পবিপ্রবির গবেষণা

কৃত্রিম খাদ্যে পুকুরে কোরাল মাছের চাষ

পুকুরে কোরাল মাছ চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন চাষিরা। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর মৎস্য চাষিদের মধ্যে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। মুক্ত জলাশয়ের কোরাল মাছ ঘেরের মধ্যে বা বদ্ধ জলাশয়ে চাষে নতুন সফলতা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন গবেষকরা। 

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) একুয়াকালচার বিভাগের একদল গবেষক 'সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষ' শীর্ষক একটি প্রকল্প পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মাটিভাঙ্গা গ্রামে বাস্তবায়ন করছে।

পবিপ্রবি সূত্র জানায়, মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ বিভাগের আর্থিক সহায়তায় ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আড়াই বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। নতুন এই প্রযুক্তির গবেষকরা হলেন পবিপ্রবির একুয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এবং সহকারী প্রধান ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফুর রহমান। 

প্রকল্পের অধীনে চাষি আনোয়ার হোসেন তার ৩০ শতাংশ আয়তনের পুকুরে কোরাল মাছ চাষ করেছেন। 

ছবি: স্টার

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারা বছরই আমার পুকুরটি পতিত থাকতো। এক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরটিতে কোরাল মাছ চাষের কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। ৭০০ পোনা ছাড়া হলো পুকুরে। পাঁচ গ্রাম ওজনের কোরালের পোনা এক বছরেই প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী বাজার থেকে ফিড কিনে পুকুরের মাছকে দিচ্ছি। প্রতিদিনই এলাকার মৎস্য চাষিরা কোরাল মাছ চাষ দেখতে আসছেন। অনেকে পরামর্শ নিচ্ছেন যাতে তারা এভাবে কোরাল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।'

এই প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম ডেইলি স্টারকে জানান, মাছ হচ্ছে প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। কোরাল মাছ বেশ পুষ্টিসমৃদ্ধ, যা আমাদের শরীরের পেশী গঠন, ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত এবং হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং পুষ্টি সরবরাহে কোরাল মাছ চাষের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। 

ছবি: স্টার

প্রকল্পের সহকারী প্রধান মো. আরিফুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোরাল নদী, সাগরসহ মুক্ত জলাশয়ের মাছ হলেও ঘেরের মধ্যেও স্বল্প পরিসরে চাষ হয়ে আসছে। এসব ঘেরে কোরালের খাবার হিসেবে তেলাপিয়াসহ ছোট ছোট মাছ দেওয়া হয়। কৃত্রিম খাদ্যের অভাবে ঘেরে কোরাল মাছের চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল চাষে চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৫০ জন চাষিকে কোরাল চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।'

প্রধান গবেষক মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে জানান, দেশে কোরাল মাছের হ্যাচারি না থাকায় গবেষণার কাজে থাইল্যান্ডের হ্যাচারিতে উৎপাদিত কোরালের পোনা সংগ্রহ করে মাছের চাষ পদ্ধতি নিয়ে তার দল কাজ করছে। পাঁচ গ্রাম ওজনের কোরাল পুকুরে এক বছর চাষ করে সাড়ে তিন কেজি ওজনের হওয়ায় শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, পুরো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য চাষিদের কাছে তারা নতুন এক সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। 

তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাদের উদ্ভাবিত সামুদ্রিক শৈবাল সহযোগে কৃত্রিম খাদ্যের মাধ্যমে কোরাল মাছ চাষের এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে কোরাল মাছের উৎপাদনসহ মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
Exporters to get Tk 108.5 for a dollar from Aug 1

Taka gains against dollar after years

Taka gains ground as dollar influx rises, strengthening currency after years

1h ago