পিটার প্যান সিনড্রোমে ভুগছেন কি না বুঝবেন যেভাবে

পিটার প্যান সিনড্রোম
ছবি: সংগৃহীত

ডিজনির জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র পিটার প্যানকে চেনেন না বা নাম শোনেননি কখনো এমন মানুষ খুব কম। তবে 'পিটার প্যান সিনড্রোম' নামে যে একটা রোগ আছে, সে সম্পর্কে জানা নেই এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি।

পিটার প্যান সিনড্রোম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদের কাছ থেকে।

পিটার প্যান সিনড্রোম কী

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, পিটার প্যান সিনড্রোম এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন মানুষ প্রাপ্তবয়ষ্ক অবস্থায় চলে যায় কিন্তু তার ভেতরে শিশুসুলভ আচরণগুলো থেকে যায়। শারীরিকভাবে বড় হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের মতো দায়িত্বশীল হতে পারে না। মানসিক বা আচরণগতভাবে তাদের চিন্তা এবং আচরণ শিশুদের মতো থাকে। 

পিটার প্যান শব্দটি মূলত জেমস ম্যাথিউ ব্যারির লেখা চরিত্র পিটার প্যান থেকে নেওয়া হয়েছে। ডিজনির একটি কার্টুন চরিত্র আছে পিটার প্যান, যে কখনো বড় হয়ে চায় না। প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও শিশুদের মতো আচরণ করে।

প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তি যখন তার চিন্তায়, আচরণে, মননে এবং দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে পারে না এটাই পিটার প্যান সিনড্রোম।

পিটার প্যান সিনড্রোমকে সরাসরি মানসিক রোগ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃতি দেয়নি, এটাকে বলা হচ্ছে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য। পিটার প্যান সিনড্রোম ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তার চিন্তার, আচরণের এবং ভাবনার বৈশিষ্ট্য।

পিটার প্যান সিনড্রোমের কারণ

একজন মানুষের মনোসামাজিক বিকাশে শারীরিক পর্যায় ছাড়া আরও চারটি পর্যায় রয়েছে, যেমন- ধারণার জগতের বিকাশ, নৈতিকতার বিকাশ, আবেগের বিকাশ এবং সামাজিক বিকাশ।

একজন মানুষের বয়সের বিকাশ কিন্তু থামানো যায় না, সময়ের সঙ্গে বয়স বাড়বেই। বয়সের বিকাশের সঙ্গে যখন তার ধারণার জগতের বিকাশ, নৈতিকতার বিকাশ, আবেগের বিকাশ এবং সামাজিক বিকাশ কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত বা ব্যাহত হয় বা সঠিকভাবে বিকশিত না হয় তখন পিটার প্যান সিনড্রোমে ভুগতে পারেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও মনেপ্রাণে তার ভেতরে শিশু রয়ে যায়।

লক্ষণ

পিটার প্যান সিনড্রোমে ভোগেন যেসব ব্যক্তি তাদের ভেতর কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন-

১. তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটি রাখতে পারেন না। দেখা যায় শিশুদের মতো কোথাও যাবেন বলে যান না, কাউকে কোনো কিছু দেওয়ার কথা বলেন কিন্তু দেন না।

২. দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন, কোনো ধরনের দায়িত্ব নিতে পারেন না। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকেন।

৩. কোনো কিছু কেনার ক্ষেত্রে দেখা যায় কথা দিয়েছেন, কিন্তু কিনতে পারেন না।

৪.  কর্মক্ষেত্রে বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেন না। যেহেতু তাদের ভেতর শিশুতোষ আচরণ আছে, চঞ্চলতা আছে সেহেতু চাকরি ধরে রাখতে পারেন না।

৫. অনেকের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারেন না।

৬.  জীবনের সঠিক কোনো লক্ষ্য থাকে না।

৭. সহজে কোনো কিছু সহ্য করেন না, অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে যান, অস্বস্তিকর অনুভূতি থাকে সেটাকে সহ্য করতে পারেন না। সহ্য ক্ষমতা কমে যায়, এক ধরনের আবেগ কাজ করে তাদের ভেতর।

৮. আত্মকেন্দ্রিক থাকেন, একাকিত্বে ভোগেন, শিশুদের মতো নিজের মনে থাকেন।

৯. নিজের সমস্যার জন্য অন্যদের দায়ী করেন, মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকেন।

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, যেহেতু ১৮ বছর পর্যন্ত শিশু ধরা হয় তাই ১৮ বছর পর্যন্ত এই আচরণগুলো থাকা, দায়িত্বশীল না হওয়াটা স্বাভাবিক। ১৮ বছর বয়সের পরেও যদি সেটি না যায় তাহলে তা পিটার প্যান সিনড্রোম। যেকোনো বয়সেই পিটার প্যান সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। ছেলে এবং মেয়ে যে কারোরই হতে পারে। তবে সিনড্রোম একটু আলাদা হয়। মেয়েদের ভেতর অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা বেশি হয় এবং ছেলেদের মধ্যে দায়িত্ব এড়ানো, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা বেশি দেখা যায়।

করণীয়

অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা পিটার প্যান সিনড্রোমকে যেহেতু রোগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, সেহেতু এর প্রচলিত কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কাউন্সিলিং, বিহেভিয়ার থেরাপির মধ্য দিয়ে পিটার প্যান সিনড্রোমে ভোগেন এমন ব্যক্তিদের কিছুটা দায়িত্বশীল করা যায়, আচরণের পরিবর্তন করা যায়, ধারণার জগতের পরিবর্তন করা যায়।

যারা দীর্ঘদিন পিটার প্যান সিনড্রোমে ভোগেন তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবন দুটোই বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই যেকোনো সমস্যাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Indian Media Reporting on Bangladesh: Fake or Fact?"

Why is the Indian media's coverage of Bangladesh markedly different from that of Bangladeshi news outlets?

1h ago