অন্তর্বর্তী সরকারের এখনো অনেক কাজ বাকি

আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

এ মুহূর্তে দেশের মানুষের সব মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে বেশ কিছু বড় বড় সমস্যা। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের কেন্দ্রে ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের আশাবাদ ও ইতিবাচক মানসিকতার প্রকাশ, যা খুবই প্রশংসনীয়।

বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায় তিন মাস  আগে যেসব আশা-ভরসা বুকে ধারণ করে ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে যোগ দিয়েছিল, বড় আকারে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন সেই অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া তার ৩৪ মিনিটের বক্তব্যে জবাবদিহিতার মনোভাবের প্রতিফলন ঘটেছে, যা আমরা আশা করব তার প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে। তবে, চলমান সংস্কার উদ্যোগ ও জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আহতদের জন্য নেওয়া নানা পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যেমন তিনি স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন—অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা এবং অবশ্যই, নির্বাচনের সময়সীমার মতো অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে তিনি অতটা বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখতে পারেননি বলেই আমাদের মত।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে 'কয়েকদিনের মধ্যে' নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে এবং নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই রোডম্যাপের ঘোষণা দেওয়া হবে।

এখন পর্যন্ত সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে, যার মধ্যে আছে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারের কমিশন। আশা করা হচ্ছে, এই দুই কমিশন ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। ড. ইউনুস বলেছেন নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলমান থাকতেই কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে। যার ফলে, নির্বাচন 'কয়েক মাস' পেছাতে পারে। পাশাপাশি, আল জাজিরার কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের মেয়াদ চার বছর না ছাড়ানো সংক্রান্ত মন্তব্যে এমন এক পরিস্থিতির উদ্রেক হয়েছে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে। বক্তব্যে রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় ইতোমধ্যে বিএনপি হতাশা প্রকাশ করেছে। যত দ্রুত সরকার এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেবে, ততই মঙ্গল।

অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে, ড. ইউনূস তার বক্তব্যে কোনো ধরনের রাখঢাক না করেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সমস্যাগুলো উল্লেখ করেন। তিনি জানান, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যেরকম বিপর্যস্ত অবস্থায় রেখে গিয়েছিল, তা থেকে 'ঘুরে দাঁড়াচ্ছে' অর্থনীতি। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকারিতা, বিশেষত, নিত্যপণ্যের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকার বিষয়টি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি জানান, সরকার পুলিশের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং এ বিষয়ে 'দৃশ্যমান উন্নতি' হয়েছে। হয়তো বিষয়টি এরকমই, তবে প্রত্যাশার তুলনায় উন্নতি অনেক ধীরে হয়েছে এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এখনো অপরাধ পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগজনক। গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে বলতে গেলে—যা অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন—কিছু কিছু বিষয়ে কাজের গতি বাড়ানো ও আরও সমন্বিত করার সুযোগ ছিল, যা আহতদের একাংশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে উঠে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্র সংস্কারের যে চাহিদা মানুষের মধ্যে রয়েছে, তা মেটাতে এসব খাতে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক জটিলতার মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। এটা কোনো সহজ কাজ নয়, তবে সরকারকে যেভাবেই হোক না কেন, এই লক্ষ্য পূরণ করতেই হবে। তবে এটাও ঠিক, সরকারের একার পক্ষে তা করা সম্ভব নয়; রাজনৈতিক দল ও নাগরিক গোষ্ঠীদেরকেও ধৈর্য, গঠনমূলক সমালোচনা ও ধারাবাহিক পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে মনে রাখতে হবে, এ বিষয়গুলোর সঙ্গে দেশের স্বার্থ জড়িয়ে আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

1h ago