদা বেশি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিএসআরএম ১৯৫২ সালে দেশের ইস্পাত শিল্পে আসায় এই খাতে তাদের অভিজ্ঞতা ও সুনাম আছে। এ জন্য বাজারে এই প্রতিষ্ঠানটির ইস্পাতের চাহিদা বেশি।

একই কথা বলেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও রানী রি-রোলিং মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন চৌধুরী।

তিনি বলেন, 'ছোট কারখানাগুলো কম দামে মানসম্পন্ন ইস্পাত উৎপাদন করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকায় বড় কারখানাগুলোর বাজারে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ নেই।'

তবে চলমান অর্থনৈতিক চাপের কারণে বাজার কিছুটা মন্দা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ ছাড়াও, সরকার গত অর্থবছরে ইস্পাতের ব্যবহার মোট উৎপাদনের ৫৫ থেকে ৪৫ শতাংশে কমিয়ে এনেছে।

তিনি জানান, দেশের ইস্পাতশিল্পে তার প্রতিষ্ঠানের অবদান প্রায় তিন শতাংশ। তার মতে, বেশ কয়েকটি ছোট প্রতিষ্ঠান বাজারে আসায় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি।

তবে বিগমিন্ট বলছে, ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন প্রকল্প ও ব্যক্তি পর্যায়ে অবকাঠামোর কারণে দেশে ইস্পাতের ব্যবহার বর্তমানের ৮৫ লাখ টন থেকে বেড়ে ২০২৭ সালে হবে এক কোটি ছয় লাখ টন।

সেই সঙ্গে ২০২৭ সাল নাগাদ দেশের ইস্পাত উৎপাদন সক্ষমতা এক কোটি ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, দেশের মোট ইস্পাত তৈরির সক্ষমতার ৬২ শতাংশ চট্টগ্রামে। ঢাকার উৎপাদন হয় ৩২ শতাংশ ইস্পাত।

কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রামে ইস্পাত শিল্প প্রায় ছয় দশক আগে শুরু হয়েছিল। কাঁচামাল আমদানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দর সুবিধাজনক হওয়ায় তখন থেকেই এই অঞ্চলে এই শিল্প বিকশিত হয়েছে।'

তার মতে, চট্টগ্রামে বড় বড় ইস্পাত কারখানাগুলো প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছে।

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate allegations of corruption, irregularities, and criminal activities in the three national elections held in 2014, 2018, and 2024.

6h ago